ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
সরকারি মেডিকেল কলেজ অবিলম্বে শূন্য পদগুলো পূরণ করা হোক
Published : Friday, 18 February, 2022 at 12:00 AM
সরকারি মেডিকেল কলেজ অবিলম্বে শূন্য পদগুলো পূরণ করা হোকবরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে শিক্ষক পদ আছে ২৯০টি। এর মধ্যে ১৮৫টিই শূন্য। বাকি ১০৫ জন শিক্ষক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ৫২ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে আরও জানা যায়, এ মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন বর্ষে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। কলেজটিতে অধ্যাপকের অনুমোদিত পদের ৯০ ভাগই শূন্য। ৪২ জন অধ্যাপকের মধ্যে আছেন মাত্র চারজন। সহযোগী অধ্যাপকের ৭১ ভাগ, সহকারী অধ্যাপক পদে ৫৩ ভাগ এবং প্রভাষক, মেডিকেল অফিসার, প্যাথলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট ও ফার্মাসিস্ট পদে ৬১ ভাগ জনবল শূন্য।
কেবল মেডিকেল কলেজ নয়, হাসপাতালেও অনুমোদিত পদের অর্ধেকই শূন্য। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০০ শয্যার অনুকূলে ২২৪টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছেন ১২১ জন। অনেক বছর আগে হাসপাতালটি ৫০০ শয্যা থেকে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও পুরোনো ৫০০ শয্যার জনবলকাঠামো দিয়েই চলছে। হাসপাতালে ১ হাজার শয্যার অনুকূলে প্রতিদিন ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার রোগী ভর্তি থাকে। অন্যদিকে হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতিগুলোর বেশির ভাগই বিকল।
এ তথ্য একটি মেডিকেল কলেজের হলেও ঢাকার বাইরের সব মেডিকেল কলেজের চিত্রই প্রায় অভিন্ন। সিলেট মেডিকেল কলেজে ২৯৭টি পদের বিপরীতে খালি আছে ৬৫টি। রংপুর মেডিকেল কলেজেও অর্ধশতাধিক পদ শূন্য আছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ২৪টি অধ্যাপকের পদ থাকলেও সেখানে আছেন মাত্র সাতজন। গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে ১০২টি শিক্ষক পদের বিপরীতে আছেন ৫২ জন। বাকি পদগুলো শূন্য আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে শিক্ষক সংকটের কারণে এসব কলেজে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবহারিক ক্লাসেও পিছিয়ে পড়ছেন তাঁরা।
ঢাকার বাইরের নতুন মেডিকেল কলেজগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। অন্যদিকে ঢাকার মেডিকেল কলেজগুলোতে নির্ধারিত পদের চেয়ে বেশি লোকবল থাকার অভিযোগ আছে। সংযুক্তি পদায়নের নামে প্রভাবশালীদের নিকটজনেরা এসব পদে নিয়োজিত আছেন। সব মিলিয়ে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান হলো বিশেষায়িত শিক্ষা। প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা শিক্ষক থাকা প্রয়োজন। এক বিভাগের শিক্ষক দিয়ে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা যায় না। লোকবলের ঘাটতি, অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবাও।
একটি মেডিকেল কলেজে কতজন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন, তা কলেজ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে না। এটি নির্ধারণ করে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল। বছরের পর বছর কেন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক পদ খালি থাকার অর্থ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া। এভাবে কোনো দেশের মেডিকেল শিক্ষা চলতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের প্রতি।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ সব সরকারি মেডিকেল কলেজের শূন্য পদগুলো অবিলম্বে পূরণ করা হোক। জেলায় জেলায় নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার আগে পুরোনো মেডিকেল কলেজগুলো ভালোভাবে চলছে কি না, সেখানে প্রয়োজনীয় লোকবল আছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বাড়লেই চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার পরিধি বাড়বে না, যদি না সেখানে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ করা যায়।