
গল্প। গল্প
--------------------------------------------------
অকালমৃত্যু
মানিকরতন শর্মা ||
দেস না দরিডা, ইডা দিয়া দে, ঐ দেক হিয়ানে ঝোকুইন্ডার দারে। আ-ল বালা কইরা দেক না। যা আর টু সামনে যা।
Ñঅ আব্বা কই, দেহি না তো
Ñআ ল আরটু সামনে যা
Ñঅহন পাইছি, ইডা না আব্বা
Ñহ
হরমত আলী এক টুকরো দড়ি পেতে এতোক্ষণ বাপ-মেয়ের প্যাঁচাল কম হল না। বৃষ্টি এলে উঠোনে পড়ার আগে ঘরে পড়ে। তাই হরমত আলী বৌয়ের প্যান-প্যানানী সহ্য করতে না পেড়ে উত্তর আডির মোল্লা ভাইয়ের কাছ থেকে পাঁচ আডি বন আনে। যত সামান্য টাকা দেওন লাগছে মোল্লা ভাইকে। এই কয়ডা বন তেনে মাগনা দিলেই পারত। কিন্তু হাড় কিপটা মানুষ মোল্লা ভাই। টেয়া ছাড়া কিচ্ছু বুজে না। যদি বনডি মাগনা দিত হেসে হেই টেয়া দিয়া আধা কেজি আলু, পাঁচ টেয়ার কয়ডা পেয়াইজ আর পাঁচ টেয়ার বাঁশপাতি সুঁটকি কিন্না বৌ মাইয়া লইয়া একদিন যাইত।
হরমত আলী চালের উপর বইসা ক্ষণিকের ভিতর জীবন-সংসারের অভাবী চিন্তাগুলো জাবর কাটতে থাকে। বৌ এতক্ষণ এখানেই ছিল। স্বামীকে বন দিয়া সাহায্য করেছে। এখন হাঁসগুলোকে খাবার দিতে গিয়েছে সে। তাই এ ফাঁকে মেয়ে আলেয়াকে সাহায্য করতে বলেছে হরমত আলী।
কত বয়স হবে আলেয়ার। মাত্র এ বৈশাখে ছ বছর শেষ হয়েছে যা। উদোম শরীরে তলাছেড়া হাফপেন পড়ে ময়লার সাথে সখ্য গড়ে পুরো দিন পার করে দেয় সে। আলেয়া হরমত আলীর বড় মেয়ে। তার ছোট আরেকটি মেয়ে আছে। নতুন, আবুর কাটে সে। মায়ের দুধে যতক্ষণ মুখ থাকে ততক্ষণই সে চুপচাপ। আর তা-না হলে ঘেনর ঘেঙ ঘেনর ঘেঙ এক সুরে চলতে থাকে। আলেয়া শিশু মনে যা আসে তাই মুখ দিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলে বোনকে শান্ত করতে ব্যর্থ চেষ্টা করে। সেও যখন ধৈর্যচ্যুতি হয় তখন হাঁসের পেছনে পেছনে ছুটে যায় গাঙের পাড়। হরমত আলীর বাড়ির পাশেই এই ছোট্ট নদী। বর্ষাতে পানির স্রোতে তাকে নদী মনে হয়। কিন্তু অন্য সময় কেবলই একটা চিকন খাল। নদীরও বহুরূপ হয়। সময়ে সময়ে তার চরিত্র বদলায়।
একটুপর কোথায় থেকে যেন হন্যে হয়ে বৌ রোজিনা আসে।
Ñকী গ অহনও শেষ অইছে না। কোন সময় যাইবা বাজারে। কলমির ডোগাডি তো হুডা অইয়া যাইব। তাড়াতাড়ি যাও না, হেসে বাজার ভাইঙ্গা গেলে দাম পাইবা না। হোন, ঘরে এক পোডা তেল নাই, হুকনা মরিচ নাই, পারলে দুইডা রওন আইননো।
খুব সকালে চাল মেরামত করার জন্য হরমত আলী চালে উঠে।
Ñঅ হুনছি লামতাছি
উঠুনের কোণায় গামলায় গত রাতের জমা বৃষ্টির পানি দিয়ে হাত-মুখ ধোয় হরমত আলী।
একটা টিনের থালে পান্তাভাত নিয়ে বসে। খুব বেশি ভাত নাই। বৌ রোজিনা চার মোট ভাত ডেগ থেকে ছেকে স্বামীর থালে দিয়ে বলে, এইডিই আছে। হরমত আলী নিজ হাতেই একটা মাটির মালসা থেকে বড় সাইজের একটা পেঁয়াজ দাঁতে কামড় দিয়ে একভাগ মালসাতে রেখে দেয়। আর বাকি অংশটা দিয়ে পান্তাভাত খেয়ে নেয় দ্রুত। হাঁটুর লুঙ্গি দিয়ে মুখ মুছে হরমত আলী। তারপর উঠোনের মাচা থেকে জলকলমির ডোগা কাঁধে নিয়ে বাজারে যায়।
Ñআলেয়া কই ল, কই গেলি, আ-ল বইনডার কাছে আয় না।
রোজিনা চুলায় খড়-কুটো গুজে দিয়ে ফুঁয়াতে ফুঁয়াতে ক্লান্ত। আলেয়ার কোন সাড়া-শব্দ নেই। ছোট মেয়েটার কান্না থামাতে অবশেষে রোজিনা মোতের কাঁদা থেকে কোলে তুলে নিয়ে আসে। কোলে রেখেই একটা স্তন গুজে দেয় রোজিনা। আপাতত মেয়েটা শান্ত হয়। আবার রান্নায় মন দেয় সে। বেশ কিছুক্ষণ পর আলেয়ার আগমন ঘটতেই মার তেছরা ও কোণা-চেপটা বকা গিলতে হয়। আলেয়া বকা খেয়ে কিছু বলে না। একসময় রোজিনার বকাবকি থামে।
Ñঅ হনও বুর দিচত না।
আলেয়া বাঁশের আলনা থেকে একটা গামছা আর পেন নিয়ে সোজা দৌঁড় দেয় গাঙ বরাবর। পথেই দেখা হয় ময়নার সাথে। ময়নাও গাঙে বুর দিব। ময়নাকে সাথে পেয়ে আলেয়ার খুশির শেষ নেই। গাঙের পাড়ে ছোট-বড় নৌকাবাঁধা। ছেলেরা নৌকা থেকে ঝাঁপ দিচ্ছে। নদীজলে ন্যাংটা শরীরে দাবাদাবি করেই চলেছে। শাসন-বারণের কেউ নেই। হুকুমের কর্তা এখানে অনুপস্থিত। নদীর স্রোতের জলে বাল্যজীবন ছোটাছুটি। ময়না আলেয়ার থেকে দু’বছরের বড়, তাই বুদ্ধিতেও একটু তীক্ষ্মতা আছে। আলেয়া একবার বলেছে চল ময়না নাও থাইক্যা লাপ দেই। শোনে ময়না বাধা দেয়। তাই ওরা ডুব সাঁতারে সময় পাড় করে শেষে বাড়ি ফিরে। উঠোনে পা দিতেই আরেক পর্ব মার বকুনি। চুলের পানি ছাড়িয়ে আলেয়া বোনের কাছে গিয়ে বসে। হরমত আলী রসুন আনতে ভুলে যায়। এবার তার উপরও শাসন চলে।
তোমারে যদি কই এইডা আইন, আন আরেকটা। যেইডা কইমু হেইডার কোন খোঁজ নাই। বাজারে গেলে হগলতা বুইল্যা যাও।
হরমত আলী রোজিনার কথায় কান দেয় না। সে জানে বৌ অনেক কথার মানুষ। সবকথায় কান দিলে চলে না। তাই নরম গোছের হরমত আলী অনেক কথার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। একদম সোজা-সাদা মানুষ সে। কারো কথায় যায় না, আবার কারো কথার ধার-ধারে না। শরীর খাঠুনি তার পুঁজি। যাকে বলে দেহ রথই সম্বল।
কখনো ভেন চালক। কখনো বা ইরি খেতের বদলা। কখনো বা মহাজনের মাছমারার জাল টানা। আবার কখনো বা হাটে-বাজারে সবজি বিক্রেতা। অর্থাৎ হরমত আলী বহুমুখী কামলা মানুষ। যখন যেদিকে ডাক আসে সেদিকেই তার ছুটে চলা।
এভাবে দিন গত হয়। হরমত আলীর বয়স সম্মুখে চলে। বড় মেয়ে আলেয়া পাঁচ বাড়ি দূর মক্তবে কদিন আসা যাওয়া করেছে। এখন বন্ধ। ইস্কুলেও তথৈবচ। সোজা কথা নিকাহ বাসরে নাম ঠিকানা কোন মতে লিখতে পারবে। এমন যোগ্যতা আলেয়ার হয়েছে।
গ্রামের ফিরোজ মিয়া আর ভূঁইয়া বাড়ির ঘরে ঘর কাজে গতর খাটিয়ে চারপট-পাঁচপট চাল, কখনো বা নগদ টাকা, কখনো ভাঙা কাঁঠাল নিয়ে আসে রোজিনা। সংসারের জন্য রোজিনার চিন্তার কমতি নেই। আলেয়া বার বছর গিয়ে সাত মাস হল। শরীরের ভাঁজে গ্রামের ছেলেদের নজর পড়েছে। বিকালে বাড়ির চার-পাশ হাঁটা চলা করলে ওৎপাতা বখাটে ছেলেরা শিস দেয়। বিশ্রী মন্তব্য করে। আলেয়া সম-অসমবয়সী বান্ধবীদের সঙ্গ করে ছেলেদের আর পুরুষ মানুষের মনকথা দেহকথা বুঝে নেয়। ফলে ওদের কথার মর্ম বুঝলেও কোনো জবাব দেয় না। জবাবহীন বোবার শক্রুরা একদিন চলে যায়। কিন্তু বছর দেড় ঘুরতেই আলেয়ার ফুল ফোটার সৌরভ ছড়তে থাকে। বিয়ের কথা হরমত আলীর কানে এলেও ঐ অভাবের দুষ্টচক্র তাকে সম্মুখে এগুতে দেয় না।
হুসেন মিয়ার চেলা কদিন হল একটা বিষয় নিয়ে খুব বিরক্ত করে আলেয়ারে। আলেয়া হুসেনের কথার পিঠে দু-চারটা জবাব দেয়। হুসেন লোভ-লালসা দেখায়। সুখ- বেহেস্তের দৃশ্য প্রদর্শন করে। আলেয়া কখনো এক পা এগোয়, কখনো বা দুপা পেছনে যায়। চিন্তাগুলো শরীরের ভাষার সাথে দ্বন্দ্ব করে। মনে মনে কথা কয়। কখনো পাশের বাড়ির মিনু ভাবির সাথে খুলে বলতে গিয়ে লজ্জায় বলতে পারে না। ভাবি অভিজ্ঞ মানুষ। আলেয়ার অল্প কথার ভাব সম্প্রসারণ করে ধরিয়ে দেয়। বলে, গাছে ফুল ফুটলে মৌমাছি গুণগুণ করবেই ভাই। এ মধু পুরুষ মানুষকে মাতাল করে। পাগল করে। দেইখো সাবধানে থাইকো।
Ñআ-ল যাছনা ছাগলডা নিয়া আন। বিয়ালের দুদডা দোয়ান লাগব তো। যাছনা তাড়াতাড়ি নিয়া আয়।’ আলেয়া হুসেনের সব আচরণের কথা মাকে খোলে বলে নি। মেয়ে বড় অইচে কত নাগর ঘুর-ঘুর করবে এটাই স্বাভাবিক। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আলেয়া ইস্কুল মাঠে ছাগল আনতে রওনা দেয়। ইস্কুলের বেশ কাছেই হুসেনের চেলাটারে দেখতে পায় আলেয়া। দেখে বুকটায় একটা মোচড় দেয়। ইস্কুলের কোনো এক শিক্ষক ঢাকা থেকে আসতে এক্সিডেণ্টে মারা যায়। ফলে আজ ইস্কুল বন্ধ। আলেয়া মাঠে ছাগলটাকে প্রথমে দেখতে পায় না। একটু এদিক-ওদিক খোঁজে দেখে, কে যেন বারান্দার উপর একটা পিলারের সাথে ছাগলটাকে বাইন্দা রাখছে। আলেয়া মনে মনে বকা দেয়, কোন হারামজাদা জানি আমাগ ছাগলটারে এহানে বাইন্দা রাকছে।’ বারিন্দায় ওঠে দড়িটা খুলতে গিয়ে আচমকা পেছন থেকে ঝাপটে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে গামছা দিয়ে মুখ বেধে ফেলে আলেয়ার। কিছুক্ষণ জোড়াজুড়ি করতে থাকে সে। আলেয়া দেখে হুসেন মিয়া। মোল্লা মিয়ার ছোট পোলা। পাছাকোলে করে একটা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে মাস্টারের টেবিলে শুয়িয়ে দেয় আলেয়াকে। অল্প কিছুক্ষণের মাঝে হুসেন তার আসুরিক কার্যসিদ্ধি করে। যাবার কালে আলেয়াকে শাসিয়ে যায় হুসেন। আলেয়া অবসাদ দেহে অবশেষে দুধাল ছাগলটারে সঙ্গে নিয়ে ধীরেধীরে ঘরে ফিরে। সেদিনও মার অনেক প্রশ্নের উত্তর আলেয়া জবাব না দিয়ে নিয়তির হাওয়ায় মিশিয়ে দেয়। মনের সাথে কথাবলে। শেষে আলেয়া রাতে মার কাছে গামছা বাঁধার কাহিনি বলে। মা বেশিক্ষণ পেটে কথা রাখতে পারে না। পরে স্বামী হরমত আলীকে খুলে বলে। স্বামী-স্ত্রী প্রতিবাদী হয়। বিদেশিবাড়ি। মোল্লা মিয়ার ছেলে। ক্ষমতা অনেক। আলেয়ার মা-বাবা আলেয়ারে সঙ্গে করে প্রথমে থানায় যায়। ডিউটি অফিসার মনোযোগ দিয়ে কথাশুনে। কেমনে হল, কোথায় হল, কজন ধর্ষণ করেছে, কতক্ষণ ধরে চলল যৌনকথা শুনতে ডিউটি অফিসার বেশ মজা পেতে লাগল। সব শোনে শেষে অফিসার বললেনÑ‘আজ আপনারা বাড়ি ফিরে যান। আগামীকাল আইসেন।’ এদিকে ডিউটি অফিসার মোল্লা মিয়ার সাথে গোপনে রফা-দফা শেষ করে। যথারীতি হরমত আলী স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থানায় আসে। কিন্তু ডিউটি অফিসার স্রেফ জানিয়ে দেয় সাক্ষীসামন্ত নাই, মামলা এখানে হবে না। এটা নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি না করে মোল্লা মিয়ার সাথে একটা আপোস কইরা নেন।’
হরমত আলী সোজা মানুষ। সোজা হাঁটে। ডিউটি অফিসারের কথায় কান দেয় না সে। শেষে সিদ্ধান্ত হয় লেবু মিয়ারে সঙ্গে নিয়া শহরের আদালতে মামলা করবে।
খুব সকালে আদালতে এসে সিনিয়র উকিল তাহের সাহেবের সাথে কথা বলে। উকিল সাহেব সব শোনে বলেন, আজ জজ সাহেব নাই। আগামীকাল আসলে কেইসটা হবে।,
দুধাল ছাগলটা বিক্রি করে হরমত আলী পুরো টাকাটা সঙ্গে নিয়ে আসে। উকিল সাব প্রাথমিক খরচপাতির জন্য কিছু টাকা নিলেন আর বাকি টাকা কেইস হলে পর।
পরদিন সকালে সবাই আসে। সিনিয়র এজাহারে বর্ণিত তথ্য অনুযায়ী প্রথমে আলেয়াকে উক্ত বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে । বাদিনীর উত্তর সাবলিল করার জন্য রিয়ারসেল দেন তিনি। কিন্তু সিনিয়র খুশি হতে পারেন নি। আলেয়ার বয়স অল্প। গ্রামের মেয়ে। কথা বলতে গিয়ে ঘাবড়িয়ে যায়। উল্টাপাল্টা বলে। থেমে-থেমে উত্তর দেয়। ঘটনার দিন-তারিখ বলতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলে। সিনিয়র শেষে অধৈর্য হয়ে পাশের জুনিয়র উকিলকে বলে,‘তুমি দেখতো পার কিনা। তাকে তাড়াতাড়ি প্রস্তুত কর। কোর্ট কিন্তু ওঠার সময় হয়েছে। যদি ঠিক-ঠাক মতো বলতে না পারে, তবে জজ সাহেব কোন মতেই এই মামলা আমলে নিবেন না।’ জুনিয়র সট-কাট কৌশল প্রয়োগ করে মেয়েটাকে প্রস্তুত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে।
তারপর ফাইলিংএ ডাক আসে। আলেয়ারে বাদিনীর কাঠঘরে দাঁড়িয়ে উকিল সাব দু-একটা প্রশ্ন করতেই জজ সাব নিজেই ভিকটিমকে প্রশ্ন করতে থাকেন। আলেয়া জীবনের এই প্রথম এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। সে আরো বেশি ঘাবড়িয়ে যায়। এদিকে জজের মাথার উপর ফ্যানের পাখার সাথে হঠাৎ একটি চড়ুই পাখি বাড়ি লেগে প্রচণ্ড শব্দে জজ সাহেবের পায়ের কাছে লুটিয়ে পরে। নিচে পড়ে চড়ই পাখিটি অল্প কিছুক্ষণের ভিতর মরে যায়। জজ সাব চড়ুইর মৃত্যুর ছটফটানি দৃশ্য দুনজর দেখলেন। তারপর কালো মোটাসোটা পেশকার এসে মৃত চড়ুই পাখির শবদেহ নিয়ে যায়। চড়ুইর মৃত্যুতে দুজন উকিল ইস্ করে দুঃখ প্রকাশ করে। এদিকে জজ সাব আলেয়ার জবানবন্দি নিতে গিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারে নি। তাই মামলা আমলে নেন নি। আলেয়া ধীরগতিতে নেমে আসে। মুহূর্তেই পেশকার অন্য ফাইলিং মামলার জন্য ডাক দেয়।
কবিতা
হৈমন্তি জোছনার খেলা
আলী হোসেন চৌধুরী ||
হৈমন্তী চাঁদ প্লাবন বয়ে দিলো জ্যোৎস্নার
প্রণয় শোভিত কোন স্নিগ্ধ কুয়াশা
ঢলে পড়ছে বুকের ভেতর শরীর আঙ্গিনায়
সুষমা ছড়ায় অন্তরলোক আলোর পিপাসা
প্রকারন্তরে পরাজিত মেঘেরা উড়ে যায় দিগন্তে
আমার সারা অঙ্গে শুধু জ্যোাৎস্নার খেলা
অপার্থিব এক আনন্দ বৈভব অমৃতবাণী
অতিমানবীয় সুরের খেলা বেলা-অবেলা
প্রমত্ত ঢেউ তরঙ্গে ভাসে সনাতন দীর্ঘশ^াস
চাওয়া পাওয় বিশ^াস- অবিশ^াস কোথা হারায়
প্রলয় স্তব্দ হয় অনুপম অমরাবতীর গানে
জল-তরঙ্গ বাজে নিত্য হৃদয় অরুনিমায়
মুন্সি আলতাফ আলী সড়ক কাজী মোহাম্মদ আলমগীর ||
আজ ভাঙা রাস্তা পাড় হচ্ছে এক গর্ভবতী মা
রিক্সায় ঝাঁকি লাগছে ভীষণ রকম লাগছে
মা ব্যাথা পাচ্ছে মা ব্যাথা পাচ্ছে, ব্যাথা...
আহা! মা আর সহ্য করতে পারছে না
বদলে যাচ্ছে মায়ের মগজের দৃশ্যাবলী – ভাষা।
ওখানে - ঐ রাস্তায় স্বর্গ থেকে ইট পাথর বিটুমিন
এনে অনন্তকালের ঝাঁকুনি যারা তৈরি করছে প্রভূ
তাদের- মরহুম- মরহুমাদের- বেহস্ত নসিব করুন
প্রভূ, তাদের স্ত্রীদের গলায় কানে নাকে ঝুলে থাকা
অলঙ্কারের ওজন আপনি শতগুন বৃদ্ধি করে দিন
প্রভূ তাদের পেটের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে সব কিছু খেয়ে ফেলার
তৌফিক দিন যাতে তারা মুদ্রা পিতল দস্তা সিসা লোহাসহ হ¹ল
কিছু হজম করে আরো খাওয়ার জন্য জিবটা লেতলেতিয়ে বাড়াতে থাকে
তাদের খাবার টেবিলে গরু খাশি উট বাঘ ভালুক গণ্ডার জলহস্তির
মাংস আর বোয়াল চিতল কাতল তিমি কৃমি হাঙ্গরের ব্যাবস্থা করেদিন
প্রভূ শুনেছি তারা সুখের জন্য এসব করে, আপনি তাদের সুখি করে
দিন রাত্রি সুখের বকবকানিতে ডুবিয়ে রাখুন।
ওরা যেন বলতে থাকে- আহা! অনন্ত সুখ ঃ বগ বগ বগ
অনন্ত সুখঃ সর সর দামী ইংরেজি কমোড শিসসসসসসসস
প্রভূ স্বর্গ বা বেহেস্তে যাওয়া তাদের রাস্তাটি আপনি মসৃণ করে
বানিয়ে দিন, আমাদের জমেছে অনেক অনেক ঋণ
কারো অনাগত নবজাতক মরে গেলেও ক্ষতি নেই
প্রভূ আমার প্রার্থনাটি কবুল করুন
আমিন! আমিন ! আমিন !
আমাদের জমেছে অনেক ঋণ
নিলুদীর জন্য ভালোবাসাজহির শান্ত ||
ডনর্মোহ দিনগুলি ব্যাঙের মতো একঘেয়ে লাগে... আরেকটা বর্ষা এলে ক্সতি কী... আরেকটি
বৃৃষ্টিমুখর রাত... চোখের কোন বেয়ে রাতের ঝর্ণায় ভেসে যেতো দুঃখকণাগুলো...মকমল চাদরে
ঢেকে রাখা বুকের আঁচল- ভালোবাসা যেখানে সুখে শোকে একাকার...
তার বাম স্তনের দু‘আঙুল নিচে অবিরাম বেজে চলা তোধ্বনি/ আমার কানে বাজে নুপুর পরা ময়ূরনাচের
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত হয়ে। জন্মান্ধের মতো আমারও ইচ্ছে কওে মাঝে মাঝে; ছুঁয়ে দেখি বাতাবি নেবু জোড়া, আমার কনিষ্ঠ আঙুল লেপ্টে থাকে তার তালুজুড়ে... আথবা আনমনে আমিই খুঁটে দিই বুকে জাগা ঘামাচি গোটা...
তার আহ্লাদিত হেলা অবহেলায় আমি কেবল হেওে যাই...আমাকে ভাবায় আমাকে ভাসায়...
স্বপ্নের ছায়কোষ দূরত্বে কিংবা অসম বয়সের সম্মিলনে কোনো ভালোবাসা নেই নিলুদী?.. একটু ছোঁয়া- একটু উষ্ণুতা- আর এক মুঠো স্বপ্ন...কী আশ্চর্য; সবার স্বপ্নে নাকি রাজকুমারী আসে...আমার স্বপ্নে সে, অথবা তুমি কিংবা তার একজোড়া কাজল কালো হরিণ -চোখ, গোলাপরাঙা মায়া – কমলার ঠোঁট; যা ছোঁয়ে দেখা হয়নি আজো...হয়তো হবেও না কোনদিন...
গাদাকালো ক্যানভাস গায়ে জড়িয়ে, টিপঢাকা স্কার্ফ; কোয়ার্টার হাতায় সেজেগুঁজে তুমি শালবন মাড়াবে। প্লাজু দোলাবে, ধুলু উড়বে...ওমা তুমি চলে যাচ্ছো!অবশেষে আমি টের পাই তুমি আড়াল হয়ে যাচ্ছো- একসময় মানুষ যেমন মাথা হাতরে টের পায়, তার সব চুল শাদা পেকে যাচ্ছে!..তুমি চলে যাচ্ছো; উঁচু-নিচু পাহাড় ডিঙ্গিয়ে, বুকের জমিনে রোপিত সবুজ ফসলের শিশির দু’পায়ে মেখে;দুমড়ে-মুচড়ে তুমি হাঁটছো নীল দিগন্ত ছাড়িয়ে। যেন বিকেলের আধডুবা সূর্যটা তোমাকে তাড়া করে যাচ্ছে; তুমি তার সঙ্গী হবে!
অথচ তোমার গন্তব্য আমার জানা নেই; যেমন জানি না কোথা তেকে এসেছিলে তুমি...
খতিয়ান
আতাউর রহমান ||
একটা সময় ছিলো আপনাকে আমি "তুমি" করে বলতাম
তারও ঢের আগে নিঃশ্বাসের মতো কাছের শব্দ " তুই "...
এখন সেইসব সময় শুধুই চোখের ভুল,
ওষ্ঠের ভুল অধিকার...
স্মৃতির সংসার পোড়ে মহাকালের অগ্নিবলয়ে !
আচ্ছা বাদ দিন। তারপর কী খবর ?
কতোটা পথ লেখা হলো আঙুলের গিঁটে
জানতে চাইবো না এর হিসেব ,
শুধু পাকা চুলে জমা হলো কতো বেদনার ধুলো
দেবেন কি তার পরিপাটি হিসেব আজ ?
চোখের নীচে জমা হলো কতো অমাবস্যা ?
আপনার মনে আছে হয়তো-----
একদিন চাঁদ ছুঁতে গিয়ে আপনার মুখ ছুঁয়েছিলাম,
একদিন দুঃখ ছুঁতে গিয়ে আপনার হৃদয় ।
ধাবমান ট্রেনের মতো খোঁড়াতে খোঁড়াতে
আমি ত্যাগ করে এসেছি যে অতীত
বুকে রেখে আগুনভরা মালসা,
হে নিষিদ্ধ আত্মীয়া, তাকে ফের তুলে দিলেন
বৃষ্টিময় চোখের মেঘে !
এখন দুখানি হাতের লোকালয়ে
চোখে চোখে চোখের পাতায়
কতো স্পর্শ, কতো চুম্বন, কতো নারী, কতো পাথর !
কী হতে পারতো ? কী হচ্ছে ? এসবে কী এসে যায় ?
আপনি তো জানেন, "তুমি" মরে গেছে,
"তুমি" ভিজে গেছে, শুকিয়ে গেছে রোদবৃষ্টিতে ।
সমর্পণ
সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া ||
তুমি সমুদ্র কলকল
আমি আজন্ম নোনাজল।
সতত তুমি আনন্দ ছলছল
দুঃখ শুষে হই লবন,ক্ষীণ বল।
তোমাতে আশ, তোমাতে বাস
তোমাতে চাষ, তোমাতে বিনাশ।