
ড. এ কে এম এমদাদুল হক ||
আজ পহেলা ফাল্গুন। প্রকৃতিকে বরণ করার এক অনন্য দিন। প্রাচীন আমল থেকে এদেশে পহেলা ফাল্গুন পালন করা হতো। হিন্দুদের পৌরাণিক উপ্যাখ্যান ও লোককথাগুলোতে এ উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় থেকে পশ্চিমবঙ্গের শান্তি নিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তোৎসব পালন করার রীতি চলে আসছে। ১৪০১ বঙ্গাব্দে এদেশে প্রথম বসন্ত উৎসব পালিত হয়। সে থেকে দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে বাঙ্গালি বসন্ত উৎসব পালন করে আসছে। সুভাষ মূখোপাধ্যয়ের ভাষায়, “ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত”। তবে সত্যিই আজ বসন্ত এসেছে ফুলের ডালা সাজিয়ে। অন্যদিকে ভালোবাসা দিবস মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অংশ। জানা যায়, ২৪৬ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন পাদ্রী চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তাকে বন্দী করা হয়। বন্দী অবস্থা থেকে তিনি কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আর তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদ- দেন। সেদিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের এই ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পরবর্তীতে দেশে দেশে এ দিবসটি পালন করা হয়।
ফাল্গুনের হাত ধরে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির এতো বর্ণিল সাজ। অন্যদিকে আজ বিশ^ ভালোবাসা দিবসও। পহেলা ফাগুন ও ভালোবাসা দিবস দুটির কেন্দ্র বিন্দু “ভালোবাসা”। এ বছর পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস একই দিন হওয়ায় সবাই আরো বেশি করে দিবসটি উপভোগ করতে পারছে।পহেলা ফাল্গুন প্রকৃতিকে বরণ করার আর ভালোবাসা দিবস আত্মার সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার দিন। তাই একই দিনে দুইটি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ফলে আজকে আনন্দও যেন দ্বিগুণ হয়ে গেল।
ভালোবাসার কোন দেশ, কাল, পাত্র নেই। এটি চিরন্তন। তবে এর প্রকাশ হয়তো এক দেশে একেক রকম। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে আমাদের প্রত্যাশা, সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বাসন্তি ফুলের পরশ আর সৌরভে কেটে যাবে সকল জরা-জীর্ণতা। বসন্ত ও ভালোবাসার মিশ্রণে আজকের দিনটি হোক অনন্য। বসন্তের নির্মলতায় ভালোবাসা হোক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।