দেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের চূড়ান্ত পর্যায়ে: রাষ্ট্রপতি
Published : Friday, 2 April, 2021 at 12:00 AM
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেছেন, দেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই সময়ে ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২১’ এর আয়োজন ডিজিটাল ডিভাইস ও ইনোভেশন খাতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্রটি সকলের কাছে তুলে ধরবে বলে আমার বিশ্বাস। এবারের প্রদর্শনীর প্রতিপাদ্য ‘মেক হিয়ার, সেল’ এভরিহোয়্যার’ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে বলে আমি মনে করি। এই প্রতিপাদ্যের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ডিজিটাল পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও উদ্ভাবনী জাতি হিসাবে নিজেদের পরিচিত হওয়ার বার্তা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল আর্কাইভ মিলনায়তনে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবন ও হার্ডওয়্যার প্রযুক্তি পণ্যের প্রদর্শনী ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির ধারণকৃত বক্তব্য প্রচার করা হয়।
বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, দূরদর্শী চিন্তা থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিপ্লবে শামিল হওয়ার লক্ষ্যে দেশে বিজ্ঞান, গবেষণা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভিত্তি রচনা করেছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ লাভের উদ্যোগ নেন এবং ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আইটিইউর সদস্য হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশে একই বছর এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ’ (বিসিএসআইআর) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ কুদরত-এ-খুদার নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। এই কমিশনের সুপারিশে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় বিজ্ঞান, গবেষণা, উদ্ভাবন ও কারিগরি শিক্ষাকে। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় স্যাটেলাইট আর্থ-স্টেশনের উদ্বোধন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর অন্যান্য খাতের ন্যায় বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের পথ চলাও থেমে যায়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে কম্পিউটার আমদানি শুল্কহার হ্রাস করেন। মোবাইল ফোনের মনোপলি ভেঙে তা সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করেন। এছাড়া ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি ঘোষণা করেন ‘রূপকল্প ২০২১’। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয় ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা। এই সময়ে দেশে আইসিটি অবকাঠামো ও কানেকটিভিটি, দক্ষ মানব সম্পদ, ই-গভর্নমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রি প্রোমোশনে গৃহীত অধিকাংশ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হওয়ায় দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ এলাকা মোবাইল কভারেজের আওতায়। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটির উপরে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়নে। এমনকি দেশের দুর্গম এলাকায়ও কানেকটিভিটি পৌঁছে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এখন এই স্যাটেলাইট ব্যবহার করেই সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
একটি সুন্দর ও সময়োপযোগী ডিজিটাল প্রযুক্তি পণ্যের প্রদর্শনী আয়োজন করার জন্য রাষ্ট্রপতি আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিকে (বিসিএস) ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে জুম প্ল্যাটফর্মে যুক্ত ছিলেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ অন্যান্য অতিথিরা। মিলনায়তনে উপস্থিত ছিলেন হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ উল মুনীর প্রমুখ। তিনদিন ব্যাপী ভার্চুয়াল ও সরাসরি আয়োজিত এই প্রদর্শনী শেষ হবে ৩ এপ্রিল।