ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কেমন আছেন টিকা গ্রহীতারা
Published : Saturday, 20 February, 2021 at 12:00 AM, Update: 20.02.2021 2:58:53 AM
কেমন আছেন টিকা গ্রহীতারা মাসুদ আলম  ||
কুমিল্লায় করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে বড় কোনো পাশর্^প্রতিক্রিয়ার অভিযোগ নেই। শতকরা ২-৩ জনের হালকা জ¦র, মাথা ব্যথা ও গলা ব্যথার কিঞ্চিত সমস্যার কথা শোনা গেলেও এগুলোকে কোনো সমস্যাই মনে করছেন না টিকা গ্রহীতাসহ কুমিল্লার স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত কুমিল্লা জেলায় ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৫৭ হাজার ৪৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৭ হাজার ২৫১ জন এবং নারী ২০ হাজার ২৩২ জন।
এদিকে কুমিল্লার ২৪টি টিকা কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে কুমিল্লার সদর হাসপাতাল কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে বুধবার পর্যন্ত ১৪ হাজার ১৮৪ জন টিকা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ হাজার ৬৩০ জন এবং নারী ৫ হাজার ৫৫৪ জন। তাদের মধ্যে ২০-২৫ জন টিকা গ্রহীতা মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা এবং হালকা জ্বরের মতো কিঞ্চিত সমস্যার কথা জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান।
করোনার প্রতিষেধক টিকা গ্রহণের পর পাশর্^প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে কথা হয় কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কেয়ারী গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বিল্পব নামে এক ব্যক্তির সাথে। তিনি জানান, গত ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মনোহরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে টিকা নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৯ দিন অতিবাহিত হলেও তার শরীরে কোনো ধরনের পাশর্^প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। এছাড়াও ওই ব্যক্তির নানার বাড়ির পরিবারের একাধিক সদস্য এই টিকা নিয়েছেন। তাদের মধ্যেও জ¦র, মাথাব্যথা কিংবা অন্য কোনো সমস্যা দেখা যায়নি।
পাশর্^প্রতিক্রিয়া নিয়ে আরেক টিকা গ্রহীতা কুমিল্লার সড়ক ও জনপথ বিভাগের শ্রমিক নেতা এবং কুমিল্লা মহানগর শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহবায়ক আনিছুর রহমান ভূঁইয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান, টিকা নেয়ার পর ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তার শরীরে  কোনো ধরনের পাশর্^প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি; কোনো ধরনের ব্যথাও অনুভব হয়নি। তিনি নিজেকে খুবই সুস্থ মনে করছেন এবং স্বস্তিও পাচ্ছেন। অন্যদেরকেও টিকা নিতে উৎসাহ দিচ্ছেন তিনি।
কুমিল্লার উপজেলাগুলোতে করোনা টিকা গ্রহণের হালচাল ও গ্রহীতাদের পাশর্^প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে কথা হয় কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. হাসিবুর রহমান জানান, তার উপজেলায় বুধবার পর্যন্ত ২ হাজার ৭৭৩ ব্যক্তি করোনা টিকা গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ৪-৫ জন জানিয়েছেন, তাদের হালকা জ¦র এবং টিকা নেয়া স্থানটি ব্যথা করছে। এর বাইরে গুরুতর কোনো পাশর্^প্রতিক্রিয়ার কথা কেউ জানায়নি।
হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সালাম সিকদার জানান, তার উপজেলায় টিকা গ্রহণের পর বড় ধরনের কোনো সমস্যায় পড়েছেন এমন কোন উদাহরণ মেলেনি। এই উপজেলায় বুধবার পর্যন্ত ১১১৬ জন টিকা গ্রহীতার মধ্যে ৪-৫ জন জানিয়েছেন, তাদের হালকা জ¦র এবং শরীর ব্যথা করছে।
বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত সুলতানা জানান, এ পর্যন্ত ২ হাজারের অধিক মানুষ টিকা নিয়েছেন এখানে। সর্বশেষ বুধবার ১৯০ জন টিকা গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ৩-৪ জনের হালকা জ¦র, মাথাব্যথা এবং শরীরে চুলকানি ছাড়া গুরুতর কোনো প্রতিক্রিয়ার কথা জানা যায়নি। টিকা গ্রহীতারা সবাই সুস্থ আছেন।
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, তার উপজেলায় টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে কয়েকজন টিকার স্থানে কিঞ্চিত ব্যথা এবং হালকা জ¦রের কথা জানান। এই উপজেলায় করোনা টিকা গ্রহীতাদের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ছাড়িয়েছে।
পাশর্^প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, কুমিল্লায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ করোনা প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করেছেন। ভ্যাকসিন গ্রহণের পর ১০-১৫ জনের হালকা জ¦র, ব্যথা ছাড়া গুরুতর কোনো সমস্যার অভিযোগ পাইনি। ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের মধ্যে সবাই সুস্থ আছেন।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, এ জেলায় ভ্যাকসিনেশন শুরুর দ্বিতীয় টিকাটিই আমি গ্রহণ করেছি। প্রথম টিকা গ্রহণ করেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর। ভ্যাকসিন নেয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হইনি। ইনশাআল্লাহ, শারীরিকভাবে সুস্থ আছি।
কুমিল্লার স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছি। বৃহস্পতিবার ১০ দিন অতিবাহিত হলেও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শরীরে দেখা যায়নি। ভ্যাকসিন নিয়ে সুস্থই আছি।
তিনি বলেন, আমার আগে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর স্যার এবং স্যারের সহধর্মিনী। তারাও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা শারীরিক কোনো সমস্যা অনুভব করেননি।  
কুমিল্লার নারী নেত্রী পাপড়ি বসু বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী একই সাথে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভ্যাকসিন নিয়েছি।’ তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের বয়স ৭৫ এবং আমার ৬৫ বছর। আমরা একই সাথে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে সুস্থ আছি। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আমার শরীরে অনুভব হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার পরিচিত অনেকেই করোনা টিকা নিয়েছেন। কারও কোনো শারীরিক সমস্যার কথা শুনিনি।’