
মাসুদ
আলম।। শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে কুমিল্লা
মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেড়েই
চলেছে। করোনা ওয়ার্ডের ১৮ শয্যার আইসিইউতে কোনো বেড খালি নেই। মুমুর্ষু
রোগীর সংখ্যা বাড়লেও আইসিইউতে শয্যা না থাকায় শেষ মুহূর্তের চিকিৎসা সেবা
পাচ্ছে না মানুষ।
করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় সপ্তাহ দুয়েক ধরে কুমিল্লায়
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ফলে কুমেক হাসপাতালে
করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে চাপ বাড়ছে। হাসপাতালে শয্যা
সংকট চরম রূপ নিয়েছে। আইসোলেশন ওয়ার্ডেও বেড খালি নেই। করোনা পজেটিভ
ওয়ার্ডেও একই অবস্থা। সেখানেও বাড়ছে রোগীর চাপ।
গতকাল মঙ্গলবার কুমেক
হাসপাতালের কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসেন ৬০ বছরের আবুল খায়ের। তার
বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায়। প্রথমে চিকিৎসার জন্য যান কুমিল্লা নগরীর
ট্রমা সেন্টারে। অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট দেখে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে কুমেক
হাসপাতালের কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে পাঠান। তার সঙ্গে থাকা স্ত্রী তাকে সেখানে
নিয়ে গেলে শ্বাসকষ্টের অবস্থা দেখে আবুল খায়েরকে দ্রুত ভর্তি হতে বলেন।
কিন্তু আইসোলেশন ওয়ার্ডে শয্যা সংকট থাকায় গুরুতর এই রোগীকে বেড দিতে
পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল কোভিড-১৯ ওয়ার্ড ঘুরে রোগীর স্বজনদের
সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবুল খায়েরের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা এমন
একাধিক রোগী এ রকম শয্যা সংকটের মুখামুখি হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,
কুমেক হাসপাতালের কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘন্টায় আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৩৮ জন,
করোনা ওয়ার্ডে ৫২ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এই ছাড়া আইসিইউতে ১৮টি বেডের মধ্যে
১৮ জন মুমুর্ষু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
আইসোলেশন ওয়ার্ডের ইনচার্জ
কামরুনাহার কুমিল্লার কাগজকে জানান, এখানে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ
করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে যে ৩৮ জন ভর্তি রয়েছেন, তাদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ
এবং ১৮ জন নারী। গত ২৪ ঘন্টায় উপসর্গ নিয়ে একজন পুরুষ রেনাগী মারা গেছেন।
মারা যাওয়া ব্যক্তির বয়স ৬০ বছর।
তিনি আরো করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে
আসা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। হঠাৎ করে কুমিল্লায় গত সপ্তাহের তুলনায়
দুইগুণ রোগী বেড়েছে এই ওয়ার্ডে। এখন শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে
করোনা ওয়ার্ডের ইনচার্জ শফিকুর রহমান ও নাজমুল জানান, ওয়ার্ডের ৩, ৪ ও ৬
তলায় করোনা উপসর্গেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এই তিন ফোরে ভর্তি রয়েছেন ৫২ জন। ৩
এবং ৪ তলায় ভর্তি ২৬ জন রোগীর মধ্যে ২০ জন করোনায় আক্রান্ত। তার মধ্যে ১১
জন পুরুষ এবং ৯ জন নারী। এছাড়া ৬ তলায় ভর্তি ২৬ জনের সবাই করোনায় আক্রান্ত।
জানতে চাইলে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ
মহিউদ্দিন জানান, হাসপাতালের কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে হঠাৎ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
১৮টি বেডের আইসিইউতে কোনো সিট খালি নেই। নতুন করে শয্যা সংকট দেখা দিচ্ছে
আইসোলেশন ওয়ার্ডেও। করোনা ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
সেবা প্রদানে
কি সমস্যা মোকাবেলা করছেন? প্রশ্ন করলে পরিচালক বলেন, ‘বর্তমানে চিকিৎসক বা
কোনো লোকবল সংকট নেই। তবে ১৮ বেডের আইসিইউতে সব সময় শয্যা সংকট থাকছে।
অতিরিক্ত মুমুর্ষু রোগীদের সেবা দেয়া যাচ্ছে না। আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীর
চাপ সামাল দিতে আরেকটি রুম এই ওয়ার্ডের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছি। রোগীর
আরও চাপ বাড়লে, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।’
উল্লেখ্য, কুমিল্লা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে ১৮টি আইসিইউ বেডসহ মোট ১২৮টি
শয্যা রয়েছে। রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১১৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ২৮টি
হাইফো নজেল, ২৬টি ভেন্টিলেটর এবং ২০টি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেইটর রয়েছে।