ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
খুলে যাক বিশ্ববাতায়ন
Published : Saturday, 18 September, 2021 at 12:00 AM
খুলে যাক বিশ্ববাতায়নঅজয় দাশগুপ্ত ||
“প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অভিন্ন পদ্ধতির শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমই হবে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত। আগে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম ছিল ‘যোগ্যতাভিত্তিক’ এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম ‘উদ্দেশ্যভিত্তিক’। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না। বিদ্যমান পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণির পাবলিক সমাপনী পরীক্ষা- পিইসি ও জেএসসি বাতিল হবে। নবম শ্রেণিতে থাকবে না সায়েন্স, আর্টস, কমার্স নামে বিভাগ বিভাজন। দশম শ্রেণির পাঠ্য বিষয়ের ওপরই হবে এসএসসি পরীক্ষা। এইচএসসির মূল্যায়ন হবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুই পরীক্ষায়। সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষাধারার অষ্টম শ্রেণি থেকে ‘কর্মমুখী’ শিক্ষায় প্রবেশের সুযোগ থাকছে নতুন কারিকুলামে।”
খবরটি পাঠ করার পর আমার মতো অনেকের মনে এক দারুণ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এই পরিবর্তন অনেক আগেই হওয়া দরকার ছিল। আমাদের সময়কাল আর আজকের সময়কালে আকাশ-পাতাল তফাত থাকার পরও আমাদের পাঠক্রম আর পদ্ধতি ছিল মান্ধাতা আমলের। এখন যখন পেছন ফিরে তাকাই মনে হয় কত ধরনের বৈষম্যই না কাজ করত। বাড়ির একমাত্র ছেলে হওয়ার কারণে বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে হবে এটাই ছিল ব্রত। কারণ বিজ্ঞান বিভাগে না পড়লে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ ছিল না। যদিও সে ঘোর উচ্চ মাধ্যমিকে উঠতেই কেটে গিয়েছিল। মানবিক বিভাগে যাওয়ার পর মনে হয়েছিল আমার মাথা থেকে ভারী ইট সরে গেছে। যে কারণে বোর্ডের মেধা তালিকায় যেতেও বেগ পেতে হয়নি। কথাটা বললাম এই কারণে, তলোয়ার রাখতে হয় খাপ মেপে। কোন খাপে কোন তলোয়ার তা জানতে না পারলে সর্বনাশ ছাড়া লাভ নেই।
এতদিন ধরে পাঠক্রম বা এই বিভাজন মূলত বলে দিত তুমি ডাক্তার হতে পড়ছ। তুমি এসেছ হিসাববিদ হতে। আর তোমার পথ মাস্টারি। এটা কোনো জাতির সন্তান বা তরুণদের জন্য মঙ্গলের হতে পারে না। আমরা যারা দীর্ঘ সময় ধরে দেশের বাইরে বসবাস করি আমরা এগুলো অনেক আগেই টের পেতাম। আমাদের ছেলেমেয়েরা এসব দেশে এসে এইচএসসির আগে বুঝতেই পারেনি কাকে বলে পরীক্ষা। দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো ধরনের চাপ ও প্রতিযোগিতামূলক কিছুই না দেখে ভাবতাম এরা মানুষ হবে কীভাবে? পরে বুঝলাম মানুষ হওয়ার জন্য যা যা দরকার সেটাই তাদের ধারাবাহিকভাবে শেখানো ও পড়ানো হয়। যার সঙ্গে থাকে ব্যবহারিক ক্লাস ও ভ্রমণ। আপনি নিজেই ভাবুন একটা ছাত্র বা ছাত্রী পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিজ্ঞানের বাইরে দুটি কবিতা আর একটা ছোট গল্প ছাড়া ইতিহাস-ভূগোল কিছুই জানে না। ভাবুন, যে ছেলেটি ইতিহাসে পাকা সে বোঝেই না কোথায় থাকে মানুষের লিভার। একজ শিক্ষার্থী যদি কেবল ডাক্তার হওয়ার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সেসব বিষয় ছাড়া আর কিছু পাঠ না করে তার কাছে সমাজ ও মানুষের মূল্য কোথায়? সমাজবিজ্ঞান না জানার যে কুফল তা এখন আমরা সবাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
বলা হয়েছে : “নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো- ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সং¯ৃ‹তি। কিন্তু প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না, শিক্ষকরা শেখাবেন। প্রাথমিকের জন্য আটটি বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে। এগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা এবং শিল্প ও সং¯ৃ‹তি। এর মধ্যে ‘ভালো থাকা’ এবং ‘শিল্প ও সং¯ৃ‹তি’ বিষয়ে আলাদা বই থাকবে না। এসব শিক্ষকরা শেখাবেন, এজন্য নির্দেশনামূলক বই দেওয়া হবে। আর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বই পড়ানো হবে। এগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, জীবন ও জীবিকা, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা এবং শিল্প ও সং¯ৃ‹তি।
এর চেয়ে সুখবর আর কী থাকতে পারে? উন্নত দেশে ও সমাজে এটাই নিয়ম। এখন যেটা প্রশ্ন, এসব বিষয় একসঙ্গে পড়ানো ও তাদের তৈরি করার মতো যোগ্য পরিবেশ, শিক্ষক সমাজ আছে কিনা। এখন অবধি তা নেই। কারণ এতদিনের প্র্যাকটিসে আমাদের সমাজে আমরা যেসব টিচার পেয়েছি তারা স্পেশালাইজড। কেউ অঙ্ক, কেউ বিজ্ঞান, কেউ বা ভূগোল বিশারদ। এখন লাগবে সব বিষয়ে জানা এবং পড়াতে পারা টিচার। বিশ্ব নাগরিকত্ব ও জলবায়ু বিজ্ঞানের মতো আধুনিক ও জটিল বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি ছিল সময়ের চাহিদা। এ দুই বিষয় এখন যে কোনো ডাক্তার বা প্রকৌশলীর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বদলে যাওয়া বিশ্বে আমাদের সামনে যে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তার ভেতর পরিবেশ প্রধানতম। যদিও এখন করোনার চেয়ে ভয়াবহ কোনো সমস্যা সামনে নেই। কিন্তু করোনা এক সময় বিদায় নেবেই কিন্তু পরিবেশ দূষণ যাবে না।
তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তি এসব বিষয় কৈশোর থেকে না জানলে আমাদের দেশের বালক-বালিকারা দুনিয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে না। একটা কথা মনে রাখব, দীর্ঘকাল আমরা কেরানি তৈরির পড়ালেখা শিখিয়েছি এবং শিখেছি। সঙ্গে ছিল সামন্ততন্ত্র। জমিদার-জোতদার শেষে রাজা-বাদশাহের আমলে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ যারা নির্ধারণ করতেন তাদের আধুনিকতা বিষয়ে না ছিল ধারণা, না কোনো বিচার-বিবেচনা। আজকাল সমস্যার ধরনও গেছে বদলে। কথায় কথায় যে জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদসহ নানা উটকো বিষয় দেশ ও সমাজকে আক্রমণ করতে উদ্যত তাদের ঠেকাতেও চাই বাস্তবতার সঙ্গে দুনিয়ায় চলতে পারার মতো আধুনিকতা। সে আধুনিকতা দেবে এই পরিবর্তন।
কীভাবে মূল্যায়ন হবে বা কে কীভাবে পাস করবে, সামনে যাবে সে বিষয় এখন তুচ্ছ হয়ে বড় হয়ে উঠবে জানার আগ্রহ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার প্রজ্ঞা ও মননে জেনেছিলেন শিক্ষার মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে আনন্দ। যেসব বিষয়ে ছাত্রছাত্রীরা জানবে তার সঙ্গে যেন ভয়ের কোনো সম্পর্ক না থাকে। আমাদের কৈশোর ও যৌবনে লেখাপড়ার নাম ছিল বিভীষিকা। আর কিছু কিছু টিচার মানেই ছিলেন ভয়ের প্রতীক। সেসব অনেক বিষয় এখন নেই। কিন্তু এখনো রেজাল্ট বের হওয়ার পর আমরা দেখি আত্মহননের করুণ সংবাদ। এসব সংবাদ বন্ধ করতে পারে এই নতুন পরিবর্তন। সবচেয়ে বড় কথা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় যে স্বপ্ন ও অগ্রযাত্রার কথা বলেন তার জন্য এই পরিবর্তন ছিল জরুরি।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার টিমকে জানাই অভিনন্দন। ভালোবাসা নবীন প্রজন্মের জন্য। যারা আগামী দিনে জানবে লেখাপড়া মানুষের মতো মানুষ হওয়া আর আনন্দ বসবাস করে এক জায়গায় একসঙ্গে। জয়তু বাংলাদেশ এগিয়ে চলো এসব তারুণ্যের ওপর ভর করে।
লেখক: কলাম লেখক, সিডনি
বাফুফেতে সর্বোচ্চ ১১ সদস্যের নির্বাহী কমিটি চায় ফিফা
দেশের ফুটবলে মাঠের খেলার জমজমাট অবস্থায় যতই ভাটা পড়ুক, বাফুফের নির্বাহী কমিটির ভোটের লড়াইটা ঠিকই কাঁপিয়ে দেয় ক্রীড়াঙ্গন। বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১৩৯ কাউন্সিলর ভোটাধিকারের মাধ্যমে সভাপতিসহ ২১ সদস্যের নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত করে। আগামীতে কমিটির কাউন্সিলর সংখ্যা কমবে।
কমিটিতে পদ বেশি থাকায় বেশি মানুষ নির্বাহী কমিটিতে জায়গা দেয়া সম্ভব। পদ কমলে নির্বাহী কমিটিতে ঢোকার জন্য কামড়াকামড়িও বাড়বে। তাতে ভোটের লড়াই আরও জমবে। নির্বাচনটাও কঠিন হবে।
হঠাৎ কমিটি ছোট করার প্রশ্ন কেন? এটা বাফুফে স্বেচ্ছায় করছে না। ফিফাই নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাহী কমিটি ছোট করতে। ফিফা বলেছে বাংলাদেশের ফুটবল চালাতে এত মাথাভারী নির্বাহী কমিটির প্রয়োজন কী?
এখন পেশাদার লোকজনকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা। অ্যামেচার লোক দিয়ে আর চলে না। পেশাদার একটা কাঠামো দিয়েই ফুটবল পরিচালিত হোক- সেজন্যই নির্বাহী কমিটির পরিধি ছোট করতে বলেছে ফিফা।
কয় সদস্যের নির্বাহী কমিটি হবে? ফিফা সংখ্যাটা নির্ধারণ করে দেয়নি। তবে বিশ্ব ফুটবলের অভিভাক সংস্থা বলেছে সর্বোচ্চ ১১ সদস্যের কমিটি করতে। বাফুফে অবশ্য এ নিয়ে ফিফার সঙ্গে দেনদরবার করবে সংখ্যা বাড়াতে।
বাফুফের ভোটার ১৩৯ জন। এর বাইরে আছে কিছু নন-ভোটার কাউন্সিলর। ফিফার প্রশ্ন এতো কাউন্সিলর কেন? সর্বোচ্চ ১০০ কাউন্সিলর থাকতে পারে- এমন একটি নির্দেশনা দিয়েছে ফিফা।
জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএফএ) নয়, ভোটার হবে বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএফএ)। জেলা নির্বাচন করে দেবে বিভাগীয় প্রতিনিধি। শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলর হওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ফিফা।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের স্ট্যান্ডিং কমিটি ২২টি। ফিফার কাছে মনে হয়েছে খুবই অতিরিক্ত। সর্বোচ্চ ৮-১০ টা কমিটিই যথেষ্ট বাংলাদেশের ফুটবল পরিচালনার জন্য।
ফিন্যান্স কমিটি, প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটি, অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়ান্স কমিটি, আপীল কমিটি, ইলেকট্রল কমিটি, রেফারিজ কমিটি, কম্পিটিশন কমিটি, উইমেন্স কমিটি, ডিসিপ্লিনারি অ্যান্ড এথিক্স কমিটি ও অ্যামেচার ফুটবল কমিটির বাইরে আর স্ট্যান্ডিং কমিটি থাকার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন আছে ফিফার।
বাফুফে কি ফিফার চাওয়া অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১০ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ও সর্বোচ্চ ১০০ কাউন্সিলর রেখে গঠনতন্ত্র সংশোধন করবে? বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভাপতি চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেবেন গঠনতন্ত্র নিয়ে কাজ করতে। কমিটি একটি খসড়া গঠনতন্ত্র তৈরি করবে। তা নিয়ে ফিফার সঙ্গে আলোচনা করবে বাফুফে। ফিফার সবুজ সঙ্কেত পেলেই গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করবে বাফুফের সাধারণ সভা। বৃহস্পতিবারের নির্বাহী কমিটির সভা এজিএম এর সম্ভাব্য তারিখও ঠিক করেছে ৩০ অক্টোবর।
বাফুফের নির্বাচন এলে কিছু মানুষের যেন শুরু হয় ঈদ-উৎসব। ফুটবলে কোন অবদান নেই- এমন মানুষও হয়ে যান অতি মূল্যবান ভোটার। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠকরা এক জোট হয়ে নির্বাচনে প্রভাব খাটান।
ফিফা যদি তাদের নির্দেশনায় কঠোর থাকে তাহলে আগামী নির্বাচনে জেলার সংগঠকদের আর কাউন্সিলর হিসেবে দেখা যাবে না। বাফুফে ফিফার নির্দেশ শতভাগ মানতে বাধ্য হলে নির্বাহী কমিটির কাঠামোটা হতে পারে এমন- সভাপতি, তিন সহ-সভাপতি ও ৭ সদস্য।