ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
লাকসামে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে আনন্দিত ভূমিহীনরা
মোঃ হুমায়ুন কবির মানিক
Published : Friday, 6 August, 2021 at 6:44 PM
লাকসামে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে আনন্দিত ভূমিহীনরাকুমিল্লার লাকসামে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীনদের জন্য সরকারের তৈরি করা ঘরে পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে দুর্ভোগের ইতি ঘটেছে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের। লাকসাম উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় দফায় পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, পানি ও জমির দলিলসহ নবনির্মিত আধা পাকা ঘর পেয়েছে ৫৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। এছাড়াও ব্যক্তিগত অর্থায়নে নির্মিত ১২টি সহ নতুন ঘর পেয়েছে ৭০টি পরিবার। স্থায়ী ভাবে মাথার গোঁজার ঠাঁই পেয়ে তারা আনন্দিত।
দেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলার তুলনায় লাকসামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে এখন পর্যন্ত কোনো অনিয়ম দেখা যায়নি। এমনকি ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত স্থান নির্ধারণে বেশ রুচির পরিচয় দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সড়কের পাশ ঘেরা এসব ঘরে বসবাস করে উপকারভোগীরা আনন্দিত। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, আধা পাকা ঘরগুলোয় ব্যবহার করা হয়েছে লাল রঙের টিন। দুই কক্ষবিশিষ্ট এসব বাড়িতে রয়েছে একটি রান্নাঘর, শৌচাগার ও স্টোর রুম। উপজেলার মুদাফরগঞ্জ-চিকোনিয়া সড়কের পাশে নির্মিত ঘরগুলো পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বরাদ্দপ্রাপ্ত লোকজন নিজেদের মতো করে ঘর সাজিয়ে নিয়েছেন। এদের মধ্যে জয়া সিকদার হিজড়ার নামে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জয়া হিজড়ার ঘরে গিয়ে দেখা গেল, বারান্দার মধ্যে দুইজন বসে বসে রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর গুনগুন করে গান গাইছেন।
নতুন ঘর পেয়ে আবেগ আপ্লুত জয়া সিকদার বলেন, ‘আমাদের একটু জমি হবে, নতুন একটা ঘর হবে, এই কথা স্বপ্নেও ভাবিনি। এ ঘর পাওয়ার আগে আমরা বাজারে ভাড়া টিনের ঘরে থাকতাম। তখন আমাদের কোন মর্যাদা ছিল না, নিরাপত্তা ছিল না। সবাই আমাদের অবহেলা করতো, অসম্মানের চোখে দেখতো। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের সঙ্গে আমরা মানুষ হিসেবে মর্যাদাও ফিরে পেয়েছি। এখন সবাই আমাদের মূল্যায়ন করে। বর্তমানে আমি জয়া হিজড়া, রোমানা হিজড়া ও জুই হিজড়া এখানে থাকি।
নরপাটি গুচ্ছগ্রামের একজন উপকারভোগী যোগীপাড়ার মৃত জাফর মিয়ার স্ত্রী আমরুজ বেগম ৮ শতক জায়গা ও আধা পাকা ঘর পেয়েছেন। অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমার জায়গা-জমি ছিল না। ভাড়া জায়গায়  থাকতাম। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। এখন আমাদের মা জননী হাসিনা জায়গা দিয়েছে, ঘর দিয়েছে, আমি তাতে অনেক খুশি। এখন নিজের একটা ঠিকানা পেয়েছি।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দেবেশ চন্দ্র দাসের দেয়া তথ্য মতে, মুজিব শতবর্ষের উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার হিসাবে লাকসামে জমির দলিলসহ ঘর পেয়েছে ৫৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। এর মধ্যে নরপাটি গুচ্ছগ্রামে ২৪টি, কৃষ্ণপুর গুচ্ছগ্রামে ১৪টি, চিকোনিয়া গ্রামে ৫টি,  কৈত্রা গ্রামে ৫টি ও কাগৈয়া গুচ্ছ গ্রামে ৭টি পরিবার। এছাড়াও ব্যক্তিগত অর্থায়নে এলজিআরডি মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপির ৫টি, সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিকের ৫টি, সমাজ সেবক নজরুল ইসলামের ১ টি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির  ১টি সহ ১২টি  ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি সব মিলিয়ে মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে ৭০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমির দলিল ও নতুন ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম সাইফুল আলম বলেন,  ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এই ঘর নির্মাণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। খাস জায়গা নির্বাচন ও ভূমিহীন উপকারভোগী নির্বাচনে সকল জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপক্রমে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ঘরের নির্মাণ কাজ অনেক ভালো হয়েছে, নতুন ঘর পেয়ে উপকারভোগীরা অনেক খুশি। তারই অংশ হিসাবে উপজেলায় আরো ৩৪ জন তালিকাভুক্ত ভূমিহীন রয়েছে। এদের পুর্নবাসন করতে পারলে লাকসামকে ভূমিহীন মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা যাবে।’