![ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে করোনা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে করোনা](https://www.comillarkagoj.com/2021/06/24/1624474485.jpg)
নিজস্ব
প্রতিবেদক: স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ না মানলে চলমান
করোনা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এ আশঙ্কা করেছে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ভার্চ্যুয়াল স্বাস্থ্য
বুলেটিনে এ কথা বলা হয়েছে। বুধবার বুলেটিন তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক রোবেদ আমিন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯
পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সীমান্তবর্তী এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে
কোভিড–১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। পজিটিভিটির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকার চারপাশে কঠোর লকডাউনের
ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে এ অবস্থার মধ্যেও দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে আজ বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত)
করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্ত গতকালের তুলনায় বেড়েছে। নতুন করে ৮৫ জনের
মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ৫৫ জন ও নারী ৩০ জন। এ সময় করোনা শনাক্ত
হয়েছে ৫ হাজার ৭২৭ জনের। রোগী শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ। গতকাল
৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর শনাক্ত হয়েছিল ৪ হাজার ৮৪৬ জনের। এ তথ্য
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের, যা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানানো
হয়েছে।
এদিকে অধিদপ্তরের বুলেটিনে রোবেদ আমিন সরকার আরোপিত বিধিনিষেধ
মানতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার জন্য অনুরোধ
করেন।
রোবেদ আমিন বলেন, এই ঊর্ধ্ব সংক্রমণ পরিস্থিতিতে জনগণের স্বাভাবিক
জীবনযাত্রায় কিছুটা অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কোভিড–১৯ পরিস্থিতি
মোকাবিলা করা, হাসপাতালে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া, চিকিৎসক, নার্স এবং
যাঁরা স্বাস্থ্যকর্মী আছেন, তাঁদের সেবা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া এবং মৃত্যু
কমিয়ে আনার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
রোবেদ আমিন বলেন, নিত্যদিনের
মতো সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। এর ব্যত্যয় হলে কোভিড-১৯
পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে অনুরোধ:
দেশে
চলমান লকডাউন ও বিধিনিষেধ মানাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে
কঠোর হতে অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি রোধ
করতে স্বাস্থ্য অধিদফতর এ অনুরোধ করে। বুধবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের
ভার্চুয়াল বুলেটিনে এ কথা বলেন অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ
আমিন।
তিনি বলেন, ‘দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সীমান্তবর্তী
এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর বিস্তার ছড়িয়ে পড়ছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা
বাড়ছে, আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে মৃত্যু। বিদ্যমান পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার
জন্য ঢাকার চারপাশে কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের
মুখপাত্র বলেন, ‘সংক্রমণ কমিয়ে আনার জন্য চলমান লকডাউন ও বিধিনিষেধকে
কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য সকলকে অনুরোধ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীকে প্রয়োজনে কঠোর হতে অনুরোধ করা হলো।’
বর্তমানে সংক্রমণের
ঊর্ধ্বগতিতে চলমান লকডাউন এবং বিধিনিষেধে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়
কিছুটা অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘কিন্তু
সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা, হাসপাতালের প্রস্তুতি নিতে সুযোগ দেওয়া
এবং মৃত্যু কমিয়ে আনার জন্য সকলকে এ সহযোগিতা করতে হবে।’
একইসঙ্গে
সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, আর এর ব্যত্যয় হলে বর্তমান পরিস্থিতি
আরও শোচনীয় অবস্থায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
প্রসঙ্গত,
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (২৩ জুন) করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৭২৭
জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৮৫ জনের। ২২ জুন সংক্রমিত হয়েছেন চার হাজার ৮৪৬ জন।
২১ জুন সংক্রমিত হয়েছিলেন চার হাজার ৬৩৬ জন, যা কিনা গত দুই মাসের মধ্যে
একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। আর গত ২০ জুন শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ৬৪১ জন।
দেশে করোনায় এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মোট শনাক্ত হয়েছেন আট লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৭ জন এবং মোট মারা গেছেন ১৩ হাজার ৭৮৭ জন।
স্বাস্থ্য
অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে দৈনিক
রোগী শনাক্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, মৃত্যুর হারও বাড়ছে গত এক
থেকে দেড় মাসের ভেতরে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত শনাক্ত
রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েই যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই দৈনিক শনাক্ত
চার হাজারের বেশি। বিশেষ করে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সীমান্তবর্তী এলাকাতে
বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি।’
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত
সংক্রমণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত এপ্রিল মাসে দেশে করোনা
পরিস্থিতির ভয়ংকর অবস্থা ছিল, একমাসেই প্রায় এক লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন।
মে মাসে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগী শনাক্ত কমে আসে ৪১ হাজার ৪০৮
জনে, কিন্তু জুন মাসে ইতোমধ্যেই ৬০ হাজার ৬১০ জন রোগী শনাক্ত হয়ে গেছে।’
তাই জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এ ছাড়া কোনও উপায় নেই, বলেন তিনি।