জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছায় দানকরা রক্তের বিকল্প নেই
Published : Saturday, 19 June, 2021 at 12:00 AM
এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
নিরাপদ রক্তের প্রয়োজনে জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছায় দানকরা রক্তের বিকল্প নেই। অর্থের বিনিময়ে পেশাদার রক্তদাতাদের রক্তের মধ্যে এইচআইভি এবং হেপাটাইটিসের মতো প্রাণঘাতী সংক্রমণের ঝুঁকি থাকতে পারে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ হর রোমে আয়োজিত দেবীদ্বারে ‘উপজেলা ব্লাড ডোনার গ্রুপ’র তৃতীয় বর্ষপূর্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যদানকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান ওই বক্তব্য তুলে ধরেন।
উপজেলা ব্লাড ডোনার গ্রুপের উপদেষ্টা সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশারের সভাপতিত্বে এবং সংগঠক মো. নাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি মো. ময়নাল হোসেন (ভিপি), মা’মনি হাসপাতালের পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম, বাজার পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার নুরুজ্জামান বিপ্লব, পঙ্কজ কুমার আচার্য, মো. নাজমুল হাসান, ডা. ফখরুল ইসলাম, মো. মামুনুর-রশীদ, মো. সফিকুল ইসলাম সরকার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ‘উপজেলা ব্লাড ডোনার গ্রুপের সভাপতি মো. আতিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. সানাউল হক মাঝি প্রমুখ।
আলোচনা শেষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, সংগঠনের ২৮ উপদেষ্টা, ১০জন সর্বোচ্চ রক্তদাতা, ১৯জন সংগঠক ও ১০০ রক্তের ডোনারকে সম্মাননা ক্রেষ্ট, ফুলের ষ্টিক ও সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত স্মরণীকা ‘লাল ভালোবাসা’ প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানের ব্যাতিক্রমী আয়োজন ছিল সকল অতিথি, সদস্য, রক্তদাতাদের সংগঠনের মনোগ্রাম সম্বলিত গাড়নীল রং’এর পাঞ্জাবী, গেঞ্জী ও মাক্স পরিহীত অবস্থায় সুশৃংখল ও বর্ণাঢ্য আয়োজন।
বক্তারা বলেন, দেবীদ্বার'র বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে রক্তের যে পরিমাণ ঘাটতি ছিল তা দিন দিন অনেকটাই কমে এসেছে। গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছায় রক্তদান সংগঠন, এখন বছরে যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন হয় তার অধিকাংশই জোগান দিচ্ছে স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা। ‘উপজেলা ব্লাড ডোনার গ্রুপ’ সহ দেবীদ্বারের সকল রক্তদান সংগঠনগলোর প্রতি রইল আন্তরিক ভালোবাসা।
রক্তদাতা দিবসের ইতিহাস তুলে ধরে বক্তারা আরো বলেন, আমরা ১৪ জুন ‘বিশ^ রক্তদাতা দিবস’ হিসেবে উদযাপন করে আসছি। এই দিবসের উদ্দেশ্য হ'ল স্বেচ্ছায় এবং বিনামূল্যে রক্তদান করে যারা লক্ষ লক্ষ জীবন রক্ষা করছেন তাদের সহ সাধারণ মানুষকে রক্তদান করতে উৎসাহিত করা।
বিশ্বব্যাপী রক্তদাতাদের কুর্নিশ জানাতে ২০০৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ১৪ জুনকে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। পরের বছর হু-এর ৫৮তম ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রক্তদানের সচেতনতা বাড়াতে গোটা বিশ্বজুড়েই দিনটি পালন করা হবে।
অস্ট্রিয়ান বায়োলজিস্ট ও ফিজিশিয়ান কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারের জন্মদিন ১৪জুন। যিনি ব্লাড ট্রান্সফিউশিন পন্থার জনক। তাঁর জন্মদিনকে সম্মান জানাতেই আজকের দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস এবং ২০০০ সালে নিরাপদ রক্ত প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশ্ব রক্তদান দিবসটি প্রথম পালিত হয়েছিল ২০০৪ সালে। প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান করা হয়, তবে কেবল ৩৮ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়, যেখানে বিশ্বের জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ বাস করে। তদুপরি, বিশ্বের অনেক দেশে লোকেরা রক্তের প্রয়োাজন হলে পরিবার বা বন্ধুদের কাছ থেকে রক্তদানের উপর নির্ভর করতে হয় এবং অনেক দেশে পেশাদার রক্তদাতারা অর্থের বিনিময়ে রোগীদের রক্ত দান করছেন। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার সময়, এটি জানা যায় যে "নিরাপদ রক্ত সরবরাহ" এর মূল ভিত্তি রক্ত স্বেচ্ছায় এবং বিনা মূল্যে দান করা হয়। কারণ তাদের রক্ত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং এই রক্তের মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে এইচআইভি এবং হেপাটাইটিসের মতো প্রাণঘাতী সংক্রমণের ঝুঁকি খুব কম।
রক্তদান বাঁচাতে পারে জীবন, ফোটাতে পারে অনেক আর্তের মুখে হাসি। আজকের দিনটি তাদের উৎসর্গীকৃত।