চাঁদপুরে ব্যবসায়ীদের লকডাউন বিরোধী মিছিল
Published : Tuesday, 6 April, 2021 at 12:00 AM
সরকারি নির্দেশনা ভঙ্গ করে চাঁদপুর শহরে লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সোমবার (৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে কয়েকশ ব্যবসায়ী এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় চাঁদপুর শহরের হাকিম প্লাজা ও হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীসহ অন্য ব্যবসায়ীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে চাঁদপুর পৌরসভার সামনে অবস্থান নেন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি পুনরায় হকার্স মার্কেটের সামনের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কে অবস্থান করে। এরপর চাঁদপুর টাওয়ারের সামনে গিয়ে সমাবেশ করেন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা। বেলা ১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ সমাবেশ চলে।
বিক্ষোভের খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রশিদসহ পুলিশ ফোর্স এবং রেলওয়ে হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি স্বাভাবিক করেন। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সরকারি নির্দেশনা না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘লকডাউনে অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদেরও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দোকানপাট খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হোক। লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই আমরা ব্যবসায়ীরা। আমরা কোনও সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। এজন্য আমাদের দাবি, আমাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দোকানপাট খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হোক।’
এ বিষয়ে রেলওয়ে হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, ‘সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ মেনে এবং সম্মান জানিয়ে আমরা চলতে চাই। যেসব ব্যবসায়ী লকডাউনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তার সঙ্গে আমাদের হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ীরা জড়িত নয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ঘোষিত লকডাউনের এই এক সপ্তাহ আমরা আগে দেখব। তারপর অবস্থা বুঝে আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবো। আজকে যারা এই বিক্ষোভ মিছিল করেছে এর জন্য তারাই দায়ী।’
চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘লকডাউনের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ মিছিলটির মূল উদ্যোগ নিয়েছে হাকিম প্লাজার ব্যবসায়ীরা। পরে হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এতে যোগ দিয়েছেন। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছি যে, সরকারের দেওয়া নির্দেশনাকে তো কখনও বিক্ষোভ করে অমান্য করা যাবে না। আপনাদের যদি কোনও দাবি থাকলে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করতে পারেন। যারা ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ রয়েছেন আমরা তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো।’
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণরোধে লকডাউন সরকারি সিদ্ধান্ত এবং এটি সারাদেশের জন্যই। চাঁদপুরের জন্য আলাদা কোনও সিদ্ধান্ত নেই। ব্যবসায়ী ও তাদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছি। সরকারি যে নির্দেশনা রয়েছে তা তাদের মেনে চলার অনুরোধ করেছি। তা না হলে আমাদের আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
প্রসঙ্গত, সরকার সারাদেশ লকডাউন ঘোষণার পর ৪ এপ্রিল এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর জেলা করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯)-এর বিস্তার রোধকল্পে নি¤েœ উল্লিখিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো।
সব গণপরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা, জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না। সব সরকারি/আধা সরকারি/ স্বায়ত্ত শাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে। শিল্পকারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি চালু থাকবে। শিল্পকারখানার শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে হবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোঁরায় কেবল খাদ্য বিক্রি/সরবরাহ করা যাবে। কোনও অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকানসমূহ বন্ধ থাকবে। কাঁচামাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে।