আজ হোমনা মুক্ত দিবস
Published : Thursday, 23 December, 2021 at 12:00 AM
এমএ কাশেম ভূঁইয়া, হোমনা ||
আজ ২৩ ডিসেম্বর কুমিল্লার হোমনা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ি যুদ্ধ শেষে সবশেষ পাক হানাদার মুক্ত হয় হোমনা। দিবসটি পালনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশ বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠলেও বিজয়ের মিছিল করতে পারেনী হোমনবাসী। তখনও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী থেমে থেমে জলপথে ও স্থল পথে আক্রমণ করতে থাকে। ১৯৭১ সালের ২২শে ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলার ঘাগুটিয়া গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে তুমুলযুদ্ধ করতে হয়েছে হোমনা, মুরাদনগরের মুক্তিবাহিনীকে। পরে পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর, হোমনা, দাউদকান্দি, মুরাদনগর ও কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা ও যৌথ বাহিনীর ট্যাংকের আক্রমণের পর সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয় হোমনার ঘাগুটিয়া গ্রাম তথা হোমনা থানা। ইতিহাস মতে ঘাগুটিয়ার এ যুদ্ধই সম্ভবত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ছিল সর্বশেষ যুদ্ধ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঘাগুটিয়া ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম প্রধান, মুক্তিযোদ্ধা সোবহান মিয়াসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আর্মি ক্যাম্প থেকে লঞ্চযোগে পালিয়ে যাচ্ছিল কয়েক শতাধিক পাক সেনার একটি দল। পাক সেনাদের পালানোর সংবাদ পেয়ে ঘাগুটিয়া লঞ্চঘাটের নিকটে অবস্থান নেয় হোমনার মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের লঞ্চ ঘাগুটিয়া ঘাটের কাছে আসামাত্র মুক্তিসেনারা একযোগে তাদের উপর আক্রমণ করে। বাধা পেয়ে পাকবাহিনী হোমনা উপজেলার ঘাগুটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকট বড় মসজিদে আশ্রয় নেয়। এ সময় পাকবাহিনী মসজিদের পাশে সিদ্দিকুর রহমান দারগার বাড়িসহ আশেপাশের ৪০/৫০টি বাড়িতে আগুন দেয় এবং বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ করতে থাকে। ফলে ঘাগুটিয়া ও ভবানীপুর গ্রামবাসী তাদের বাড়ি-ঘর ফেলে পার্শ্ববর্তী মাধবপুর, রামপুর, নুরালাপুর ও নালাদক্ষিণ গ্রামেআশ্রয় নেয়। এ যুদ্ধে ২জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৮ জন নারী-পুরুষ শহীদ হন।
শতাধিক গ্রামবাসী ও এফ এফ কমান্ডার আব্দুল আউয়ালসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা এ যুদ্ধে আহত হন। কিন্ত পাকবাহিনীর সদস্যদের নিহতের সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি বলে তারা জানান। তবে কিছু পাক সেনা পালাতে গিয়ে গণপিটুনিতে বিচ্ছিন্নভাবে মারাযায় এবং বাকী ১শ’ ৩১ জন পাকসেনা যৌথ বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে।
এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় ২৩ ডিসেম্বর হোমনা মুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করা হয়ে আসছে।
এবারের অনুষ্ঠানের আয়োজক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমন দে সংবাদকে জানান, দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার স্থানীয়ভাবে ও উপজেলা প্রশাসণের আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রতিনিধি এবং রাজনীতিবিদদের নিয়ে বিজয় র্যালী, আলোচনা সভা ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ সভা করা হবে। ঘাগুটিয়ায় স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে জাতীর বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।