মো. মিজানুর রহমান ।।
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ৫ লাখেরও বেশি মানুষের বাস। সবাইকেই নানা
প্রয়োজনে এখানে ওখানে যাতায়াত করতে হয়। আবার জেলার ১৭টি উপজেলা ও একটি
প্রশাসনিক থানার আরো প্রায় ৫৫ লাখ বাসিন্দার অনেককেই নানা কাজে কুমিল্লা
নগরীতে আসা-যাওয়া করতে হয়। এর বাইরেও আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন দেশের বিভিন্ন
অঞ্চলের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ, যাদের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। এই
অসংখ্য মানুষের আসা-যাওয়ার পথে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয় গণশৌচাগার। অথচ
এই অতি জরুরি প্রয়োজনের দিকে কোনো নজরই নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
অত্যন্ত হতাশাজনক তথ্য হলো, এত বিপুল সংখ্যক মানুষের ব্যবহারের জন্য
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে গণশৌচাগার রয়েছে মাত্র ৭টি। আর এ
কারণে নগরীতে যাতায়াতকারী মানুষের, বিশেষ করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও
অসুস্থদের যার-পর-নাই কষ্ট পোহাতে হচ্ছে; পাশাপাশি ভুগতে হচ্ছে নানান
স্বাস্থ্যগত সমস্যায়।
বিশেষ করে কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়
টাউনহল মাঠ এলাকা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পদুয়ার বাজার বিশ^রোড এলাকায়
গণশৌচাগারের অভাবে প্রতিনিয়ত অবর্ণনীয় কষ্টের শিকার হতে হচ্ছে জনসাধারণকে।
সূত্র
জানায়, ২০১১ সালে কুমিল্লা পৌরসভার ১৮টি ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভার
৯টি ওয়ার্ড নিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত নগরীতে
গণশৌচাগার বলতে ওই ১৭টিই। আরো ৪টি অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট স্থাপনের
উদ্যোগ নিলেও সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব কোনো জায়গা না থাকায় তা বাস্তবায়ন
করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী
মোহাম্মদ বশির উল্লা মজুমদার জানিয়েছেন, তাদের যে ৭টি অত্যাধুনিক পাবলিক
টয়লেট চালু রয়েছে, সেগুলো হচ্ছেÑ নগর উদ্যানে ১টি, রাজগঞ্জ বাজারের মধ্যে
১টি, চকবাজারের মধ্যে ১টি, সুজানগরে ১টি, প্রধান ডাকঘর সংলগ্ন স্থানে ১টি ও
জাঙ্গালিয়া কুমিল্লা কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালে ২টি।
কুমিল্লার বিশিষ্ট
আইনজীবী ও সংস্কৃতি সংগঠক শহীদুল হক স্বপন বলেন, নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে
ব্যবহার-উপযোগী গণশৌচাগার মাত্র ৭টিÑ এটি অত্যন্ত লজ্জাকর বিষয়। বাংলাদেশ
যখন উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের সনদ গ্রহণ করেছেÑ সেই মুহূর্তে কুমিল্লার মতো একটি
ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরীতে মাত্র ৭টি গণশৌচার মানা যায় না। আমি মনে করি,
ত্বরিত গতিতে সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এ জন্য
প্রয়োজনে স্থানীয় কাউন্সিলর-সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা করে
স্থান নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ করে এখনই জনগুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়
এলাকাসমূহে গণশৌচাগার স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. নুরুল্লাহ্
বলেন, ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) ও মিউনিসিপ্যাল গভর্নেন্স
অ্যান্ড সার্ভিসেস প্রজেক্ট (এমজিএসপি)-এও অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট
স্থাপনের জন্য অর্থ বরাদ্দ আছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব কোনো
জায়গা না থাকায় তারা তা করতে পারেনি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন,
নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ডের চৌয়ারা বাজারে কুমিল্লা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের
পাশে একটি অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট স্থাপন করতে গিয়ে স্থানীয়দের বাধার মুখে
শেষ পর্যন্ত সেটি তাঁরা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
নগরবাসী কুমিল্লা টাউনহল
মাঠ সংলগ্ন যেকোনো স্থানে ও পদুয়ার বাজার বিশ^রোড এলাকায় জরুরিভিত্তিতে
অন্তত একটি কওে পাবলিক টয়লেট স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তারা প্রয়োজনে জায়গা
কিনে কিংবা সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে লিজ নিয়ে পাবলিক টয়লেট স্থাপনের জন্য
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনকে জোরালোভাবে আহ্বান জানান। এতে করে নগরবাসীর
যেমন ভোগান্তির অবসান ঘটবে, পাশাপাশি এসব পাবলিক টয়লেট ইজারা দিয়ে সিটি
কর্পোরেশনের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।