ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কাজী মাহতাব সুমনের সাক্ষাৎকার
জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা
Published : Monday, 14 June, 2021 at 12:00 AM, Update: 14.06.2021 1:51:15 AM
 জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতাসোহানা রাকা ।।

জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা
কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
কবিতা ও শব্দশিল্পের উচ্চারণের েেত্র কিংবদন্তিতুল্য হয়ে উঠেছেন কুমিলার কৃতি সন্তান কাজী মাহতাব সুমন। এপার ওপার দুই বাংলায় সমানভাবে সমাদৃত জনপ্রিয় আবৃত্তিশিল্পী তিনি। তিন দশক ধরে আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে এই পথচলা তার । বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে হাইগ্রেড তালিকাভুক্ত এই আবৃত্তিশিল্পী অর্জন করেছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমী সম্মাননা -২০১৩, প্রান্তিক অঞ্চলে আবৃত্তিচর্চার বিকাশে অবদানের জন্য পেয়েছেন চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী ইলিশ উৎসব সম্মাননা-২০১৬ এবং উর্বশী আবৃত্তিপদক,সিলেট । দেশের বাইরে অর্জন করেছেন ২০০৫ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকার প্রবর্তিত ভারতীয় সংবিধান প্রণেতা ডঃ বি আর আম্বেদকর পদক , ২০০৩ এ পেয়েছেন ত্রিপুরা নজরুল একাডেমী সম্মাননা। কুমিলা অঞ্চলের বেশিরভাগ আবৃত্তি সংগঠনগুলোই তার পরিচর্চায়। শুধু কুমিলায় নয় পুরো দেশেই তিনি প্রশিক হিসেবে সমাদৃত। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ও আর্টিস্টা একাডেমী অফ ফাইন আর্ট ঢাকার প্রশিক এই গুণী শিল্পী তার কথা ও কাজ দিয়ে নিজেকে করে চলেছেন বরণীয়। বর্তমান প্রজন্মের আবৃত্তি চর্চায়  আগ্রহীদের অনেকেই ভালবেসেশ্রদ্ধায় তাকে গুরু বা মেন্টর বলে মানে। আমরা কথা বলেছিলাম তার সাথে বৃষ্টিস্নাত বিকেলে কফির কাপের আড্ডায়।
 জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা
# কেমন আছেন?
##  জীবন আমার কাছে মূহুর্তের উদযাপন। এই মুহুর্তে বেঁচে আছি পরিপূর্ণ ভাবে ফ্রি অক্সিজেন নিচ্ছি! তাই কৃতজ্ঞতা জানাই সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার কাছে দমে দমে, যিনি এই মনূষ্য জন্ম দান করেছেন।

# এই অতিমারি করোনা কালীন সময়ে সময় কাটাচ্ছেন কিভাবে???
## করোনা কাল উদ্বেগ দুশ্চিন্তা নিকটজনের মৃত্যু সংবাদ বেদনা নিয়ে কাটছে! এটা বাস্তব। তবে, নিউটনের তৃতীয় সূত্রের মতো ক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় জীবনযাপনের অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। ভার্চুয়াল যুগে বই পড়াটা কমে গিয়েছিল। এখন নিয়মিত বই পড়ছি, সকালে ঘুম থেকে উঠছি, নিয়মিত যোগব্যায়াম আসন প্রাণায়াম অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। পরিবারকে অনেক সময় দিচ্ছি... এইতো কি যেন বলে নিউ নরমাল লাইফস্টাইল! হা হা হা!!

# এ সময়ে সুস্থ থাকার জন্য আপনি নিজে কেমন ধরনের জীবন ব্যবস্থা অনুসরণ করছেন?
## আসলে তিন দশকের বেশি সময় ধরে নিয়মিত আবৃত্তি চর্চা করতে গিয়ে দমের সাধনা বা শ্বাস প্রশ্বাসের উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করার একটা চর্চা তো ছিলই। আমার আবৃত্তি কাশে আমি সবসময় অক্সিজেন সরবরাহ বিষয়টি শিার্থীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার জন্য চেষ্টা করি। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা পানিতে গোসল করা , গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে পান করা, গরমজলে লবণ দিয়ে গার্গেল করা, গরমজলের ভাপ নেয়া নাকে মুখে ইত্যাদি আমি নিজের কন্ঠ, শ্বাসতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র নিরোগ রাখার জন্য অনেক দিন ধরেই অভ্যাস করি। তো, করোনা অতিমারি সময়ে এগুলো আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

# আপনার জীবনে সাথে যোগ ব্যায়ামের এই সংযোগ কবে কিভাবে হল?
##  আমার কিছু বিষয় অনেকেই পাগলামী বা অনর্থক মনে করতে পারেন, এই যেমন ঝুম বৃষ্টিতে শরীর মেলে ধরা, পথচলতি হঠাৎ থেমে গিয়ে অচেনা কোনো গাছ বা ফুলের সাথে একাত্ম হওয়া, পূর্ণ চাঁদের আলোয় নির্ঘুম হেঁটে যাওয়া চন্দ্রাহত বা কি যেন বলে মনোবিজ্ঞানী - ল্যুনাটিক! আগে বুঝতে পারিনি এখন বুঝতে পারি এই সব আমার সৃষ্টিজগতের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা। যোগব্যায়াম নিজের শরীর মন কে পরম অস্তিত্বের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্যে সম করে তুলে। মুলতঃ আবৃত্তি করতে করতেই হয়তো আমার মানসিক বোধের একটা বিশেষ অবস্থান আমাকে নিয়মিত যোগাভ্যাস অনুপ্রাণিত করেছে।
# আবৃত্তি বা এই কণ্ঠশিল্প নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ ভাবনা কি?
## শাস্ত্রে আছে,  "আবৃত্তি সর্ব শাস্ত্রাণাং বোধাদপি গরীয়সী।" অর্থাৎ আবৃত্তি সব শাস্ত্রের বোধের চেয়েও গৌরবের। তবে শিল্প চর্চার এই প্রাচীনতম মাধ্যমটিকে স্বমহিমায় আমরা কি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি? আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আছে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আবৃত্তি শিা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সচেষ্ট থাকা। গুরুমুখী এই কলাটির একটি ঘরাণা বা গুরু পরম্পরায় চর্চার মাধ্যমে দায়বদ্ধতা তৈরি করা।

# কুমিলা অঞ্চলের আবৃত্তি নিয়ে আপনার কি ভাবনা?
## কুমিলায় সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চার ইতিহাস তিন দশকের কমবেশি সময়ের। শুধুমাত্র আবৃত্তি নিয়ে কাজ করে এখন পর্যন্ত সংগঠন চর্চায় থাকা কুমিলার প্রথম আবৃত্তি সংগঠন আবৃত্তি সংসদ, কুমিলা এ বছর তিন দশকে পদার্পণ করবে। এটা এই হিসেবে বৃহত্তর কুমিলা অঞ্চলের বয়োজ্যেষ্ঠ সংগঠন। প্রতিশ্রুতি, উষষি, কুমিলা আবৃত্তি মন্চ, শাওনিক চাঁদপুর সমসাময়িক এরকম আরো দুয়েকটি অধুনালুপ্ত বা নিষ্ক্রিয় সংগঠন আবৃত্তি নিয়ে কাজ করেছে। বর্তমান সময়ে কুমিলা চাঁদপুর নোয়াখালী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলায় তিরিশটির বেশি আবৃত্তি সংগঠন নিয়মিত অনিয়মিত সক্রিয় আছে। আমি এদের বেশিরভাগ সংগঠনের প্রশিণ কর্মশালার প্রশিণের সাথে যুক্ত। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে সরকারের নজরুল ইনস্টিটিউটের আবৃত্তি প্রশিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আগামী প্রজন্মকে তৈরি করা, প্রজন্ম ভাবনার সাথে যুক্ত থেকে অভিজ্ঞতার বিনিময়ে এই শিল্পের বিকাশে নিজেকে শেষ পর্যন্ত কর্মম রাখা.. এটুকুই আপাতত।

# আবত্তিচর্চায় সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা কতটুকু?
# # আমরা যখন সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চা শুরু করেছিলাম তিন দশক আগে তখন সরকারি সুযোগ-সুবিধা কিছুই ছিলো না! রাষ্ট্রিয় কোনো মাধ্যমেই শিল্পকলা হিসেবে আবৃত্তি তখন স্বীকৃত নয়! সে অবস্থার এখন বেশ পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে সঙ্গীত নৃত্য নাটকের পাশাপাশি আবৃত্তি বিভাগ চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রতি আবৃত্তিশিল্পীদের অডিশন গ্রেডেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক আর্থিক অনুদান ও পাচ্ছে । শুধুমাত্র কুমিলা জেলাতেই পাঁচ ছয়টি আবৃত্তি সংগঠন এই অনুদান পাচ্ছে। অতি সম্প্রতি সরকারের সহায়তায় দেশের ৬৪ জেলায় মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের ব্যবস্থাপনায় আবৃত্তি অনুষ্ঠান হয়েছে।
 
# এখন অনেকেই তাদের সখকে পেশায় পরিণত করছে, করতে চায়। এই কন্ঠশিল্পের েেত্র তা কতটুকু সম্ভব?
##  বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই আবৃত্তি সংগঠন গুলোর প্রশিণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের বাচিক দতার উন্নয়ন ঘটিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় নিউজ প্রেজেন্টার, প্রোগ্রাম হোস্টিং এ সাফল্য দেখাচ্ছে। এসময়ে মিডিয়ায় কাজ করছে এমন নিউজ প্রেজেন্টার ও প্রোগ্রাম হোস্টিং এ সফল তরুণ তরুণীদের মধ্যে সিংহভাগ আবৃত্তি সংগঠন চর্চার মাধ্যমে পেশা হিসেবে মিডিয়ায় যুক্ত হতে পারছে। তবে শুধুমাত্র আবৃত্তিশিল্পী ও প্রশিক হিসেবে খুব মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ পেশা হিসেবে একে গ্রহণ করেছে! সীমিত এই মানুষদের মধ্যে আমি একজন।

# আপনাকে অনেকেই এই শিল্পচর্চায় নিজেদের গুরু বলে মানে, শ্রদ্ধা করে। তাদের উদ্দেশ্যে আপনার উপদেশ ?
## গুরু বলাটা তো এখন ফ্যাশন! আবার কেউ কেউ নিজেই নিজেকে গুরু বলছে! বিষয়টি অতো সহজ নয়। গুরু হচ্ছে সামগ্রিক জ্ঞান। গুরু আমার মাতৃগুরু পিতৃগুরু শিাগুরু দীাগুরু। আমার কাছে শিখছে বা আমার সান্নিধ্যে এসেছে এমন অনেকেই ভালবেসে গুরু বলে। আমি উৎসাহিত নিরুৎসাহিত কোনোটাই করিনা, বুঝি এটা ভালোবাসার আবেগ! তবে, গুরু আমার কাছে আরো বিশেষ কিছু , ইচ্ছে অনিচ্ছা সবকিছুর উর্ধ্বে।

# একজন শিতি সচেতন নাগরিক হিসেবে কুমিলার কাগজের পাঠকদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলতে চান.
## কুমিলার সংবাদপত্রের জগতে আধুনিকতা এনেছে কুমিলার কাগজ। সুদৃশ্য কাগজে ঝকঝকে ছাপা রঙিন ছবি এইসব এখন স্বাভাবিক, কিন্তু দেড় দশক আগে পঁচিশ বছরের একজন তরুণ এই সাহস করে পত্রিকার প্রকাশনায় আসাটা ছিল তারুণ্যের দুঃসাহস ও স্পর্ধা! আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সেই সময়কার সাথি বর্তমানে সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আবুল কাশেম হৃদয় তার পত্রিকা কুমিলার কাগজ তারুণ্যের সেই স্পর্ধা এখনও বহন করে চলেছে। জয় হোক।।।