
শেষ লড়াইয়ে জিতেছেন আরফানুল হক রিফাত।
প্রথমবারের মতো কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে দাঁড়িয়ে
বাজিমাত করলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রিফাত। প্রতিদ্বন্ধী স্বতন্ত্র প্রার্থী
দুই বারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র
নির্বাচিত হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১০৫ কেন্দ্রে রিফাত
পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী সাক্কু ভোট পেয়েছেন ৪৯
হাজার ৯৬৭ভোট।
টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে রাত সাড়ে নয়টায় কুমিল্লা
সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বেসরকারিভাবে
ফলাফল ঘোষণা করেন। মোট ভোটের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। এরমধ্যে ভোট
পড়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪। ভোট পড়েছে ৫৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বাতিল ভোটের
পরিমাণ ৩১৯টি।
এদিকে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা পর পরই তা প্রত্যাখ্যান
করেছেন মনিরুল হক সাক্কু। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি ৯৮০ ভোট বেশি
পেয়েছি। কিন্তু আমি ফলাফল ঘোষণা কেন্দ্রে আসার পর দেখলাম একটা হট্টগোল
হয়েছে। তারপর ফলাফল পাল্টে গেল। আমি আইনী প্রক্রিয়ায় যাব।’
নির্বাচনী
ফলাফল অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।
তিনিও বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর শাখার আহ্বায়ক ছিলেন।
তিনিও দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত।
নির্বাচনে অন্য দুই মেয়র
প্রার্থীর মধ্যে কামরুল আহসান বাবুল (স্বতন্ত্র) হরিণ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন
দুই হাজার ৩২৯ ভোট এবং আসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা)
পেয়েছেন তি হাজার ৪০ ভোট।
এর আগে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কোনোরকম ঝামেলা
ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত
শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকে ছিল না
কোনোরকম অভিযোগ-অনুযোগ। শতভাগ ইভিএম-এ সম্পন্ন হওয়া কুমিল্লা সিটি
করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে ভোটর উপস্থিতি ছিল বেশ আশাব্যঞ্জক।
কাজী
হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রথম নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬০
শতাংশ। ভোট শেষে ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে
প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তবে শতভাগ ইভিএমের
এই নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে ধীরগতিতে ভোট হওয়ায় কথা জানা গেলেও নির্বাচনের
পরিবেশ নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন উঠেনি কোনো পক্ষ থেকে।
এবারই প্রথম কুমিল্লা
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবকটি কেন্দ্রে ও ভোট কক্ষে ছিল সিসি ক্যামেরা।
ঢাকায় ইসি সচিবালয় থেকে এবং কুমিল্লায় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে
ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয় এসব ক্যামেরায় ।
সকালের শুরুটা ভালোই
ছিল। নগরে সকাল ৮টার আগেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে জমে উঠছিল ভোটের লাইন, কিন্তু
ভোট শুরুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে ভোটের
লাইনে দাঁড়ানো ভোটাররা আশ্রয় নেন কেন্দ্রের বারান্দায়। তবে অনেক জায়গায়
বৃষ্টির মধ্যে ভোটারদেরকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আবার কেউ কেউ ভোট
না দিয়ে ফিরেও গেছেন।
তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল ১১টার পর থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে আবারও ভোটারের লাইন দেখা যায়। ভিড় বাড়তে থাকে।
দুপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানিয়েছিলেন, তার ধারণা ওই সময় পর্যন্ত ২০ শতাংশ ভোট পড়ে থাকতে পারে।
দুপুরে
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন নির্বাচনী কেন্দ্র ঘুরে দেখেন ইসি সচিব
হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করছি, নট
লেস দ্যান ৬০ শতাংশ । কারণ, আমরা ভোট দেওয়ার জন্য পরিবেশটা সৃষ্টি করেছি।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, কুমিল্লা ‘খুব ভালো নির্বাচনের একটি উদাহরণ’ হবে।
সকাল
১০টার দিকে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে রিটার্নিং
কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেশ কয়েকটি কেন্দ্র
পরিদর্শন করেছি, সবাই সুন্দরভাবে ভোট দিচ্ছেন। বৃষ্টি আসার কারণে ভোটার
উপস্থিতি একটু কম আছে। তবে ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসতে পারেন,
সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন
পর্যবেক্ষণে করা ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবেদ আলী
চল্লিশটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের চোখে কোনো
বিশৃঙ্খলা বা গণ্ডগোল ধরা পড়েনি। ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধাদানের অভিযোগে
আমরা পাইনি।
তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে
প্রমাণ হয়েছে, ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। পাঁচটি সংগঠন চল্লিশটি
ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে। দুপুর পর্যন্ত ৩০-৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে
ধারণা পাওয়া গেছে।’
আবেদ আলী আরও বলেন, ‘বোঝা যাচ্ছে, ভোটের প্রতি
ভোটারদের আগ্রহ বেড়েছে। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়। ভোটাররা ছিলেন খুবই
আন্তরিক। তবে ইভিএমে ভোটগ্রহণে ধীর গতির অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন
কেন্দ্রে। এতে ভোটাররা কষ্ট পাচ্ছেন।’
সকালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া
কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নৌকার প্রার্থী রিফাত
নিজের জয়ের ব্যাপারে ‘শতভাগ আশাবাদ’ ব্যক্ত করেন। এ সময় ভোটের পরিবেশ নিয়ে
সন্তোষ প্রকাশ করেন।
একই কেন্দ্রে ভোট দেন ঘোড়া মার্কার প্রার্থী নিজাম
উদ্দিন কায়সার। ভোট দিয়ে বের হয়ে তিনি বলেন, ইভিএমে ভোট প্রয়োগে ‘বয়স্কদের
জন্য সমস্যা’ হয় এবং ভোটের গতি ‘স্লথ’ হয়।
হোচ্চা মিয়া উচ্চবিদ্যালয়
কেন্দ্রে নিজের ভোট প্রয়োগ শেষে টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধীতা করা
স্বতন্ত্রপার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘সবকিছু ঠিক আছে। শুধু ইভিএম
পদ্ধতিতে একটু ত্রুটি হচ্ছে, এইডাই কথা, অন্য কিছু না।’
কুমিল্লা সিটি
করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের পাঁচ প্রার্থী ছিলেন পাঁচজন। এরা হলেন নৌকা
প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত, স্বতন্ত্র প্রার্থী গত
দুইবারের মেয়র বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু, স্বতন্ত্র
প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার, স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল এবং
ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম। এরে মধ্যে শুরু থেকেই এই
নির্বাচনে মেয়র পদে প্রথম তিনজন আলোচনায় ছিলেন।
এ ছাড়া কুমিল্লা সিটি
করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন এবং সংরক্ষিত
কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নতুন নির্বাচন
কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার চার মাসের মধ্যে বুধবার (১৫ জুন) কুমিল্লা সিটি
করপোরেশনের সঙ্গে দেশের আরও পাঁচটি পৌরসভা, ১৩০টি ইউপি ও একটি উপজেলায়
নির্বাচন হয়েছে। তবে সারাদেশে চোখ ছিল কুমিল্লাতেই।