বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি।
একসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি আরব। এর পাশাপাশি ছিল
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান ও কুয়েত।
কাছের দেশ মালয়েশিয়াও একসময় দেশের
অভিবাসী কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। অনিয়মের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। অবৈধভাবে নিয়োগের কারণে মালদ্বীপের শ্রমবাজারও বন্ধ
হয়ে গেছে। ইউরোপের নানা দেশেও জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ হারাতে বসেছি আমরা।
আবার
পুরনো অনেক বাজার নানা কারণে সংকুচিতও হয়ে গেছে। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও কাতারে নিয়মিত কর্মী যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে,
বাংলাদেশ থেকে ১৬৮টি দেশে কর্মী পাঠানো হয়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৬২টি
দেশে নামমাত্র কর্মী যাতায়াত করেন।
আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের বাস্তবতায়
বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা
কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। তাই ভালো ও বেশি আয়ের পেশায়
বাংলাদেশিদের নিয়োগ কম। আবার দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি বাংলাদেশ
গুরুত্ব দিয়ে কখনো ভেবেছে বলেও মনে হয় না। দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে
আরো বেশি রেমিট্যান্স আয় সম্ভব হতে পারে।
কারণ দক্ষ জনশক্তি
স্বাভাবিকভাবেই বেশি আয় করবে। এর জন্য কর্মনিষ্ঠা ও যথার্থ কর্মপরিকল্পনা
দরকার। অদক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করে যা আয় হবে, দক্ষ জনশক্তি তার চেয়েও বেশি
আয় করতে পারবে।
আশার কথা, বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্তের
কথা জানিয়েছে ওমান সরকার। দক্ষ কর্মীর মধ্যে রয়েছেন ডাক্তার, প্রকৌশলী,
নার্স, শিক্ষক ও হিসাবরক্ষক। আপাতত বাংলাদেশ থেকে এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে
কর্মী নেবে দেশটি। গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর আরোপ করা ভিসা
নিষেধাজ্ঞা থেকে নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় ওমান
দূতাবাস শ্রেণিভুক্ত আবেদনকারীদের কাছ থেকে ভিসা আবেদন গ্রহণ করবে এবং
ভিসা ইস্যুর ব্যাপারে রয়াল ওমান পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করবে।
বাংলাদেশের
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। জনশক্তি রপ্তানিতে আমাদের
পিছিয়ে পড়ার একটি বড় কারণ হচ্ছে দক্ষ জনশক্তির অভাব। বাংলাদেশের শ্রমিকরা
তুলনামূলক অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দক্ষতা
অর্জন করতে পারেননি। বাংলাদেশে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো
২০১৮ সালে সম্ভাবনাময় নতুন ৫৩টি দেশের শ্রমবাজার নিয়ে গবেষণা করে। তবে পাঁচ
বছর পরও নতুন কোনো শ্রমবাজার তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
বৈদেশিক
কর্মসংস্থানের দিক থেকে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট
পিছিয়ে আছে। এর একটি প্রধান কারণ দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে আমাদের পিছিয়ে থাকা। এ
ক্ষেত্রে আরো উদ্যোগী হতে হবে। নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করতে হবে। দক্ষ
শ্রমশক্তি রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে। এর জন্য যথার্থ কর্মপরিকল্পনা দরকার।
অভিবাসন
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন সম্ভাবনাময় বাজার ধরতে না পারলে বড় ধরনের ঝুঁকিতে
পড়বে দেশের অভিবাসন খাত। আমাদের শ্রমবাজারের চাহিদার পরিবর্তন ও দক্ষতার
দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। দূতাবাসগুলোকে নতুন শ্রমবাজার খোঁজার দায়িত্ব দিতে
হবে বলে মনে করেন তাঁরা।