
সারা
বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও করোনার ধাক্কা লেগেছে। বিশেষ করে
বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেন আগের মতো সচল নেই। ইউরোপ-আমেরিকারও অনেক
প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করে টিকে আছে।
বাংলাদেশও এই অবস্থার বাইরে নয়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার জরিপ
বলছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সার্বিক
দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। করোনার প্রভাবে দারিদ্র্যের কারণে মানুষ
খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি অনেকে সঞ্চয় ভেঙে খেয়েছেন, ঋণ
নিয়েছেন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছেন।
একটি জরিপের ফল বলছে, করোনা
মহামারির প্রভাবে চরম দারিদ্র্যের হার বেড়েছে কয়েক শতাংশ। করোনার প্রভাবে
১৭.৩ শতাংশ পরিবার আগের মতো অর্থনৈতিক কর্মকা- চালিয়ে যেতে পারছে। ৫৫.৯
শতাংশ পরিবারের কাজ থাকা সত্ত্বেও আয় কমেছে। ৮.৬ শতাংশ পরিবার কাজ হারানোর
কথা বলেছে। ৭ শতাংশ পরিবারের কাজের সময় কমেছে। আর ৩৩.২ শতাংশ পরিবার বলেছে,
তারা আবার কাজে ফিরেছে। এ ছাড়া ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবরের
মধ্যে সব ধরনের কর্মসংস্থান কমেছে। সানেম ও অ্যাকশন এইডের একটি জরিপ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীও
অর্থনৈতিকভাবে তিগ্রস্ত হয়েছে। আত্মনির্ভরশীল কিংবা নিজেই ব্যবসা পরিচালনা
করে এমন প্রায় ৭৯.৭ শতাংশ তরুণের মাসিক আয় কমেছে। আর বেতনভুক্ত ৫৭.৪ শতাংশ
তরুণের আয় কমে গেছে। করোনাব্যাধির প্রত্য ও পরো প্রভাবে গত বছর ৪৮.৪৯ শতাংশ
পরিবার থেকে অন্তত একজন কাজ হারিয়েছেন বা কাজ পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত
হয়েছেন। কাজ হারিয়ে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন শহরের ৭৩.৩ শতাংশ এবং গ্রামের
৯২.৫ শতাংশ মানুষ। শহরে অস্থায়ীভাবে বসবাসরত মানুষরা গ্রামে ফিরে যেতে
বাধ্য হয়। অন্যদিকে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের হিসাবে বলা
হচ্ছে, করোনা মহামারিতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশে বেশির ভাগ মানুষের
আয়-রোজগার কমে গেছে, কারো কারো বন্ধই হয়ে গেছে। বিপরীতে নিত্যপণ্য ও সেবার
মূল্য বেড়েছে। ক্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে ছোট ও
মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত মানুষের
আয়-রোজগার একেবারেই কমে গিয়েছিল। এতে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী
মানুষের সংখ্যা ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে এই
বাড়তি ব্যয়ই অনেক বড় বোঝা হয়ে দাঁড়ায় সাধারণের জন্য।
এ অবস্থা থেকে ঘুরে
দাঁড়াতে নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। করোনায় তিগ্রস্ত অর্থনীতি
পুনরুদ্ধারে আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি সবার আগে তরুণদের কর্মসংস্থানের
ব্যবস্থা করতে হবে।