মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেছেন, সরকার শিশুদের নিরাপদ, সুরক্ষিত ও উন্নত জীবন গঠনে কাজ করছে। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এবং তারাই দেশ গড়ার নেতৃত্ব দেবে।
তিনি বলেন, এই শিশুরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করবে ও বঙ্গবন্ধুর মতো উদার মানবিক চেতনা নিয়ে বড় হবে। শিশুদের জন্য নিরাপদ, সুরক্ষিত ও উন্নত-সমৃদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এরই মাধ্যমে নিশ্চিত হবে সকল শিশুর অধিকার।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সোমবার (৩ অক্টোবর) ঢাকায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অডিটোরিয়ামে বিশ্ব শিশু দিবস এবং শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০২২ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘গড়বে শিশু সোনার দেশ, ছড়িয়ে দিয়ে আলোর রেশ’।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, শিশুর সামগ্রিক উন্নয়নে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সফলতা অর্জন করেছে। মা ও শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণে ১১ লাখ মা-কে মাতৃত্বকালীন ও কর্মজীবী লাকটেটিং মাদার ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু-যত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩ লাখ ৬০ হাজার শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষাসেবা দেওয়া হচ্ছে। আগামী প্রজন্মকে মেধাবী ও দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে বাস্তবায়িত হচ্ছে আশি হাজার কোটি টাকার শিশুকেন্দ্রিক বাজেট।
ইন্দিরা বলেন, সরকার শিশুদের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় বিভিন্ন জাতীয় শিশু নীতি ২০১১, শিশুর প্রারম্ভিক যত্ন ও বিকাশের সমন্বিত নীতি ২০১৩, শিশু আইন ২০১৩, যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭, বাল্যবিবাহ নিরোধ জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০৩০ আইন, নীতি ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পর্যন্ত জেন্ডার সমতা অর্জিত হয়েছে। দুই কোটি শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে এক কোটি চল্লিশ লাখ কন্যা শিশু।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম এবং ইউনিসেফের রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েট। শিশু একাডেমির মহাপরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
ইউনিসেফের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েট বলেন, আমাদের শিশুর শিক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের শিশু উন্নয়ন কার্যক্রম অত্যন্ত প্রশংসনীয় হিসেবে বিশ্বে বিবেচিত হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, সরকার আগামীর মেধাময় ও আলোকিত শিশু গড়ে তুলতে শিশুবান্ধব বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। গর্ভাবস্থা থেকে শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে ১ কোটি ৩০ লাখ মা ও শিশুকে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
দুই শিশু আদিবা তসনিম আরা খান ও অনিন্দ্য আরণ্যক অনুষ্ঠানে শিশুদের পক্ষে বক্তব্য দেয়। প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বিশ্ব শিশু দিবস এবং শিশু অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। আলোচনা পর্ব শেষে ছিল শিশুদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সিসিমপুর লাইভ শো।
এদিকে, ৪ অক্টোবর জাতীয় কন্যা শিশু দিবস উদযাপন করা হবে। এবছর জাতীয় কন্যা শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সময়ের অঙ্গীকার, কন্যাশিশুর অধিকার’। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের আয়োজনে সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে রয়েছে র?্যালি, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকেল ৩টায় ঢাকায় ইস্কাটনে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সেপ্টেম্বরে সড়কে ঝরেছে ৪৭৬ প্রাণ
সেপ্টেম্বরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪০৭টি। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭৬ জন। এই সময়ে আহত হয়েছেন ৭৯৪ জন।
সোমবার (৩ অক্টোবর) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪০৭টি। নিহত হয়েছেন ৪৭৬ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ৬২ ও শিশু ৭৭ জন। একই সময়ে ৯টি নৌ দুর্ঘটনায় ৭৮ জন নিহত এবং ৩ জন নিখোঁজ আছেন। ১৮২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৬৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ২১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৩ এবং পথচারী নিহত হয়েছেন ১০৪ জন।
এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬২ জন শিক্ষার্থী এবং ১৪ জন শিক্ষক নিহত হন। দুর্ঘটনায় ১৯ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন। আর আহতদের অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন আছেন।