
লালমনিরহাটের বুড়িমারী উপজেলায় শহিদুন্নবী জুয়েল নামে এক ব্যক্তিকে
পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় গ্রেফতার চার আসামির জামিন আবেদন
খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই চারজন হলেন মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. বাইজিদ
বোস্তামি, মো. আবদুর রহিম ও মো. হেলাল উদ্দিন।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে রোববার (২৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে
গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী মামুন।
নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার
আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের
সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। গত বছর
চাকরিচ্যুত হওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজারের বাসকল এলাকায়
কোরআর অবমাননার গুজব তুলে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ টেনে
পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ
জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধসহ বিক্ষোভ মিছিল করে।
সেদিন সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা
থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা
দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের
আঘাতে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০
জন পুলিশ সদস্য আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছোড়ে
পুলিশ।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার
(এসপি) আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে আনেন।
১ নভেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তদন্ত করে মসজিদের কোরআন অবমাননার
কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত
দলের পরিচালক আল মাহমুদ ফাউজুল কবির। এটা স্রেফ একটি গুজব বলেও দাবি করা
হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিও কোরআন অবমাননার সত্যতা পায়নি বলেও
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি সাংবাদিকদের জানায়।