ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বিশ্বে করোনা ভ্যাকসিনের অসম বণ্টন
Published : Monday, 20 September, 2021 at 12:00 AM
বিশ্বে করোনা ভ্যাকসিনের অসম বণ্টনমঈনউদ্দিন মুনশী ||
করোনা ভ্যাকসিনের বেশির ভাগ বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। আগাম ক্রয় বাবদ চুক্তিভিত্তিক দায়বদ্ধতার কারণে বিশ্বের ১০টি দেশ (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, ইতালি, চীন, ভারত, ব্রাজিল ও তুর্কি) ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী কম্পানিগুলোর কাছ থেকে করোনা ভ্যাকসিনের তিন-চতুর্থাংশ পরিমাণ ডোজের অধিকারী হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে এই যে অনেক দরিদ্র দেশের নাগরিক ভ্যাকসিন না পাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে এবং সেসব স্থানে রোগ বিস্তার ও মৃত্যু ঊর্ধ্বগতিতে চলছে।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ছয়টি দেশে (তিউনিশিয়া, জর্জিয়া, বোতসওয়ানা, নামিবিয়া, ইসওয়াতিনি ও দক্ষিণ আফ্রিকা) করোনা রোগজনিত মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি এবং ওই সব দেশের ১০ শতাংশেরও কম মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন বণ্টনে সমতা আনার বিষয়ে কথা উঠেছে; কিন্তু ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত জনগণকে বুস্টার ডোজ, অর্থাৎ তৃতীয় ডোজ দেওয়া শুরু করার ফলে এই প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে যেসব দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন নেই, সেসব দেশে করোনা রোগ বিস্তার এবং মৃত্যুহারের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। এখনই যেটি প্রয়োজন তা হচ্ছে, ধনী দেশগুলোতে বুস্টার ডোজ প্রগ্রাম বন্ধ করে ওই ভ্যাকসিনগুলো সেসব দেশে পাঠানো উচিত যাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন নেই এবং যেখানে অরক্ষিত অবস্থায় মানুষ মারা যাচ্ছে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে ধনী দেশগুলোর বেশির ভাগ মানুষ দুটি ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে এবং সেখানে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুহার কমেছে। এটি পরীক্ষিত যে করোনা ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ সব ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে। বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনের এই অসম বণ্টনের পরিপ্রেক্ষিতে বুস্টার ডোজ প্রগ্রাম অনৈতিক, যেখানে কোটি কোটি মানুষ কোনো ভ্যাকসিন না পাওয়ার ফলে প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করছে।
এটি অনুধাবনযোগ্য যে একটি দেশ তার জনগণকেই প্রথমে ভ্যাকসিন দেবে। এটি জানা গেছে যে অনেক ধনী দেশের কিছু নাগরিক ভ্যাকসিন গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে এবং কোনো কোনো ভ্যাকসিন সেসব দেশে অনুমোদিত হয়নি। তাই সব অব্যবহৃত এবং উদ্বৃত্ত ভ্যাকসিন দরিদ্র দেশগুলোতে পাঠানো উচিত, যাতে সেখানে রোগ সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার কমানো সম্ভব হয়।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনাজনিত মৃত্যুর ৯৯ শতাংশ ঘটেছে যারা ভ্যাকসিন নেয়নি তাদের মধ্যে, সে ক্ষেত্রে করোনা নিয়ন্ত্রণে বুস্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তা লঘু হয়ে গেছে। করোনার বুস্টার ডোজ তখনই যৌক্তিক হবে যদি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা একেবারেই কমে যায়। এমনকি সে ক্ষেত্রেও বিশ্বের যে জনগণ এখনো একটি ভ্যাকসিনও পায়নি, তাদের প্রয়োজন বড় হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান বিশ্বে যারা এরই মধ্যে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ পেয়েছে, তাদের ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ দেওয়া বর্তমান সময়ে অপচয়। কারণ সেটি দিয়ে দরিদ্র দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পৃথিবীর সব দেশের জনগণকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন যে ভ্যাকসিনহীন  দেশগুলোতে এই রোগ সংক্রমণ যত বৃদ্ধি পেতে থাকবে, ততই নতুন নতুন ভেরিয়েন্টের উদ্ভব হবে এবং তা অচিরেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। তাই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ ক্যাম্পেইন বন্ধ করে ওই ভ্যাকসিনগুলো জীবন রক্ষার্থে  দরিদ্র দেশগুলোতে পাঠানো প্রয়োজন, যাতে রোগ সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হয়।
বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত সব ভ্যাকসিনই এযাবৎ উদ্ভূত সব ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে মোটামুটি কার্যকর। এই মহামারি যেহেতু বিশ্বের সব দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আঘাত হেনেছে, তাই আর কালক্ষেপণ না করে সব দেশের মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আর সে জন্য প্রয়োজন ভ্যাকসিনের সমবণ্টন।