
সুস্থভাবে
বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। সে জন্য একজন মানুষের
খাদ্য তালিকায় সুষমরূপে শক্তিবর্ধক, ক্ষয়পূরণকারী, পুষ্টিকর ও
ভিটামিনসমৃদ্ধ বিভিন্ন খাদ্য থাকা জরুরি। পরিমাণ ও পুষ্টিগুণ বিবেচনায় একজন
মানুষ কতটুকু খাবার গ্রহণ করবে তার একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশের ৪৩ শতাংশ মানুষ সেই মান থেকে কম খাদ্য গ্রহণ
করে। কোনো কোনো অঞ্চলে সেই ঘাটতি আরো বেশি। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি দেখা গেছে
খুলনা অঞ্চলে এবং সবচেয়ে কম ঘাটতি দেখা গেছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এমন চিত্র
উঠে এসেছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপ্রাপ্তির সমস্যা যেমন আছে, তেমনি আছে
সচেতনতার অভাব। খাদ্য ও পুষ্টির দিক থেকে একটি সুখবরও রয়েছে। গ্লোবাল
হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) তথা বিশ্ব খাদ্য সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ
ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ১১৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের
অবস্থান হয়েছে ৭৬তম। অন্যদিকে তালিকায় পাকিস্তান ৯২ এবং ভারত রয়েছে ১০১তম
অবস্থানে।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অপুষ্টি দূর করা
এবং পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন করা খুবই জরুরি। এ জন্য প্রয়োজন মানসম্মত
খাদ্যগ্রহণ নিশ্চিত করা। সাম্প্রতিক গবেষণায় মানুষের খাদ্যগ্রহণের অনেক
দিকই উঠে এসেছে। তাতে দেখা যায়, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিতে বাংলাদেশ আগের তুলনায়
উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। একই সঙ্গে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপুষ্টির
প্রসার ও অনুপুষ্টির ঘাটতি দেখা গেছে। আগের মতোই এখনো মানুষের খাদ্য
তালিকায় ভাত এবং চিনি ও চর্বিজাতীয় খাবারের পরিমাণ বেশি রয়েছে। আশার কথা এই
যে আগের তুলনায় খাদ্যগ্রহণে বৈচিত্র্যের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। ডিম,
মাংস, দুধের মতো খাদ্যের ঘাটতি আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। কিন্তু
অনুপুষ্টি বা ভিটামিনজাতীয় খাদ্যের ঘাটতি এখনো প্রবলই রয়েছে। বিশেষ করে
ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন-বি১২ ও ভিটামিন-এ-এর ঘাটতি বয়স ও
লিঙ্গভেদে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। অথচ অপেক্ষাকৃত সহজলভ্য নানা রকম
শাক-সবজি ও ফলমূলে এসব পুষ্টি অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে,
মানুষের দৈনিক শাক-সবজি খাওয়া প্রয়োজন কমপক্ষে ৪০০ গ্রাম, বেশির ভাগ
মানুষই খাচ্ছে ২০০ গ্রামের কম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণায় সহযোগিতা
করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, ইউরোপীয় কমিশন, যুক্তরাষ্ট্র
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়। গবেষণা
প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্যগুলো আমাদের গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে এবং সেই
অনুযায়ী দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।