Published : Tuesday, 4 May, 2021 at 12:00 AM, Update: 04.05.2021 12:42:01 AM

তানভীর দিপু:
করোনা
ভাইরাসের ভয় তোয়াক্কা না করেই কুমিল্লায় ঈদ বাজারে ভিড় বাড়ছে প্রতিদিন।
শহরের ক্রেতা ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকেও ক্রেতারা দল বেঁধে আসছেন কেনাকাটা
করতে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কুমিল্লা শহরের প্রতিপিট বিপনী বিতানেই
মানুষের ভিড় চোখে পড়ে। মানুষের ঢল দেখে কোনভাবেই বুঝার উপায় নেই- চলছে করোন
মহামারিকাল। প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে এই শহরেই মারা যাচ্ছে নানা বয়সী
মানুষ। তবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে মাস্ক ব্যবহারের আগ্রহ কিছুটা বাড়লেও
ভাটা পড়েছে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলায়। ঈদে বাজারে জনপ্রতি ৩ ফুট
দূরত্ব মেনে চলা কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না; উল্টো প্রতিটি দোকানেই গা
ঘেঁষাঘেষি করেই চলছে কেনাকাটা। এরমধ্যে গতকালও কুমিল্লায় করোনা আক্রান্ত
হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে ২ জনই কুমিল্লা সিটির। এই ২ জনের মধ্যে
একজনের বয়স মাত্র ১৫ বছর।
কুমিল্লা শহরের এমন চিত্র কোন ভাবেই মেনে
নেয়া যায় না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন মীর
মোবারক হোসাইন। সিভিল সার্জন কুমিল্লার কাগজকে জানান, কুমিল্লার
কান্দিরপাড়ের যে চিত্র এটাতে আমরা আশাহত। সাধারণ মানুষ যদি তাদের
ব্যাক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির দিকে নিজেরা নজর না দেয় তাহলে করোনা মোকাবেলায়
সরকার যত পদক্ষেপই গ্রহন করুক না কেন কেন সব ভেস্তে যাবে। মানুষের নিজের
জন্য নিজের সচেতন হতে হবে। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক ভাবেই করতে হবে। আর
যেখানে নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলার কথা নির্দেশনায় বার বার বলা হচ্ছে সেখানে
কান্দিরপাড়ে ভিড় সামলাতে সড়ক বন্ধ করা হয়েছে- এটা খুবই দুঃখজনক।
এদিকে
কুমিল্লা নগরীতে ঈদের বাজারে ভিড় সামলাতে বন্ধ করা হলো নগরীর প্রাণকেন্দ্র
কান্দিরপাড়ের সাথে যোগাযোগের সকল রাস্তা। পূবালী চত্বর থেকে শুরু করে
মনোহরপুর পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে সকল ধরনের যান
চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া জিলা স্কুল সড়কের নিউমার্কেট এবং ভিক্টোরিয়া
কলেজ রোডে লিবার্টি মোড়ের সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঈদের আগ পর্যন্ত এই
সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক পরিদর্শক এমদাদুল হক
জানান, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে কান্দিরপাড়ের শপিং মলগুলোতে বাড়ছে মানুষের ভিড়,
আর এসব মানুষের ভিড়ে নগরীতে যানজট লেগে থাকে প্রতিনিয়ত। তাই ট্রাফিক
পুলিশের পক্ষ থেকে যানজট নিরসনে সড়ক বন্ধের এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নগরীর
কান্দিরপাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, সাত্তার খান শপিং কমপ্লেক্স, খন্দকার টাওয়ার,
আনন্দ সিটি কমপ্লেক্সসহ কুমিল্লা শহরের বেশি প্রধান বানিজ্যিক পোশাকের
প্রতিষ্ঠানগুলো এই সড়কের উপর। যে কারনে ঈদের মৌসুমে এই এলাকায় ভিড় জমায়
পুরো জেলা থেকে আসা হাজার হাজার ক্রেতা। সাধারণ ২০ রমজানের পর থেকেই
কান্দিরপাড় এলাকায় পা ফেলার জায়গা পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। শপিং
কমপ্লেক্সগুলোও থাকে ক্রেতা-বিক্রেতায় ভরপুর। এবার করোনা মহামারিতে ঈদ
বাজারে নানান ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকলেও সব উপেক্ষা করেই ঢল নেমেছে ঈদের
বাজারে। সকাল থেকে রাত বিভিন্ন শপিংমল ও দোকানপাট চষে বেড়াচ্ছেন ক্রেতারা।
ঈদের নতুন জামা কাপড় ও উপহার সামগ্রী কেনা-কাটার ইচ্ছে হার মানিয়েছে করোনা
সংক্রমনের ভয়কেও।
সাত্তারখান শপিং কমপ্লেক্সে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা
একাধিক ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাস্ক পরে এসেছে বলেই কেউ করোনাকে
ভয় পাচ্ছে না। আর ঈদের কেনা কাটা এখন থেকে না করা হলে পরে যদি আবারো কঠোর
লকডাউন আসে তাহলে আর কেটাকাটা করা হবেনা। তাই আগে আেেগই সেরে রাখছেন ঈদের
বাজার।
কান্দিরপাড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য রাহাত ইসলাম
জানান, শপিংমলগুলোর সামনে যে পরিমান ভিড় তাতে পুরো সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়ে
সাধারণ চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। একারণে এই এলাকায় যানচলাচল বন্ধ করা হয়েছে।
যারা শপিং করতে আসবেন তারা কান্দিরপাড় এলাকায় হেঁটে শপিং করবেন। যানজট
নিরসনে এটা একটা ভালো উদ্যোগ।