
এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
দেবীদ্বার
থানায় ডেকে নিয়ে পুলিশের সহযোগীতায় এক কাঠ ব্যবসায়ির কাছ থেকে ভীতি
প্রদর্শনে ৩শত টাকার একটি খালি নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায়;
অত:পর ৪লক্ষ টাকা দাবী; ওই ষ্ট্যাম্প উদ্ধারে এক এসআই ও এক কাঠ ব্যবসায়িকে
অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভূক্তভোগী অধিক মজুমদার নামে এক
কাঠ মিস্ত্রি।
মঙ্গলবার দুপুরে দেবীদ্বার পৌর এলাকার পশ্চিম ফতেহাবাদ
গ্রামের কর্মকার বাড়ির মৃত বিষম্বর মজুমদারের পুত্র কাঠ মিস্ত্রি অধিক
মজুমদার ‘কুমিল্লার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট শিউলি রহমান তিন্নীর
আদালতে ফৌজদারী কার্য বিধি আইনের ৯৮ ধারায় ওই মামলা দায়ের করেন।
মামলায়
অভিযুক্তরা হলেন, দেবীদ্বার উপজেলার বুড়িরপাড় গ্রামের মনিরুজ্জামান কালুর
পুত্র মোঃ সাজ্জাদুর রহমান বিপুল(৩৫)। বর্তমান গোমতী আবাসীক এলাকার মাটিয়া
মসজিদ সংলগ্ন ‘সোনালী টিম্বার্সের’ স্বত্বাধিকার ও দেবীদ্বার থানার
উপ-পরিদর্শক(এসআই) মোঃ মাহববুর রহমান খাদিম।
মামলার বাদী অধিক মজুমদার
অভিযোগ করেন, গত ৭মে একটি অজ্ঞাত ফোন থেকে ৩ টি কল আসে। পরে ফোন বেক করে
জানতে পারি দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ মাহববুর রহমান খাদিম
ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে জরুরী থানায় আসতে বলেন, আমি না আসলে আমাকে এরেস্ট
করে নিয়ে যাওয়াসহ নানাভাবে হুমকী প্রদর্শন করেন। আমি ৮ মে সন্ধ্যায় থানায়
যাই। থানায় যাওয়ার পর দারোগার সামনে কাঠ ব্যবসায়ি সাজ্জাদুর রহমান বিপুলকে
দেখতে পাই। আমি কিছু বলার আগেই দারোগা সাহেব আমার হাত থেকে মোবাইল সেট নিয়ে
যায়, তখন তিনি আমাকে সাজ্জাদের পাওনা ৪ লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে বলেন। আমি
দারোগাকে অনেক অনুরোধ করে বলি, সাজ্জাদ আমার কাছে কোন টাকা পাবেনা। তার
থেকে কাঠ বাকী নিলে অতিরিক্তি দাম আদায় করে তাই, কাঠের প্রয়োজন হলে নগদ
টাকায় কাঠ কিনে কাজ করি। তার থেকে কাঠ না কেনায় বিভিন্ন সময় আমাকে হুমকি
দিত। আমি দরিদ্র কাঠ মিস্ত্রী। পৈত্রিক এক শতাংশ জায়গায় আমার থাকার ঘর, আর
কোন সম্পদ নেই। স্ত্রী অনিতা রাণী মজুমদার, ২ মেয়ে এক ছেলের সংসার। বড় মেয়ে
জোনাকী রানী মজুমদারের বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়ে শংকুরি রানী মজুমদার
মরিচাকান্দা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আগামী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। এক
মাত্র ছেলে অপূর্ব চন্দ্র মজুমদার ফতেহাবাদ মন্দীরে শিশু শ্রেণীতে পড়ে।
সংসারের ভরন পোষন আমার উপার্জনই ভরসা, গ্রামে ‘ফতেহাবাদ জোনাকী ফার্নিচার
মার্ট’র স্বত্বাধিকার আমি। আমি কোন বাকীতে কাঠ কিনিনা। নগদে কাঠ কেনায়
শাস্রয় পাই। আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র। তখন দারোগা টাকার অংক বসানো
অনেকগুলো খাতা এবং রসিদ দেখিয়ে বলেন এ টাকা (৪লক্ষ) সাজ্জাদ তোমার কাছে
পায়। টাকা পরিশোধ না করলে, মামলা দায়ের পূর্বক তোমাকে রাতে হাজতে রেখে
সকালে কোর্টে চালান করা হবে। জজ থেকে জামিনে আসতেও তোমার এক লক্ষ টাকা খরচ
হবে। অনেক কান্নাকাটি করেও মন গলাতে পারিনাই। আমাকে টাকা পরিশোধের জন্য
বিভিন্ন ভাবে হুমকী ও ভিতি প্রদর্শনে তিনশত টাকার খালি নন জুডিশিয়াল
ষ্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর রাখেন এবং আগামী ৪ মাসে ৪ লক্ষ টাকা পরিশোধ
করার শর্তে আমাকে রাতে ছেড়ে দেন।
আজ মঙ্গলবার আদালতে আমার থেকে জোরপূর্বক রাখা তিনশত টাকার খালি নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প উদ্ধারে আদালতের স্মরনাপন্ন হয়েছি।
অভিযুক্ত
সাজ্জাদুর রহমান বিপুল জানান, অধিকের সাথে আমার লেনদেন ছিল সেটা শেষ
হয়েগেছে। সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা তার কাছে পাব, দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক
(এসআই) মোঃ মাহববুর রহমান খাদিম নিজ দায়িত্বে ওই ঘটনায় থানায় বসে ২ লক্ষ
টাকা রায় করেছেন। যা আগামী ৪ মাসে ২ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে দেবে।
ষ্ট্যাম্পটি দারোগা সাহেবের নিকট সংরক্ষিত আছে।
এ ব্যপারে অপর অভিযুক্ত
দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ মাহববুর রহমান খাদিম জানান, ওরা
দু’পক্ষই পাওনা দেনার হিসেব করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সমাধান করেছেন। পরে আমার
কাছে ষ্ট্যম্পটি জমা দিয়ে গেছে।
এ ব্যপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার
ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আরিফুর রহমান জানান, আমার এসআইয়ের বিরুদ্ধে অধিক
মজুমদারের কাছ থেকে জোরপূর্বক খালি ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে ৪ লক্ষ টাকা
দাবী করেছে, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। আদালতে মামলা হয়েছে তাও জানিনা।
তাছাড়া দেবীদ্বারের ৫ লক্ষ লোকের নাম মনে রাখা বা খোঁজ নেয়া আমার পক্ষে
সম্ভব নয়। আমি এ ব্যপারে কিছুই জানিনা।