
শনিবার মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শানার প্রতিবাদকারীদের হত্যার জন্য ক্ষমতাসীন জান্তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইয়াঙ্গনে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়ে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে অনুযায়ী শনিবার মিয়ানমারজুড়ে বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ হয়েছে। ইয়াঙ্গনের সানচাং এলাকায় একটি বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছোড়ে। এখান থেকে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাউইতে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদকারীরা ‘গণতন্ত্রণই আমাদের উদ্দেশ্য’, ‘বিপ্লব অবশ্যই জয়ী হবে’ বলে শ্লোগান দেন।
“রাজনৈতিক আশা উজ্জল হতে শুরু করেছে। বিপ্লবের যে স্পন্দন শুরু হয়েছে তা হারাতে দিতে পারি না আমরা। যারা সাহস করে লড়াই করে তারাই জয়ী হয়। আমরা জয়ী হব,” ফেইসবুকে লিখেছেন প্রতিবাদের এক নেতা, ই থিনজার মং।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা সংযতভাবে প্রতিবাদ বন্ধের চেষ্টা করছে, কিন্তু প্রতিবাদকারীদের স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি তৈরি করতে দেওয়া হবে না।
শনিবার অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি শহরেও মিয়ানমারের অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদ হয়েছে। কয়েকশত লোক গান গেয়ে ও তিন আঙ্গুল উঁচিয়ে, যা মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও প্রতিরোধের প্রতীকী স্যালুট হয়ে উঠেছে, প্রতিবাদ জানান।
এই প্রতিবাদের সংগঠক থেইন মোয়ে উয়িন বলেন, “আমরা অস্ট্রেলিয়ার সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইইউ সরকারগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ও মিয়ানমারের সামরিক একনায়কদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।”
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানামরের নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিসহ ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেতাদের গ্রেপ্তার করার পর দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সামরিক বাহিনী। সেনা শাসনের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই বিক্ষোভ, ধর্মঘটসহ নানান কর্মসূচি হচ্ছে।
টালমাটাল এ পরিস্থিতি অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করার পাশাপাশি দেশটির প্রশাসনকেও অনেকখানি পঙ্গু করে দিয়েছে।
বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত পঞ্চাশ জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন বলে তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক হাজার সাতশর বেশি মানুষকে, যাদের মধ্যে অন্তত ২৯ জন সাংবাদিকও আছেন।
মিয়ানমারের অন্তত ৩০ জন পুলিশ দেশ ত্যাগ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রবেশ করে সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ আট পুলিশের দেশ ত্যাগের কথা স্বীকার করে তাদের ফেরত দেওয়ার জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।