
তানভীর দিপু: 
শ্রদ্ধা
 ভালোবাসা ও শপথের মধ্য দিয়ে  কুমিল্লায় উদযাপিত হলো মহান মুক্তিযুদ্ধে 
বিজয় অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী। বিজয় দিবস পালনে কুমিল্লাবাসীর ছিলো নানা 
বর্ণাঢ্য আয়োজন। দিবসটি উপলক্ষ্যে কুমিল্লার প্রশাসন, রাজনৈতিক এবং সামাজিক
 ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় নানা কর্মসূচী পালন করে। 
বিজয় দিবসের প্রত্যুষে কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে ৫০ বার তোপধ্বণির মধ্য 
দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু করা হয়। এছাড়া সকল সরকারি আধা সরকারি ও 
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় কুমিল্লা
 টাউন হলে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি 
শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করেন কুমিল্লার সকল প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও সুশীল 
সমাজের প্রতিনিধিসহ আপামর জনতা। সকালে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান-
 কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামীলীগ সভাপতি বীর 
মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আ ক ম  বাহা উদ্দিন বাহার, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি 
আঞ্জুম সুলতানা সীমা, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা পুলিশ 
সুপার ফারুক আহমেদ, সিআইডি কুমিল্লার পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান, 
স্থানীয় সরকার কুমিল্লার উপপরিচালক মোহাম্মদ শওকত ওসমান, সিভিল সার্জন মীর 
মোবারক হোসাইন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, 
কুমিল্লা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুলসহ বীর 
মুক্তিযোদ্ধাগণ, বিভিন্ন বাহিনীর উর্দ্ধতণ কর্মকর্তাগণ এবং রাজনৈতিক 
নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। 
পরে কুমিল্লার নগর উদ্যানের 
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্মৃতিস্তম্ভে এবং শহীদ জেলা 
প্রশাসক এ কে এম শাসসুল হক খান স্মৃতি ভাস্কর্য, পুলিশ সুপার কার্যালয়ে 
শহীদ পুলিশ সুপার মুন্সী কবির উদ্দিন স্মৃতি ভাস্কর্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান
 করা হয়। এছাড়া আলেখারচরে যুদ্ধ জয় স্মৃতি ভাস্কর্যে পুস্পস্তবক অর্পন করা 
হয়। এছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে কুমিল্লা ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ 
দত্ত স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা প্রশাসক ও 
পুলিশ সুপার। সেখানে কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন তাঁরা। পরে বিভিন্ন স্কুল
 কলেজ ও সংগঠনের পক্ষ থেকে মনোজ্ঞ শরীর চর্চা প্রদর্শনী পরিবেশিত হয়।
এদিকে
 বেলা ১২ টায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসক বাসভবন প্রাঙ্গণে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও
 বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানর 
অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আ ক বাহাউদ্দিন বাহার
 বলেন, আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা 
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। আমাদের কিছু বন্ধু ফিরে এসেছে কেউ ফিরে আসেনি। 
ফেসবুক বা ইউটিউব নয় - মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে তরুণ প্রজন্মকে 
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও মুক্তিযোদ্ধাদের জানতে হবে। এসময় তিনি শহীদ 
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানান। কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ 
করেন। 
এসময় এমপি বাহার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবারো অনুরোধ আমাদের 
কুমিল্লার নামে কুমিল্লা বিভাগ দেন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ- 
কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ফেরত দেন। কুমিল্লা জেলা 
প্রশাসকের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের কাছে  দাবী জানাই- 
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অচিরেই ফেরত চাই। 
এদিকে বিজয় দিবসে কুমিল্লার 
বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা, মন্দির গীর্জাসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে প্রার্থনা 
অনুষ্ঠিত হয়। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু পরিবারে 
উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিভিন্ন স্কুলে কলেজে নানান ধরনের প্রীতি
 খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। 
স্বাধীণতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দিনে কুমিল্লায় 
বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে কুমিল্লা ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত 
স্টেডিয়ামে অনলাইনে প্রধানমন্ত্রীর পরিচালনায় শপথ গ্রহনের অনুষ্ঠিত হয়। 
কুমিল্লার সকল প্রশাসনিক দপ্তর, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, আওয়ামী লীগ ও অংগ-সহযোগী
 সংগঠন , বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিক্ষক- শিক্ষার্থী ও 
সাধারণ মানুষ সবাই জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে শপথে অংশ নেন। বিকেল সাড়ে চারটায় 
প্রধানমন্ত্রীর শপথ পাঠ করানোর পর বেলুন ও রঙিণ ধুঁয়া ওড়ানো হয়। 
পরবর্তীতে
 বিকালে কুমিল্লা টাউন হলে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শণী 
এবং পরে আতশবাজি ও ফানুশ উড্ডয়ণ করা হয়। পরে টাউন হলে বীর মুক্তিযোদ্ধা 
রফিকুল ইসলাম মুক্তমঞ্চে জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ বিনির্মানে 
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন  ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার শীর্ষক
 আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দেশাত্মবোধক 
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত 
বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার তুলে 
দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর 
আওয়ামীলীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আ ক ম  বাহা উদ্দিন বাহার, জেলা
 প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ,  সিভিল 
সার্জন মীর মোবারক হোসাইনসহ অন্যান্যরা। 
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে 
বিভিন্ন আওয়ামীলীগ এবং অংগ ও সহযোগি সংগঠনগুলোর উদ্যোগে বিজয় র্যালী বের 
করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নানা 
কর্মসূচি পালিত হয়। এর মধ্যে ছিলো সকালে  জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, 
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। বিকাল তিনটায় রামঘাটস্থ দক্ষিণ 
জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভা এবং বিকাল সাড়ে ৪টায় স্বাধীনতার 
সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 
পরিচালনায় শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ। এসময় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ ও
 অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিজয় দিবসের দুপুরে 
কুমিল্লায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের 
সহ-সভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমার নেতৃত্বে বিজয় র্যালি বের করা হয়। র্যালি
 শেষে নেতৃবৃন্দ নগর উদ্যানে  বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুলের শ্রদ্ধাঞ্জলি 
নিবেদন করেন। এসময় কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা 
আলহাজ্ব ওমর ফারুক, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সফিকুল 
ইসলাম শিকদারসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা নূর উর রহমান মাহমুদ তানি এবং কবিরুল ইসলাম শিকদারের নেতৃত্বেও পৃথক বিজয় র্যালি বের করা হয়। 
এদিকে
 বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল 
মাহমুদ সহিদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর আলআমিন সাদীর নেতৃত্বে বিজয় মিছিল বের
 করা হয়। এসময় নেতৃবৃন্দ মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয় প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর 
ম্যুরালে এবং নগর উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন 
করেন।