চলতি বছরের এপ্রিল থেকে
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে জাতীয় মূল্যস্ফীতির চেয়ে চালের মূল্যস্ফীতি
ছিল দ্বিগুণেরও বেশি। কখনো কখনো তা তিন গুণের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই হিসাবই বলে দিচ্ছে বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল নয়।
ভরা মৌসুমে এসেও বাজারে চালের দাম বাড়ছে। জাতীয় দৈনিকে মঙ্গলবার প্রকাশিত
খবরে বলা হয়েছে, এক থেকে দেড় সপ্তাহে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম
বেড়েছে কেজিপ্রতি ছয় টাকা পর্যন্ত।
প্রকাশিত খবর অুনযায়ী চালের সরবরাহে
মিলার ও বড় ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ আরো বেড়েছে। বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধির
যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। বোরো মৌসুম শেষ হয়েছে বেশিদিন হয়নি। আমন মৌসুমেও
ধান উৎপাদন কম হয়নি। তার পরও বাজারে চালের দাম বাড়ছে কেন?
বাংলাদেশ রাইস
মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি বলেছেন, ‘চালের ব্যবসায়ী এখন আর শুধু
ছোট মিলগুলো নেই। বড় ব্র্যান্ড কম্পানিও চালের ব্যবসায় নেমেছে। ফলে ধান
মজুদের পরিমাণ বেড়েছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও এখন সরু চালের চাহিদা
বেড়েছে।’ তাঁর মতে, কয়েক দিন টানা বৃষ্টির কারণেই হঠাৎ চালের দাম বেড়েছে।
সরবরাহকারীরা বলছেন, পরিবহন ব্যয় বাড়ায় প্রতি কেজিতে সরবরাহ খরচ বেড়েছে ২০
থেকে ৩০ পয়সা। এ ছাড়া সরকারের ধান ক্রয়ের কারণে বাজারে ধানের দাম বেড়েছে।
গতকাল
সোমবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে জরুরি ভার্চুয়াল সভায় খাদ্যমন্ত্রী
বলেছেন, ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন মিলাররা। চিকন চালের দাম করপোরেট
ব্যবসায়ী ও অটো রাইস মিলাররা নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাঁর মতে, মিল মালিক ও
আড়তদাররা চাল মজুদ করে মৌসুমের শেষ সময়ে দাম বাড়িয়ে তা বাজারে ছাড়েন। চালের
দাম স্থিতিশীল রাখতে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, বাজারে
চালের অভাব নেই। মিল মালিকরা চাল ধীরে ধীরে ছাড়ছেন বলে দাম বাড়ছে। এখনই
বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তার উপায়ও বলে দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে,
কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধিসহ
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে কেন্দ্রীয় তদারকি কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
প্রয়োজনে চাল আমদানিতে যেতে হতে পারে—এমন আভাসও দিয়েছেন তিনি।
চালের
বাজার অস্থিতিশীল করতে একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় এমন সন্দেহ একেবারেই অমূলক
নয়। খাদ্যমন্ত্রীর কথায়ও সে বিষয়টি স্পষ্ট। ধারণা করা যেতে পারে, দেশে
যথেষ্ট চাল আছে; কিন্তু সেই চাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মজুদ রেখেছেন।
সরকারের মজুদ কমে যাওয়ার অপেক্ষায় চালের বাজারের সিন্ডিকেট। তখন পুরো
নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে। চালের বাজারে এই অস্থিরতার
পেছনে আমদানিকারক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও মিলারদের হাত রয়েছে বলেও অনেকের
ধারণা। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।