
নিজস্ব
প্রতিবেদক: দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে গত এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিকেজি
৭৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছে; এরমধ্যে নতুন করে চিনি, ভোজ্যতেল, মুরগি, আদাসহ
আরও কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। নিত্যপণ্যের এরকম মূল্যবৃদ্ধি সীমিত আয়ের
পরিবারগুলোতে দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে। সতর্ক দোকানিদের কেউ কেউ
মূল্যবৃদ্ধির কারণে তেল-চিনি বিক্রি বন্ধ করেছেন বলে বাজার ঘুরে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা বলেন, "এক মহামারী বিদায় নেওয়ার আগেই
দ্রব্যমূল্যে মহামারী শুরু হয়েছে। চাল, তেল, চিনি, মাছ-মাংস, শাক-সবজি,
পেঁয়াজ সবকিছুর দামই তো আকাশচুম্বি। এভাবে চলতে থাকলে কম কম করে খেয়ে
বাঁচতে হবে। কারণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সীমিত আয়ের মানুষের পকেটে বড় ধরনের
ধাক্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এদিকে হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পর দেশি পেঁয়াজের
দাম নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এতে
বৃহস্পতিবার প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হলেও শুক্রবার তা ৫
টাকা কমে ৬২ টাকা থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায়
আমদানি করা পেঁয়াজের চালান নির্বিঘ্ন করতে কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, যশোর,
রাজশাহী, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয় হয়েছে।
পাশাপাশি পাবনা, ফরিদপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়াসহ আরও কয়েকটি জেলার ডিসিকে
পেঁয়াজের মোকাম ও বাজার তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পেঁয়াজের ট্রাক যেন
ফেরি পারাপারের সময় অগ্রাধিকার পায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেটাও বলে দেওয়া
হয়েছে।
রাজধানীর পীরেরবাগ কাঁচাবাজারেও ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। কিছু কিছু দোকানে ৭৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হতে দখা যায়।
কারওয়ান
বাজারের পাইকারি বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, “মাঝে দাম বাড়ার মধ্যেই
কারওয়ান বাজারে অনেকগুলো পেঁয়াজের ট্রাক আসলো। সরবরাহ বাড়ার কারণে দামটাও
কিছুটা কমে গেল।“
বাজারে ভারতীয় আমদানি পেঁয়াজের সরবরাহও বেড়েছে বলে
দাবি এ বিক্রেতার। এ বাজারে ভারতীয় কিং জাতের পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি
হচ্ছে প্রতিকেজি ৫৫ টাকায়।
বাজারে নতুন সবজি:
শুক্রবার রাজধানীর
কারওয়ান বাজার, মিরপুর বড়বাগ ও পীরেরবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, সিম,
ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলাসহ বাজারে শীতকালীন সবজি এসেছে। যথারীতি এগুলোর দামও
আকাশচুম্বি। সিম প্রতিকেজি ১০০ টাকায় এবং কপি বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৫০
টাকায়। নতুন মূলাও বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪০ টাকায়।
এদিকে রসুনের দাম
স্থিতিশীল থাকলেও আমদানি করা আদার দাম কেজিতে ২০ টাকা করে বেড়ে গেছে বলে
দাবি বিক্রেতাদের। কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে ১১০
টাকা থেকে ১১৫ টাকায়, যা আগের সপ্তাহে ৯০ টাকার মধ্যে ছিল। দেশি রসুন ৫০
টাকা এবং চায়না রসুন প্রতিকেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকার দাম বেঁধে
দিলেও বেসরকারি যোগান থেকে আসা ভোজ্যতেল ও চিনির দাম আরেক দফায় বেড়েছে বলে
দাবি করছেন বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজারে বেশ কয়েকজন মুদি দোকানিকে চিনি ও
ভোজ্যতেল বিপণন থেকে দূরে থাকতেও দেখা গেছে।
এ বাজারের আলী স্টোরের
বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, সরকার ৭৪ টাকা দরে খুচরায় বিক্রি করতে বলে
দিলেও এখন প্রতিকেজি ৭৬ টাকার কমে চিনি পাওয়া যায় না। সয়াবিন তেলের দাম
লিটার ১২৯ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ১৩৬ টাকার কমে সয়াবিন তেল বিক্রি করা
যাচ্ছে না। ফলে আপাতত এই দুটি পণ্য বিক্রি বন্ধ রেখেছি আমি, যোগ করেন তিনি।
পাম
তেলের কেজি ১৪০ টাকা এবং লিটার ১২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে এ বাজারে।
সে হিসাবে সর্বশেষ সরকারি নির্ধারিত ১১৬ টাকার চেয়ে ১০ টাকা বেশি দামে
বিক্রি হচ্ছে এ তেল।
খোলা চিনি প্রতিকেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে
কিছু কিছু মুদি দোকানে। ফ্রেশ ও ইগলু ব্র্যান্ডের চিনির প্রতিকেজির
প্যাকেটে দাম বসানো হয়েছে ৮৫ টাকা থেকে ৮৮ টাকা। এই দামেই বিক্রি করতে
হচ্ছে বলে জানান মুদি দোকানিরা। দাম বেড়ে যাওয়ার এ সময়ে ৪৪ টাকা দরে আধকেজি
চিনির প্যাকেট বাজারে নিয়ে এসেছে ফ্রেশ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তাল
মিলিয়ে বেড়েছে বিভিন্ন জাতের মুরগির দরও। গত এক সপ্তাহে মুরগির ডিমের দাম
ডজনে ১০ টাকা করে কমলেও সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে অন্তত ২০ টাকা করে
বেড়েছে। বাজারে এখন ফার্মের মুরগির ডিমের দাম প্রতিডজন ১০৫ টাকা, সাদা
ডিমের ডজন ১০০ টাকা।
অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতিকেজি ১৮০ টাকা,
যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায়। পাকিস্তানি কক বা সোনালিকা
মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায় যা দুই সপ্তাহ আগেও ২৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
একইভাবে লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায়।
মুরগি
বিক্রেতা আবুল কালাম জানান, গত কয়েক মাস ধরে ফিড ও ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ার
কারণে মুরগি উৎপাদনে লাভ হচ্ছে না জানিয়ে দাম বাড়িয়েছেন খামারিরা। এর
প্রভাব পড়েছে খুচরায়। তার মতে, শীতকাল আসতে শুরু করেছে। মহামারি
পরিস্থিতিরও উন্নতি হচ্ছে। ফলে আগামী ২/৩ মাসে মুরগির দাম কমার সম্ভাবনা
দেখছেন না তিনি। বাজারে অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে বেশ
বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে ক্রেতাদেরকেও।