ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ই-বর্জ্যমুক্ত পরিবেশ
Published : Sunday, 17 January, 2021 at 4:16 PM
ই-বর্জ্যমুক্ত পরিবেশ প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির আশীর্বাদে আমাদের জীবন সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। তথ্য আদান-প্রদান, বিনোদনের মাধ্যম তথা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমাদের নিত্যব্যবহারের সঙ্গী। চাইলেও আমরা এগুলোর ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে পারব না। টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওভেন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, ডিভিডি প্লেয়ার, সিএফএল বাল্বের মতো পণ্যগুলো ব্যবহারের কয়েক বছর পর কর্মক্ষমতা শেষ হয়ে গেলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে যেখানে সেখানে। এগুলোই ই-বর্জ্য। বর্তমানে জীববৈচিত্র্য ও মানবসভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ই-বর্জ্য।
গত ১০ বছরে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ গুণ। বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক্স মার্চেন্ডাইস ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, আমাদের দেশে প্রতি বছর ৩২ কোটি টন ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবহার করা হয়। প্রতি বছর ৫০ হাজারের মতো কম্পিউটার আমদানি করা হয়। ফলে এটা সহজেই অনুমেয় এসব পণ্য থেকে কী পরিমাণ ই-বর্জ্য তৈরি হয়। বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৪ লাখ টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হয়। ২০২৩ সালে এর পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১২ লাখ টন। আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি এই বর্জ্যগুলো পরিবেশের ওপর কী প্রভাব ফেলে? যত্রতত্র ই-বর্জ্য ফেলার কারণে এতে থাকা সিসা, মার্কারি, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম ও বেরোলিয়ামসহ নানা ক্ষতিকর উপাদান মাটি ও পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণ। মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া এসব ক্ষতিকর উপাদান সবুজ উদ্ভিদের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এতে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের মতে, ই-বর্জ্যে থাকা ক্ষতিকর উপাদান মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, যকৃৎ, বৃক্ক, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, ত্বক ইত্যাদির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কাজেই ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দ্রুত পরিকল্পনায় না নিলে আগামীতে এগুলো জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ তথা জলবায়ু সংকটের মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ই-বর্জ্য একটা বড় ধরনের সমস্যা হয়ে উঠছে, যা সমাধানের লক্ষ্যে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই প্রয়োজন ই-বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ নিরূপণের ব্যবস্থা। তারপর এগুলোর জন্য স্থায়ী ভাগাড় ও রিসাইক্লিং কারখানা স্থাপন করতে হবে। ই-বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। প্রথমত, যন্ত্র ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি শেখা। এতে মোবাইল, ল্যাপটপ ও ট্যাব বেশিদিন ব্যবহার করা যাবে। দ্বিতীয়ত, গুরুত্ব দিতে হবে পুরোনো সামগ্রীর ব্যবহার বাড়ানোর ওপর। একই যন্ত্র একাধিক কাজ করবে এমন মাল্টিপারপাস ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, একই চার্জারে সব সংস্থার সব মডেলের মোবাইল চার্জ করা যায় এমন চার্জারের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। চতুর্থত, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, ইউনিফরমের ব্যবহার, নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে কিছুটা সুফল মিলবে। এছাড়া, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি উৎপাদন, আমদানি, বিপণন, ব্যবহার এবং ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করতে হবে। জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগও নিতে হবে। এ বিষয়ে ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত যত্রতত্র ই-বর্জ্য না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা এবং অপরকে সচেতন করা।