অক্সিজেন-ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতে জাতীয় পরিকল্পনার জন্য রিট আবেদন
Published : Tuesday, 27 April, 2021 at 12:00 AM
করোনাভাইরাস সঙ্কট মোকাবেলায় অক্সিজেন ও ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে একটি জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়নের আদেশ চেয়ে হাই কোর্টে একটি আবেদন হয়েছে।
এই আবেদনে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিককে টিকা দেওয়ার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
সোমবার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও মোহাম্মদ কাওছার।
মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য আবদনটি উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী পল্লব।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং জীবন ধারণের অধিকার সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। যে কারণে সবাইকে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের টিকা দেওয়া সরকারের নৈতিক দায?িত্ব।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে আবেদনে বলা হয়েছে,টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রেওসরকার ন্যূনতম ৪০ বছর বয়স সীমা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এর কম বয়সী যারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন তারাও আক্রান্ত হচ্ছে।
টিকার পাশাপাশি অক্সিজেন ও ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি জাতীয় পরিকল্পনা (স্বল্প মেয়াদী, মধ্য-মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী) প্রণয়নে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এই রুল চাওয়া হয়েছে আবেদনে।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী পল্লব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাস প্রতিনিয়ত তার রূপ বা ধরণ পাল্টে নতুন রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে যে, করোনাভাইরাস শিগগিরই নির্মূল হচ্ছে না। তাই এটি মোকাবেলায় প্রয়োজন একটি সমন্বিত জাতীয় পরিকল্পনা।”
প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন অতিসংক্রমণশীল প্রকরণ মোকাবেলা করতে গিয়ে ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ইতোমধ্যে ভেঙে পড়েছে। অক্সিজেনের অভাবে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী মারা যাচ্ছে। টিকার অপ্রতুলতা, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও হাসপাতালের স্বল্পতা বিষয়টিকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে।
বাংলাদেশে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে গত শনিবার আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছিল জানিয়ে আইনজীবী পল্লব বলেন, সরকারের কোনো দপ্তর থেকে সাড়া না পাওয়ায় রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য সচিব, মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিকল্পনা সচিব, রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে মানবাধিকার সংগঠন ল’ এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশন’র পক্ষ থেকে নোটিসটি পাঠানো হয়েছিল; রিট আবেদনে তাদের বিবাদী করা হয়েছে।
বোরো : ২৭ টাকা কেজি দরে ধান, ৪০ টাকায় চাল কিনবে সরকার
চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মিল মালিকদের কাছ থেকে সাড়ে ১১ লাখ টন সেদ্ধ ও আতপ চাল এবং সাড়ে ৬ লাখ টন ধান কেনা হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
সোমবার (২৬ এপ্রিল) আসন্ন বোরো সংগ্রহ কর্মসূচি উপলক্ষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এ তথ্য জানান।
৪০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সেদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন আতপ চাল এবং কৃষকদের কাছ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে ধান কেনা হবে বলেও জানানমন্ত্রী।
আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে ধান এবং ৭ মে থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হবে বলেও জানান সাধন চন্দ্র মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘গত ২২ এপ্রিল খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। কতগুলো সিদ্ধান্ত অসম্পূর্ণ ও নীতিগত সমস্যা থাকায় সেদিন সংবাদ সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। বোরোতে কৃষকে ন্যায্যমূল্য দেয়ার চিন্তা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদনও দিয়েছেন।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত বছর বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল ও ৩৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনা হয়েছিল।’
সেই হিসাবে এবার এক টাকা বেশি দরে ধান ও ৩ টাকা কেজি দরে চাল কেনা হচ্ছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি সঠিকভাবে আমরা ধান-চাল কিনতে পারব, মাঠ পর্যায়ে আমরা সেই নির্দেশনা দিয়েছি। মাঠ পর্যায়ে এই নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে যে, কোনো কৃষক যাতে ধান নিয়ে এসে ফেরত না যান। কোনো ঝামেলা যেন না হয়। চালের মানের বিষয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ নেই। সঠিকতা বজায় রেখে ৪০ শতাংশ আর্দ্রতার চাল ও ধান কেনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
এবার ধানে গত বছরের চেয়ে এক টাকাও চালে ৩ টাকা বাড়ানো হলো, এটার মাধ্যমে কী কৃষকের প্রতি সদয় দৃষ্টি দেয়া হলো? আপনি কী মনে করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘একটা জিনিস মনে রাখতে হবে ৬০ কেজি ধানে ৩৯ কেজি চাল হয়, সেই হিসাবে প্রতি কেজি ধানের দাম ২৭ টাকা হলে প্রতি কেজি চালের দাম হওয়ার কথা ৪২ টাকা কয়েক পয়সা। খুদ-কুড়ো বাদ দিয়ে আমরা দাম ৪০ টাকায় এনেছি। এর চেয়ে দাম বাড়ানো হলে বাজারে চালের দাম আরও বাড়বে। এতে আরও অস্থিরতা দেখা দেবে।’
বাজারে দাম বেশি থাকলে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না, এবার এই আশঙ্কা করছেন কিনা- এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখনও আমরা সেই আশঙ্কা করছি না। কারণ এখনও ফসল ভালো। কোনো প্রাকৃতিক দুযোগ যদি না হয় ধান যদি তোলা যায়, এবার অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’
এবার বোরো ধান ও চালের কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ কত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একেক জায়গা থেকে একেক রকম এসেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে একরকম, কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে একরকম। তবে সরকার যে সেচে, সারে প্রণোদনা দেয় তাতে আমি মনে করি উৎপাদন খরচ থেকে তাদের লাভবান করে এই রেট দেয়া হয়েছে।’
বোরো সংগ্রহের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য বিভ্রাট হলে তখন কিন্তু একটু প্রবলেম হয়ে যায়। যখন দেখা যায় চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ কোটি ৮৭ লাখ ২৪ হাজার টন। বিবিএসের রিপোর্টে যখন দেখা যায় উৎপাদন ৩ কোটি ৬৬ হাজার টন। ২১ লাখ টন কম উৎপাদিত হয়েছে আম্পান ও চারবার বন্যার কারণে, সেই কারণে দাম বাড়াটা সম্ভব। সেটাকে মোকাবিলার জন্য আমাদের নানাবিধ পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। বাজারের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে পেরেছি বলে আমরা বিশ্বাস করি। দাম আর বাড়তে দেব না।’
তিনি বলেন, ‘সবাই সিন্ডিকেটের কথা বলি কিন্তু কেউ সিন্ডিকেট ধরিয়ে দিতে পারি না। আমরাও চেষ্টা করেছি, কোনো সিন্ডিকেট পাইনি। সাপ্লাই বেশি থাকলে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করে না। সিন্ডিকেট করে কেউ পার পাওয়ার সুযোগ নেই। সাংবাদিক বন্ধুদের অনুরোধ করব এই রকম কোনো স্টকের খোঁজ পান...আমরাও খোঁজে আছি।’
দুই বছরে আগে দায়িত্ব নেয়ার পর ২০০টি পেডি সাইলো করার কথা বলেছিলেন, এর কোনো অগ্রগতি আছে কিনা- এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘৫ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার ২০০টি পেডি সাইলো করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে প্ল্যানিংয়ে পাঠিয়েছি। পরে এটা পাইলট স্কিম হিসেবে জিওবি ফান্ডে অনুমোদন করেছে। ধারণ ক্ষমতা ৫ হাজারের স্থলে ১০ হাজার টন করার জন্য বলা হয়েছে। সেটারও ডিপিপি তৈরি করে প্ল্যানিংয়ে দিয়েছি। বিদেশি ফান্ডে আরও ১৭০টি এই সাইলো করার সিদ্ধান্ত আছে। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে। কোভিড আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে।’
ধান দিতে লটারিতে কৃষকের নাম উঠলে সে যাতে অন্য কারো কাছে স্লিপটা বিক্রি না করে সংবাদ সম্মেলনে সেই অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষি সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।