
গত
মঙ্গলবার বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার মামলার রায় হয়েছে
আদালতে। ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজনকে মৃত্যুদ- এবং অন্যজনকে যাবজ্জীবন কারাদ-
দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের প্রত্যেকের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা
হয়েছে। রায়ের পর্যবেণে আদালত বলেছেন, এ মামলার আসামিরা কোনো সহানুভূতি পেতে
পারেন না। আদালত আরো বলেছেন, ‘বাংলাদেশে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য
আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে মত প্রকাশ ও স্বাধীন কর্মকা- থেকে বিরত রাখার
উদ্দেশ্যে অভিযুক্ত আসামিদের কারো ভূমিকা ছোট-বড় করে দেখার সুযোগ নেই।
যেহেতু অভিযুক্ত পাঁচজন আসামি আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে সাংগঠনিকভাবে
অভিজিৎ রায় হত্যায় গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন, সে জন্য ওই পাঁচজন
আসামির একই সাজা প্রদান করা হবে বাঞ্ছনীয়।’ ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে
স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে জঙ্গি কায়দায় হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন
অভিজিৎ রায়। চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। ওই
ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ওদিকে
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের একটি বোমা পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদ- পাওয়া ১০ আসামির
সবার সাজা বহাল রেখে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত মঙ্গলবার জাগৃতি প্রকাশনীর
স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার মামলায় আট জঙ্গির মৃত্যুদ-াদেশ
অনুমোদনসংক্রান্ত নথি (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে পৌঁছেছে। গত ১০
ফেব্রুয়ারি আলোচিত এ মামলার রায়ে আট আসামির সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে
মৃত্যুদ- দেওয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
পল্টন
ময়দানে সিপিবির সমাবেশে, রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে, ময়মনসিংহে সিনেমা
হল এবং আরো কিছু জায়গায় আত্মঘাতী বোমা হামলার মধ্য দিয়ে দেশে জঙ্গিবাদের
চর্চা দৃশ্যমান হয়। জঙ্গিরা সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটায় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট
একযোগে ৬৩ জেলায় বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। ২০১৩ সাল থেকে ব্যক্তিবিশেষকে
টার্গেট করে চাপাতি হামলা চালাতে শুরু করে তারা। বছর দুয়েকের মধ্যে প্রায়
৫২ জন খুন হন। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান
রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হন। বাংলাদেশ থেকে
জঙ্গি নির্মূল করতে সব মামলার রায় দ্রুত কার্যকর হবে—এটাই আমাদের
প্রত্যাশা।