
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস‘ পালন উপলক্ষে ‘নিজেরা করি’ সংস্থা ও ভূমিহীন সংগঠনের উদ্যোগে র্যালী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার বুড়িরপাড় উচ্চবিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে ওই কর্মসূচী পালিত হয়।
‘উদ্যমে উত্তরণে শতকোটি’ (ওবিআর), ‘নারী নির্যাতন -নারী নির্যতন, বন্ধ কর- করতে হবে’-এ শ্লোগানকে সামনে রেখে ভূমিহীন সংগঠনের আঞ্চলিক কমিটির সহ-সভাপতি আবু মিয়ার সভাপতিত্বে এবং বিশিষ্ট ধারাভাষ্যকার মো. রাশেদুল আল- আমিন সরকার’র সঞ্চালনায় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘নিজেরা করি সংস্থা’র কুমিল্লা জেলা অঞ্চল সমন্বয়ক আব্দুল জব্বার।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, রসুলপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মসূচী সংগঠক উজ্জল হোসেন, পরিতোষ কুমার মাহাতু, মোস্তাফিজুর রহমান, ভূমিহীন সংগঠনের রসুলপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সভাপ্রধান আব্দুল বাতেন সরকার, সাধারন সম্পাদক আব্দুল হান্নান মূন্সী, ভূমিহীন সংগঠনের রসুলপুর ইউনিয়ন সভাপ্রধান ফজর আলী মেম্বার, সাধারন সম্পাদক আছিয়া বেগম, সহ-সভাপ্রধান নাজমা আক্তার, কাকুলি বেগম, হাসেনা বেগম, রসুলপুর বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক মায়মুনা আক্তার মিম, বুড়িরপাড় নতুন প্রজন্ম’র আহবায়ক রহিমা আক্তার,
আলোচনা শেষে আশরাফুল আলম ও আর্জুদা আক্তার’র সঞ্চালনায় রসুলপুর ভূমিহীন সাংস্কৃতিক দলের আয়োজনে গণসঙ্গীত, দেশের গান, আবৃত্তি, নৃত্য ও ‘নারীরাও মানুষ’ নামক নাটক মঞ্চস্ত করা হয়। আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পূর্বে একটি বিশাল র্যালী বুড়িরপার গ্রামের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেছে।
আলোচকরা বলেন, নারীরা আজ সর্বক্ষেত্রেই নির্যাতিত। গোটা বিশ্ব প্রতিদিন প্রায় একশত কোটি নারী কোননা কোনভাবে নির্যাতিনের শিকার হচ্ছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইন আছে, অথচ আইন বাস্তবায়নে অব্যবস্থাপনা আর ত্রুটির কারনে নির্যাতিতরা প্রতিকার পাচ্ছেনা। এ ক্ষেত্রে সামাজিক আন্দোলন, সচেতনতা ও সু-শাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।
আজ সারা বিশ্বব্যাপী নারীদের একই অবস্থা। উন্নয়ন অগ্রগতিতে নারীরা আজ পিছিয়ে নেই, বঞ্চিত জনগোষ্ঠী কখনোই প্রকৃতিকে ধ্বংস করে না বরং প্রকৃতির সাথে তাদের বন্ধুত্বের গভীরতা লক্ষনীয়। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে খাদ্য নিরাপত্তার শ্লোগান তুলে রাষ্ট্র, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মুনাফার কারণে হচ্ছে। ফলে কৃষক বঞ্চিত হচ্ছে, বিশেষভাবে নারীরা খাদ্য সার্বভৌমত্বের অধিকার হারাচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, করোনার সময় আমরা বিশ্ব ব্যাপী দেখতে পেয়েছি, করোনা সংক্রমনের কারণে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ যারা ঐতিহাসিকভাবেই শোষণ, নিপীরণের শিকার, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, জাতি, লিঙ্গ, শ্রেণি, বর্ণের কারণে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়ে মারা গেছেন। অথচ এই জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই পৃথিবী জুড়ে করোনাকালে বিভিন্ন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সবচাইতে সামনের সারির কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, গৃহকর্মী এবং এরাই ছিলেন নারী।
পৃথিবীতে নারীদের সুরক্ষার মান সবচাইতে কম এবং তারা চরম অবহেলিত। তবে এসব নারীরাই সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করছে।
বক্তারা বলেন, “রাইজ”- এর প্রেক্ষিত বসে থাকার দিন শেষ, এবার জেগে উঠো, প্রতিবাদের উচ্চস্বরে জাগাতে হবে কণ্ঠস্বর। কারণ নারীর স্বাস্থ্য-সুরক্ষা, কর্ম-সুরক্ষা, ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা এবং সকল ক্ষেত্রে নিরাপত্তা উন্নত ও নিশ্চিত করতে অবশ্যই আমাদের “রাইজ” সম্মিলিত কণ্ঠস্বর বজ্রস্বরে তুলতে হবে এবং প্রয়োজনের তাগিদে তা পরিবার থেকে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে জাগ্রত করে তুলতে হবে।
বক্তারা বাল্য বিয়ে, যৌতুক, ইভটিজিং, ধর্মীয় কুসংস্কার মুক্ত বিশ্ব নির্মাণের আহবান জানান।