
করোনা পরিস্থিতি
ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে দৈনিক আক্রান্ত ও
মৃতের সংখ্যা দুটিই অনেক বেশি। প্রথম ঢেউয়ে দৈনিক সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ৬৪
জন, আর দ্বিতীয় ঢেউয়ে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ৯৬ জনের। শুধু
বাংলাদেশেই নয়, করোনার নতুন সংক্রমণ আরো অনেক দেশেই ভয়াবহরূপে ছড়িয়ে পড়েছে।
আমাদের পার্শ্ববর্তী অনেক দেশেরও একই অবস্থা। ভারতে দৈনিক সংক্রমণ
ছাড়িয়েছে দুই লাখ এবং ছয় মাস পর আবার দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক
হাজার। এমন অবস্থায় দেশে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু
মানুষের মধ্যে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি উপো করার যে প্রবণতা দেখা যায়, তা আরো
ভয়াবহ সংকটেরই আভাস দেয়। তাই বাংলা নববর্ষের আগের রাতে জাতির উদ্দেশে
প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পহেলা বৈশাখ ঘরে বসে উপভোগ করার
আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নানাভাবে সংক্রমণ রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। সব
মানুষকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো
হচ্ছে। দরিদ্র মানুষকে সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু সংক্রমণ শুধুই
বাড়তে থাকায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বাধ্য হয়ে লকডাউনে যেতে
হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবেলায় সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।
স্বাস্থ্য
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারির বড় ধরনের আঘাত থেকে রা পেতে টিকার চেয়েও বেশি
জরুরি হচ্ছে ব্যক্তিগত সচেতনতা, যেমন—মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা,
বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়াসহ জরুরি স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলা। কিন্তু
লকডাউনের ঘোষণা হতে না হতেই মানুষ যেভাবে গাদাগাদি করে ঢাকা ছেড়েছে, যেভাবে
হাট-বাজারে ভিড় করেছে তাতে সেই সচেতনতার অভাব খুবই প্রকট ছিল। এখনই
হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। আইসিইউ শয্যা খালি পাওয়া যাচ্ছে না।
ইচ্ছা করলেই নতুন নতুন হাসপাতাল বানানো যাবে না। কারণ আমাদের চিকিৎসক,
নার্স ও টেকনিশিয়ানের অভাব আছে। তাহলে যেভাবে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে, তারা
চিকিৎসা পাবে কোথায়? তারা কি বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে? পরিস্থিতি যাতে
সেদিকে না যায়, সে জন্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কমপে দুই সপ্তাহের পরিপূর্ণ
লকডাউন চেয়েছিলেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে আরো বাড়াতে বলেছিলেন।
কিন্তু সরকার লকডাউন দিয়েছে এক সপ্তাহের। তা-ও পরিপূর্ণ নয়। গার্মেন্ট,
কলকারখানা খোলা রাখা হয়েছে। এর পরও আমরা যদি সেটুকু লকডাউনও না মানতে চাই,
তাহলে করোনা মহামারি কিভাবে ঠেকানো যাবে? বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন অবহেলা ও
উদাসীনতা হবে দলবদ্ধ আত্মহত্যারই শামিল।
এবারের লকডাউনে আইন-শৃঙ্খলা
রাকারী বাহিনীগুলোকে অনেক বেশি তৎপর দেখা গেছে। তাদের এই তৎপরতা আরো বাড়াতে
হবে। কিছু অসচেতন মানুষের জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে
দেওয়া কোনোক্রমেই উচিত হবে না। করোনা পরীা ও আইসোলেশনের সুযোগ আরো বাড়াতে
হবে। বিদেশ থেকে আসা লোকজনের উপযুক্ত কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। একই
সঙ্গে টিকা প্রদানের হার এবং চিকিৎসার সুযোগ বাড়াতে হবে।