https://www.banglatribune.com/c/660
ক্লিনিক্যাল
ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকার সমর্থিত ভ্যাকসিনটি
তৈরি করেছে ভারত বায়োটেক। ২৪ বছর ধরে কাজ করা এ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী
প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ১৬টি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। এগুলো রফতানি হচ্ছে
১২৩টি দেশে।
ক্লিনিক্যাল
ট্রায়াল হলো তিন ধাপের পরীক্ষা। এর মধ্য দিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে ভাইরাসটি
ইমিউনিটি তৈরি করতে পারে কিনা এবং এর কারণে মারাত্মক কোনও
পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা। আর এ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই
ভ্যাকসিনটি জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর তাই এ নিয়ে চলছে
সমালোচনা। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বলছে, ‘জনস্বার্থে জরুরি পরিস্থিতি
বিবেচনায় সীমিত পরিসরে প্রচণ্ডরকমের সাবধানতা অবলম্বন করে’ কোভ্যাকসিন
ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না খোদ ভারতের
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।ভারতের
শীর্ষস্থানীয় ভাইরোলজিস্ট শহিদ জামিল বিবিসিকে বলেন, ‘তৃতীয় ধাপের
পরীক্ষার কোনও উপাত্ত আমাদের জানা নেই। আমরা জানি না এ ভ্যাকসিনটি আসলে
কতটা কার্যকর। সীমিত আকারে চালানো দুই ধাপের পরীক্ষা থেকে আমরা জেনেছি এটি
নিরাপদ। চূড়ান্ত ফল পাওয়ার আগেই যদি আমরা কোনও ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দিয়ে
ফেলি এবং পরে যদি চূড়ান্ত ফলে দেখা যায় যে এটি মাত্র ৫০ শতাংশ কার্যকর তখন
কী হবে? যাদেরকে এ ভ্যাকসিন দেওয়া হলো তাদের জন্য কি এটা ভালো হবে?’ভারতের
ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ গগনদীপ কাং-কে বিবিসির পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অবস্থায় থাকা একটি ভ্যাকসিনকে কিভাবে জরুরি প্রয়োজনে
ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়া যায়? জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তার কোনও ধারণা
নেই। এরকম ঘটনা তিনি আগে কখনো দেখেননি। তিনি বলেন, এ টিকাটির কার্যকারিতা
কতখানি সে ব্যাপারে কোন উপাত্তই নেই যা প্রকাশ বা উপস্থাপন করা হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আদৌ হচ্ছে কি হচ্ছে সেটাই বোঝার উপায় নেই।ভারতে
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারি করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান অল
ইন্ডিয়া ড্রাগ এ্যাকশন নেটওয়ার্ক। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, টিকাটি কতটুকু
কার্যকর সে ব্যাপারে কোন উপাত্ত নেই এবং এ ব্যাপারে স্বচ্ছতারও অভাব রয়েছে
- যা গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। যে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা অসম্পূর্ণ রয়ে
গেছে তাকে এভাবে অনুমোদন দেবার বৈজ্ঞানিক যুক্তি তারা বুঝতে পারছেন না। অল
ইন্ডিয়া ড্রাগ এ্যাকশন নেটওয়ার্ক মনে করে, ‘এর ফলে উত্তরের চেয়ে বেশি
প্রশ্ন তৈরি হবে এবং বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী
প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা বাড়বে না। ’রবিবার
টুইটারে সরকারের মন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে এই
কোভ্যাকসিনকে তড়িঘড়ি করে অনুমোদন দেওয়া নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়। কংগ্রেস
নেতা আনন্দ শর্মা বলেছেন, কোভ্যাক্সিন নামে ওই টিকার নিরাপত্তা ও
কার্যকারিতা সংক্রান্ত উপাত্ত তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের মাধ্যমে
পুরোপুরি পর্যালোচনা করে দেখা হয়নি। তার মতে, এটা এক 'বাধ্যতামূলক
প্রয়োজন' - কিন্তু তা করা হয়নি। সাবেক মন্ত্রী শশী থারুরও বলেছেন
আগেভাগেই এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং এটা বিপজ্জনক হতে পারে।ভারত
বায়োটেক বলছে তাদের কাছে দুই কোটি ডোজ কোভ্যাকসিন মজুত আছে। বছরের শেষ
নাগাদ দুই শহরের চার ফ্যাসিলিটিতে আর ৭০ কোটি ডোজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা
নির্ধারণ করেছে তারা। ট্রায়াল চলার মধ্যেই অনুমোদন পাওয়ার ব্যাপারে নিজেদের
পক্ষে সাফাই গেয়ে বায়োটেকের চেয়ারম্যান কৃষ্ণা এলা বলেন, ‘আমাদের ভ্যাকসিন
২০০ শতাংশ নিরাপদ।’এলা আরও বলেন, বানর ও ইঁদুরের
উপর কোভ্যাকসিন দিয়ে পরীক্ষা চালানোর পর দেখা গেছে এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে
সুরক্ষা দিতে সক্ষম। তৃতীয় ধাপের চলমান পরীক্ষার জন্য বাছাইকৃত ২৬ হাজার
স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে এরইমধ্যে প্রায় ২৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে ভ্যাকসিন
দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটির আশা, ফেব্রুয়ারি নাগাদ ভ্যাকসিনের
ট্রায়ালের চূড়ান্ত ফল পাওয়া যাবে।কৃষ্ণা এলা
বলেন, ভারতের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আইন অনুযায়ী কোনও ওষুধের দ্বিতীয় ধাপের
পরীক্ষার পর গুরুতর ও জীবনের জন্য হুমকিজনক রোগ মোকাবিলায় তা ব্যবহারের
জন্য ‘ত্বরান্বিত’ অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ আছে।কুইন্সল্যান্ড
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পল গ্রিফিন বলছেন,
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে থাকার পরও জরুরি পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন ব্যবহারের
অনুমোদন দেওয়ার বিষযটি নতুন কিছু নয়। তবে তিনি মনে করেন, এক্ষেত্রে চলমান
ট্রায়াল কতটা দৃঢ় এবং আগের ধাপের পরীক্ষাগুলোতে এটি কতটা নিরাপদ ও কার্যকর
সাব্যস্ত হয়েছে সে বিষযগুলো বিবেচনা করা হয়ে থাকে।পাবলিক
হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি কে শ্রীনাথ রেড্ডি বলেন, ‘কার্যকারিতা ও
নিরাপত্তাজনিত পর্যাপ্ত প্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিতে
হয়। এক্ষেত্রে পরীক্ষিত ও অনুমোদিত ডোজ ও ডোজিং শিডিউলের স্বচ্ছতার
প্রশ্নটিও জরুরি।’‘বিজ্ঞান ও জনগণের আস্থার
স্বার্থেই যেকোনও ভ্যাকসিন সংক্রান্ত উদ্বেগগুলো যথাযথভাবে দূর করা
প্রয়োজন। আমাদের হাতে যে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে সেটা নিয়েই যদি আমাদের
সন্দেহ থাকে তবে আমরা যুদ্ধে জিততে পারব না।‘ বলেন রেড্ডি।