রোববার ৮ জুন ২০২৫
২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
কোটিপতির সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে
প্রকাশ: সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম |

ব্যাংকিং খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাব সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৩৯টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) এই প্রতিবেদনে বিগত কয়েক বছরের আমানত ও ঋণ বিতরণের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত জুন শেষে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৯৯ হাজার ৯১৮ জন। অর্থাৎ গত তিন মাসে ব্যাংক ব্যবস্থায় নতুন কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৩২১ জন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের জুন মাস শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৪৯২ জন। ২০২১ সালের জুন শেষে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ৯১৮ জনে। অর্থাৎ গত ১৩ বছরে ব্যাংক ব্যবস্থায় নতুন কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৭৮ হাজার ৪২৬ জন । এরমধ্যে করোনাকালের দেড় বছরে নতুন করে কোটিপতি হয়েছেন ১৭ হাজার ২৯৩।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের মার্চে যখন দেশে মহামারি করোনার আবির্ভাব শুরু হয়, তখন ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি। এই বছরের জুনে এটি বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৯১৮টি। অর্থাৎ এই পরিমাণ অ্যাকাউন্টে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হয়েছে। যদিও গত সোয়া বছরের করোনাকালে এর কয়েকগুণ মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে।
অবশ্য দেশে এখন কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা কত, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যান নেই। তবে ২০১৮ সালে সম্পদশালী বৃদ্ধির হার ও ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রক্ষেপণ ধরে ওয়েলথ-এক্স’র  প্রতিবেদনে বলা ছিল, ৩ কোটি ডলার বা আড়াইশ’ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিকদের সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হারে বাড়ছে। ওয়েলথ-এক্সের হিসাবে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে অতি ধনীর সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭ শতাংশ হারে। এ হার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ মোট ৭৫টি বড় অর্থনীতির দেশের চেয়ে বেশি।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পরিসংখ্যান কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করে না। তারা বলছেন, বাস্তবে নতুন কোটিপতি বেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এই বৃদ্ধিকে সমাজে আয় বৈষম্যের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বলে মনে করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কোটিপতির সংখ্যা যেমন বেড়েছে, ঠিক তেমনি গরিবের সংখ্যাও বেড়েছে। অর্থাৎ সমাজে আয় বৈষম্য লক্ষ করা যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় অনেকে ব্যাংকে টাকা রাখছেন আমানত হিসেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী,  কোটি টাকার হিসাব মানেই সব ব্যক্তি হিসাব নয়। কারণ, ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নামেও হিসাব রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্টের পেছনে এক বা একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন,  ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি আছে—এমন আমানতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মানেই দেশে নতুন করে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ১২ কোটি ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪৬টি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা আছে ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে কোটি টাকার আমানতকারী হিসাব সংখ্যা এক লাখ ২৩৯টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৮৭ হাজার ৪৯০ জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি গ্রাহক বেড়েছে ১২ হাজার ৭৪৯ জন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংক খাতে পাঁচ হাজার ৬৪৬টি কোটিপতি ব্যাংক হিসাব যোগ হয়েছে, যেখানে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোটিপতি হিসাবধারী বেড়েছিল ৩৮২ জন। এছাড়া চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০ জন। মার্চ শেষে কোটিপতি হিসাবধারী বেড়ে ৯৪ হাজার ২৭২ জনে দাঁড়ায়। জুন শেষে সেই সংখ্যা বেড়ে ৯৯ হাজার ৯১৮ জনে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের পরও ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেশের ব্যাংক খাতে ১০ হাজার ৫১ জন নতুন কোটিপতি হিসাবধারী যোগ হন। এসব হিসাবে আমানত যোগ হয়েছে ৬৮ হাজার কোটি টাকা। কোটিপতি হিসাব সংখ্যা বাড়তে থাকায় মোট আমানতে তাদের অবদানও বাড়ছে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে ১ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত জমা থাকা হিসাব ছিল ৭৮ হাজার ৭২৫টি। অর্থাৎ আগের প্রান্তিকের চেয়ে বেড়েছে ৩১টি। ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত থাকা ব্যাংক হিসাব সংখ্যা ১১ হাজার ৭৯টি। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আগের প্রান্তিকের চেয়ে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৬৬টি। ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা জমা থাকা ব্যাংক হিসাব তিন হাজার ৬৪২টি। এক্ষেত্রে আগের প্রান্তিকের চেয়ে বেড়েছে ৪৩টি। ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা জমা থাকা ব্যাংক হিসাব সংখ্যা এক হাজার ৭৪০টি। অর্থাৎ আগের প্রান্তিকের চেয়ে বেড়েছে ৮টি। ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত জমা থাকা ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা এক হাজার ১৮৩টি। এ ক্ষেত্রে আগের প্রান্তিকের চেয়ে কোটিপতি কমেছে ২টি ব্যাংক হিসাব।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত জানান, করোনা মহামারিতে কেউ কেউ কল্পনাতীত ধনী হয়েছেন। একই সময়ে দেশে আয় বৈষম্য ও সম্পদ বৈষম্য বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
গত শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, করোনায় নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষ। তাই করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ধনীদের সম্পদ গরিবের মধ্যে পুনর্বণ্টনের সুপারিশ করেন আবুল বারকাত।
মূল প্রবন্ধে আবুল বারকাত বলেন, করোনা মহামারি দেশের শ্রেণি কাঠামো পাল্টে দিয়েছে। করোনার আগে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ। গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৬৬ দিনের টানা বিধিনিষেধের সময় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৬ কোটি ৮০ লাখে ঠেকেছে। অর্থাৎ করোনার কারণে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।
এদিকে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত বছরে করোনাকালীন আয়, ব্যয় ও বেকারত্বের প্রভাব তুলে ধরে একটি পরিসংখ্যান দিয়েছিল, যেখানে বলা ছিল করোনায় মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ। করোনার আগে গত মার্চ মাসে প্রতি পরিবারের মাসিক গড় আয় ছিল ১৯ হাজার ৪২৫ টাকা। ২০২০ সালের আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৪৯২ টাকায়।
এদিকে অন্য এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচ জন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৭ জনে দাঁড়ায়। ১৯৮০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ জনে। এরশাদ সরকারের পতনের সময় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৯৪৩ জন। ১৯৯৬ সালের জুনে কোটিপতি ছিলেন দুই হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ১৬২ জনে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৮৭ জনে। ২০০৮ সালে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারী গ্রাহক ছিলেন ১৯ হাজার ১৬৩ জন।

 












সর্বশেষ সংবাদ
চৌদ্দগ্রামে সুস্থ পাঠক সুস্থ সমাজ শীর্ষক হেলথ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
দেবীদ্বারে সড়ক দূর্ঘটনায় কলেজ ছাত্রের মৃত্যু
অভিশপ্ত সেই রাত ভুলে যেতে চান স্মিথ
পাশের হার-জিপিএ ৫ বেড়েছে কুমিল্লায়
জিপিএ-৫ এ কুমিল্লা বোর্ডের সেরা ২০ স্কুল
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
জিপিএ-৫ এ কুমিল্লা বোর্ডের সেরা ২০ স্কুল
ব্রাহ্মণপাড়ায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
কাউকে হয়রানী করলে ছাড় পাবেন না: এমপি বাহার
সপ্তম ধাপে দেবিদ্বার-বুড়িচংয়ে ইউপি নির্বাচন
পাশের হার-জিপিএ ৫ বেড়েছে কুমিল্লায়
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২