স্বপ্নীলের শখ এখন পেশা
Published : Wednesday, 16 February, 2022 at 12:00 AM
স্বপ্নীল সুলতানা। ২০১৩-১৪ সেশনে মাস্টার্স এর মধ্য দিয়ে কুমিল্লা মহিলা কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করেছেন। দুই সন্তানের জননী স্বপ্নীল পেশাগত জীবনে ছিলেন শিক্ষক, এখন থাকেন মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানিগঞ্জে। তিনি একজন পেশাদার স্কুটার প্রশিক্ষক। সাইকেল চালানো শিখতে গিয়েই স্বপ্নীলের শখ হয় বাইক চালানোর। শখের বসে ২০০৯ সালে ভাইয়ের মোটরসাইকেল দিয়ে বাইক চালনা শুরু। এরপর থেকে গ্রামের রাস্তায় বাইক চালানোর প্রশিক্ষণ। মাঝখানে গ্রামে ও শহরে বাইকিং করতে গিয়ে শুনতে হয়েঝে নানান কটুক্তি। এসেছে বাঁধাও। ব্যক্তিগত জীবনে স্বপ্নীল ছিলেন শিক্ষকতায় থাকলেও, স্বপ্ন ছিলো- মোটর সাইকেল দেশ ভ্রমনের। সে যাত্রায় তিনি এখন নিজেই একজন মোটরবাইক ড্রাইভিং ট্রেইনার বা প্রশিক্ষক। ২০১৮ সালে শুরু করেন কুমিল্লা শহরের মেয়েদের স্কুটার প্রশিক্ষণ দেয়া। আগ্রহীদের একত্রিত করে ছোট ছোট করে পরিচালনা করতেন প্রশিক্ষণ। এরই মধ্যে তিনি একটি মোটরসাইকেল কোম্পানি ‘ইয়ামাহা’ এর ট্রেইনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তার কাছে বর্তমানে ৮৩ জন শিক্ষার্থী স্কুটার চালনা শিখছেন। স্বপ্নীল সুলতানা জানালেন, কুমিল্লা শহরের অনেক উদ্যমী নারী এখন বাইক বা স্কুটার চালানো শিখছে। সময় বাঁচানো অথবা যাতায়াত খরচ কমানো, শখে কিংবা পেশাগত কারনে, দিন দিন বাড়ছে নারী বাইকারদের সংখ্যা- যা খুবই ইতিবাচক। কেউ শিখছে নিজের স্কুটার বা বাইকে, আর কেউ কেউ স্বপ্নীলের কাছ থেকে ট্রেইনিং স্কুটার নিয়ে শিখতে পারছেন বাইকিং।
বাইকিং এবং স্কুটার প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে স্বপ্নীল সুলতানা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এই যাত্রাটা মসৃন ছিলো না। মোটর সাইকেল চালনা শিখতে গিয়েই গ্রামে নানান কটুক্তি শুনতে হয়েছে। কিন্তু সেখানে থেমে যাওয়া হয় নি। ভাইয়ের মোটর সাইকেল দিয়ে বাইক চালনা শেখা। তারপর দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এই অবস্থা। এখন আমি আগ্রহী মেয়েদের স্কুটার চালনা শিখাচ্ছি। কেউ শিখে যখন এসে বলে- আপু আমি আজ পুরো শহর নিজে বাইক নিয়ে ঘুরে এসেছি, এটা শুনতেই ভালো লাগে।
স্বপ্নীল জানান, একজন প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি প্রথমেই আগ্রহীদের ট্রাফিক সিগন্যাল, আইন ও নিরাপত্তা বিষয়ে শিখিয়ে থাকেন। তারপর শুরু হয় বাইক , স্কুটার চালনা। অনেক মেয়ে আছে যারা সাইকেল চালাতে পারতো না কিন্তু তারা অনায়াসেই বাইক চালানো শিখে যাচ্ছে। স্কুল , কলেজ অফিস কিংবা পারিবারিক কাজ সারছেন বাইক ব্যবহার করে। মেয়ে হিসেবে বাইক চালানো শেখা সবার জন্য সহজ হয় না- থাকে পারিবারিক ও সামাজিক বাঁধা। কিন্তু সেগুলো অতিক্রম করেও মেয়েরা নিজেদের প্রয়োজনে এখন বাইক চালাতে আগ্রহী হচ্ছে এটা আমাকে খুব আনন্দ দেয়।
তিনি আরো জানান, দুই সন্তান এবং শ্বশুর বাড়ির সবার সমর্থন নিয়ে প্রতিদিন মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানিগঞ্জ থেকে কুমিল্লায় এসে বাইক চালানো শিখিয়ে থাকেন। আগে শহরে থাকলেও, এখন থাকেন মুরাদনগরে। তার স্বামী একজন সরকারি কর্মকর্তা, যার সহযোগিতায় এবং অনুপ্রেরনায় তিনি এতদূর আসতে পেরেছেন।