
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনক। অপ্রতিরোধ্য সড়ক দুর্ঘটনায় যেমন প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, তেমনি অনেক পরিবার পথে বসছে। দেশের অনেক প্রতিভাবান মানুষও প্রাণ হারিয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীর আর বাড়িতে ফেরা হয়নি।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রশিক্ষিত চালকের অভাব। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া চালকের আসনে বসে যাওয়ার ঘটনা তো নৈমিত্তিক। যেখানে দেশের ৬১ শতাংশ চালক পরীা না দিয়ে লাইসেন্স নিচ্ছেন, অন্যদিকে দেশের ১৬ লাখ চালক বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছেন, সেখানে সড়ক দুর্ঘটনা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে—এটাই তো স্বাভাবিক! আরেক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আবার বৈধ লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন এমন চালকদের ৩১ শতাংশ কোনো অনুমোদিত ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি। ফলে চালকদের বেশির ভাগই ট্রাফিক আইন ভালো জানেন না। সড়ক দুর্ঘটনার এটাও একটা কারণ। ২০১৫ সালে উচ্চ আদালত গাড়িচালকদের শিাগত যোগ্যতা অন্তত এসএসসি নির্ধারণ করার আদেশ দেন। এই আদেশ কি বাস্তবায়িত হয়েছে?
গত শনিবার সড়ক দুর্ঘটনায় আট জেলায় ৯ জন নিহত হওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। শুক্রবার সকালে লকডাউনের মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় এক রিকশাচালক নিহত হলে উত্তেজিত জনতা গাড়িটিতে আগুন দেয়। এই দুর্ঘটনার পর কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তা আমাদের অবাক করে। প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের মোট ৫১৩টি যানবাহনের জন্য নিবন্ধিত চালকের সংখ্যা মাত্র ১৪৭। আর ২০০ গাড়ি চলে মাস্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্ত চালক দিয়ে। বাকি ১৬৬টি গাড়ি কিভাবে চলে তার সঠিক কোনো তথ্য ডিএসসিসির পরিবহন খাতের কাছে নেই। নিবন্ধিত চালক ছাড়া ডিএসসিসির বাকি গাড়িগুলো চলে অদ ও অনিবন্ধিত চালক দিয়ে। কখনো কখনো আবার কিনারদেরও দেখা যায় চালকের ভূমিকায়। ফলে সংস্থার গাড়িগুলো দিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
সিটি করপোরেশনের মতো একটি সংস্থায় এই অনিয়ম কী করে চলে? দেখার কি কেউ নেই? নাকি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না? মাস্টাররোল আর অনিবন্ধিত চালকদের দিয়ে গাড়ি চালানোর মধ্যে বড় ধরনের বাণিজ্য আছে, এমন অভিযোগ উঠলে তা কি ভিত্তিহীন হবে?