
টিকার
জন্য অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও
ভারতে উৎপাদিত করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ডের আরো ৫০ লাখ ডোজ গত সোমবার
দেশে এসে পৌঁছেছে। এর আগে এই টিকার ২০ লাখ ডোজ এসেছে ভারতের দেওয়া উপহার
হিসেবে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাসে
তিন কোটি ডোজ টিকা আসবে বাংলাদেশে। অন্যান্য উৎস থেকেও দ্রুত টিকা আনার
প্রক্রিয়া চলছে। এর ভিত্তিতেই আগামীকাল বুধবার শুরু হচ্ছে টিকাদান
কর্মসূচি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই কর্মসূচির উদ্বোধন
করবেন। এদিকে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা
টিকাবিরোধী বক্তব্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এর বিপরীতে
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা টিকার বৈজ্ঞানিক দিকগুলো বেশি করে জনসমক্ষে তুলে ধরার
আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্বে করোনা মহামারি ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে।
প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সংক্রমণ খুবই কমে গিয়েছিল এমন
অনেক দেশে আগের চেয়েও ভয়ংকর রূপে ফিরে এসেছে এই মহামারি। বাংলাদেশে
বর্তমানে সংক্রমণের হার কিছুটা কম থাকলেও যেকোনো সময় তা বেড়ে যেতে পারে বলে
আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর যেহেতু কার্যকর ওষুধ ও চিকিৎসার এখনো ঘাটতি রয়েছে,
তাই বিশেষজ্ঞরা দ্রুত টিকাদানের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের
নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১০০ দিনে ১০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার
লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশেও যত দ্রুত
সম্ভব কমপক্ষে ১০ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এমন
প্রেক্ষাপটে যাঁরা টিকাবিরোধী প্রচারণায় নেমেছেন এবং ভুল-বিকৃত তথ্য দিয়ে
মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন, তাঁরা জনস্বার্থবিরোধী কাজ করছেন। দ্রুত তাঁদের
এমন বক্তব্য প্রদান বন্ধ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জঘন্য কাজটি হচ্ছে,
ভারতবিরোধী মানসিকতা উসকে দিয়ে এবং ভারতে উৎপাদিত টিকা সম্পর্কে অবৈজ্ঞানিক
ও ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা
যুক্তরাজ্যে গবেষণা করে এই টিকা উদ্ভাবন করেছে। সেই ফর্মুলায় ভারতে এটি
তৈরি হচ্ছে। এখন বলা হচ্ছে, ভারতে তৈরি টিকা অক্সফোর্ডের উদ্ভাবিত টিকা নয়।
এটি যদি অক্সফোর্ডের টিকা না-ই হয়, তাহলে খোদ যুক্তরাজ্য কেন ভারত থেকে
টিকা নিচ্ছে? ব্রাজিল, সৌদি আরবসহ ১৪টি দেশ এরই মধ্যে এই টিকা কিনে নিয়েছে।
আরো অনেক দেশ এই টিকা নেওয়ার চুক্তি করেছে। একইভাবে আর্জেন্টিনায়ও এই টিকা
উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেগুলো কি অক্সফোর্ডের টিকা হবে না?
করোনা
মহামারিতে দেশে এরই মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, আট
হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মহামারির কারণে সারা বিশ্বের মতো
বাংলাদেশের অর্থনীতিরও বিপর্যস্ত অবস্থা। এমন সময় টিকা নিয়ে এ ধরনের
দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করি, সরকার
টিকার বৈজ্ঞানিক দিকগুলো তুলে ধরতে ব্যাপক উদ্যোগ নেবে।