
গত
মঙ্গলবার বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) হোটেল,
মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউস উন্নয়নবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে পর্যটন
খাতে সেবা কর ও আয়কর কমানোর যে দাবি করা হয়েছে, তা যৌক্তিক। রাজধানীর
মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা
জানান, করোনা এ খাতের ব্যবসাকে প্রায় ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমদানি
করা সরঞ্জামের ওপর শুল্ক হ্রাস করা হলে ভাড়াসহ অন্যান্য সেবার মাশুল কমানো
সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, বিদেশি পর্যটকদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা
নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় যেসব পণ্য ও সরঞ্জাম আমদানি করতে হয়, সেগুলোর
বিপরীতে শুল্ক দিতে হয় হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউসের মালিকদের।
করোনাকালে গত দুই বছরে পর্যটন খাতের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে অনেক
সময় লাগবে। করোনা মহামারির অভিঘাত ঠেকাতে সরকার যে লক্ষাধিক কোটি টাকার
প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল, পর্যটন খাত তার সামান্যই পেয়েছে। ফলে দেশের
সম্ভাবনাময় এ খাত নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অনেক উদ্যোক্তা পথে
বসেছেন। এ অবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত কর চাপিয়ে দেওয়া হলে পর্যটনশিল্প আরও বেশি
সংকটে পড়বে।
বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করার মতো অনেক দর্শনীয় স্থান আছে
বাংলাদেশে। একসময় অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তথা হরতাল-অবরোধের কারণে
বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল। ২০১৬ সালে হোলি
আর্টিজান ট্র্যাজেডির কারণেও বিদেশিরা এখানে আসতে নিরুৎসাহিত ছিলেন। এরপর
পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চ থেকে শুরু হয় করোনা
মহামারি; যা কেবল বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের পর্যটনশিল্পকে মারাত্মকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
এ অবস্থায় দেশের পর্যটনশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে হলে
সরকারকে বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, এফবিসিসিআইয়ের সুপারিশ অনুযায়ী
পর্যটনশিল্পে ব্যবহৃত পণ্যের ওপর শুল্ক ও সেবা কর কমাতে হবে। বর্তমানে এ
খাতে আয়ের ওপর যে ৩৭ শতাংশ কর ধার্য করা আছে, সেটি যৌক্তিক স্তরে নিয়ে আসতে
হবে। সরকার বেশি করারোপ করে রাজস্ব বাড়াতে চায়। কিন্তু কর কমালে পর্যটন
ব্যয় কমে যাবে, পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে এবং কর না বাড়িয়েও রাজস্ব বেশি
পাবে।
দ্বিতীয়ত, বিদেশি পর্যটকদের বিনোদন ও অবকাশযাপনের সুযোগ-সুবিধা
অবারিত করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় নীতিগত ঘোষণা দিলেও বাস্তবে
তেমন কাজ হয়নি। প্রয়োজনে পর্যটক এলাকা আলাদা করতে হবে। সেখানে অবস্থানরত
বিদেশি অতিথিদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, যা তাঁরা অন্যান্য
দেশেও পেয়ে থাকেন। বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে
ফ্লাইট ছাড়ার আগের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষা করানোর বাধ্যবাধকতা শিথিল
ও ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার দাবিও যৌক্তিক।
করোনার প্রকোপ কমে গেছে। ফলে
পর্যায়ক্রমে করোনার বিধিনিষেধ শিথিল করতে হবে। নানা হতাশার মধ্যে আশার খবর
হলো দেশীয় পর্যটন বেড়েছে। বছরে এক কোটি মানুষ ভ্রমণ করেন। এ ক্ষেত্রে
সেবাদাতাদেরও আরেকটু উদার হতে হবে। গত ঈদের মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের
কাছ থেকে যে হারে হোটেল ভাড়া ও খাবারের দাম নেওয়া হয়েছে, তা কোনোভাবে
যৌক্তিক নয়। দুই বছরের ক্ষতি এক সপ্তাহে পুষিয়ে নেওয়ার বাসনাও ত্যাগ করতে
হবে তাদের।