
বিশেষ
প্রতিনিধি ॥ ‘....কোটি কণ্ঠের ধ্বনিতে শোনালে জয় বাংলা ও স্বাধীন দেশ/ এ
মাটির ঘ্রাণ, এ মাটির প্রাণ এ মাটি-শোভার নাহিক শেষ/ তাইতো তোমার ও সারা
জীবনের/ দানের প্রাণের নাহিক ক্ষয়/ মানুষের হাতে স্বজনের হাতে/ মরিয়া হয়েছ
মৃত্যুঞ্জয়!’
মহীয়সী নারী প্রয়াত কবি সুফিয়া কামাল তাঁর ‘মুজিব
মৃত্যুঞ্জয়’ নামক কবিতায় এমনিভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন স্বাধীনতার মহানায়ক,
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বঙ্গবন্ধু
মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা। বাঙালীর অমোঘ নেতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকেই ঘর ছেড়েছিল মানুষ। মৃত্যুর থাবায় বুক মেলে দেয়
কোটি জনতা। শুরু করে স্বাধীনতার লড়াই। তারপর টানা ৯ মাস সেই প্রাণপ্রিয়
নেতার নির্দেশেই চলে মুক্তির সশস্ত্র যুদ্ধ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে একদিন
স্বাধীন হয় দেশ। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় আরও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র-
‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। যার স্রষ্টা এক চিরভাস্বর মুখ জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে
তুলছেন তাঁর আরাধ্য স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু পরাজিত শত্রুরা চুপ করে বসে ছিল
না। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু এটা জানতেন। যে বাঙালীর জন্য
তাঁর জীবন-যৌবন উৎসর্গ করেছেন, ১৪টি বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে
কাটিয়েছেন, সেই বাঙালীরা তাঁকে হত্যা করতে পারবে এটা কোনদিনই বিশ্বাস করতে
চাননি জাতির পিতা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেক
বন্ধু রাষ্ট্রের প্রধানরা বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু জবাবে
বঙ্গবন্ধু সবাইকে শুধু একটা কথাই বলেছেন- ‘চিন্তা করবেন না, কোন বাঙালী
আমার গায়ে হাত তুলবে না। যদি তুলে, চাদর ঘাড়ে নিয়ে গ্রামে চলে যাব। ক্ষমতা
আঁকড়ে থাকার লোক শেখ মুজিব না।’ কী অসম্ভব বিশ্বাস করতেন বঙ্গবন্ধু দেশের
মানুষকে। কিন্তু বেইমান-হায়েনার দল জাতির পিতার সেই বিশ্বাসের ওপরই
কুঠারাঘাত করেছে।
সেই কালজয়ী মানুষকেই একদিন, এই আগস্টেই নৃশংসভাবে
হত্যা করে ঘাতকরা। তাঁর রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার পবিত্র মাটি। বাঙালীর
ইতিহাসে যোগ হয় এক কলঙ্কময় অধ্যায়। বাঙালী কাঁদে। কাঁদায় বিশ্ববাসীকে।
বুকের খুনে বঙ্গবন্ধু রচনা করেন ভালবাসা ও শ্রদ্ধার এক কালজয়ী ইতিহাস।
১৯৭৫
সালের এই মাসেই বাঙালী হারিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৫ আগস্ট কালরাতে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা
করেনি, একাত্তরের পরাজিত ঘৃণ্য নরপশুরা একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর
সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল,
শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালকে।
জঘন্যতম এ হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের,
ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক
মনি, কর্নেল জামিলসহ ১৮ জন সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা।
যে বিশাল হৃদয়ের
মানুষকে কারাগারে বিশাল হৃদয়ের মানুষকে কারাগারে বন্দী রেখেও দেশে স্পর্শ
করার সাহস দেখাতে পারেনি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী, অথচ স্বাধীন বাংলার
মাটিতেই তাঁকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই
ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা আজও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। জাতির পিতাকে হারানোর সেই
দুঃসহ স্মৃতি ৪৬টি বছর বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁর সুযোগ্য উত্তরাধিকারিনী
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।
বাঙালী
জাতির বেদনাবিধুর শোকের মাস আগস্টের আজ নবম দিন। পুরো দেশই যেন শোকে
মুহ্যমান। শোকের নানা অনুষ্ঠানে কৃতজ্ঞ জাতি শ্রদ্ধানবত চিত্তে স্মরণ করছেন
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। শোকের মাস বুকে কালোব্যাজ ধারণ করে কালো পতাকা
উত্তোলন এবং নানা অনুষ্ঠানে তীব্র ঘৃণা ও ধিক্কার জানাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর খুনী
নরপিশাচ একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের। দিন যতই এগুচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পলাতক
খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর এবং যুদ্ধাপরাধীসহ বঙ্গবন্ধুর
খুনীদের মদদদাতাদেরও বিচারের দাবি ততই তীব্র হচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে
সাঁটানো পোস্টার, প্লাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুনেও শোভা পাচ্ছে এই একই দাবি।