ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ
Published : Thursday, 29 April, 2021 at 12:00 AM
শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশমো. আকতারুল ইসলাম ||
'মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, নিরাপদ কর্মপরিবেশ হোক সবার'- এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস। কর্মেেত্র পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা-২০১৩-এর নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী 'মুজিববর্ষে' উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ ঘোষণার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে বিষয়গুলো আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য টেকসই, শোভন এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি তথা নিরাপদ শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। টেকসই উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ল্েয জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরবর্তী সময়ে কর্মেেত্রর নিরাপত্তার বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকার ২০১৩ সালে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ২০০৬ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন করে কর্মেেত্র পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি সংশ্নিষ্ট ধারাগুলো যুগোপযোগী করে। সরকার ওই বছরই কর্মেেত্র পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটির গুরুত্ব, স্টেকহোল্ডারদের ভূমিকা ও দায়িত্ব স্পষ্ট করে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়ে কারখানা পরিদর্শন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সময়ের চাহিদায় মাত্র ৯ মাসের মধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তর করা হয়। বিগত আট বছরে এ অধিদপ্তরে হাজারের বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে কর্মেেত্রর নিরাপত্তার বিষয়ে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। কলকারখানা পরিদর্শন কার্যক্রমে গতিশীলতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি আনয়নের জন্য লেবার ইন্সপেকশন ম্যানেজমেন্ট এপি-কেশন-লিমা অ্যাপস চালু করা হয়েছে। টোল ফ্রি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। প্রতিটি কারখানায় সেফটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শ্রম পরিদর্শকরা মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছেন। সম্প্রতি ট্যানারি, গ্লাস, সিরামিক, জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানিমুখী চামড়াজাত শিল্প ও পাদুকা এবং রেশম- এ ছয়টি খাতকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসডিজি ল্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের আশা করছে মন্ত্রণালয়। টেকসই উন্নয়ন ল্যমাত্রা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি এবং নারী শ্রমিকদের সামাজিক মূল্যায়ন ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে ৫ হাজার ৫শ ৫৭টি কলকারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নিশ্চিতে রাজশাহীতে মন্ত্রণালয়ের ১৯ বিঘা জমির ওপর ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিণ ইনস্টিটিউটের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। এ ইনস্টিটিউটের কাজকে সহজ করতে মন্ত্রণালয় ২০২০ সালে দেশে প্রথমবারের মতো পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি-ওএসএইচ প্রোফাইল তৈরি করছে। এই প্রোফাইল দেশের শিল্পকারখানার প্রকৃত অবস্থা জানার প্রামাণ্য দলিল।
নিরাপদ কর্মপরিবেশ শ্রমিকের অধিকার। চলমান বৈশ্বিক মহামারির এই সময়ে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কভিড-১৯ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গত বছর করোনা মহামারির শুরুতেই শ্রম মন্ত্রণালয় সারাদেশে মাঠ পর্যায়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, মালিক এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ২৩টি বিশেষ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করে। এ বছর করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার ল্েয শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরা নিশ্চিত করে উৎপাদন সচল রাখতে কমিটিগুলো বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কমিটির সদস্যরা আইএলওর সহযোগিতায় তৈরি করা পেশাগত স্বাস্থ্য সুরা নির্দেশিকা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক পোস্টার কারখানা পর্যায়ে বিলি করছেন। এর সঙ্গে শ্রমিকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমঘন এলাকায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন।
মূলত বৈশ্বিক মহামারির এ সময় মালিক এবং শ্রমিকদের পারস্পরিক সহযোগিতায় কর্মেেত্র স্বাস্থ্য ও সেফটির বিষয়ে সচেতনতা আরও বৃদ্ধি পেলে শ্রমিকদের নিরাপদ রেখে কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং দেশের অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করা সম্ভব হবে। মুজিববর্ষে করোনাকালীন 'জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবসে' এইটুকু প্রত্যাশা।
তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়