
আজ
পহেলা ফাল্গুন। আজ থেকে শুরু বসন্ত। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে প্রতিটি ঋতুর
আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর মধ্যে বসন্ত যেন ভিন্ন এক আমেজ নিয়ে আসে।
বসন্তকে বলা হয় ‘ঋতুরাজ’। শীতের শেষে গাছের ডালে নতুন পাতায় পাওয়া যায়
বসন্তের আগমনী বার্তা। আজ সারা দেশে বসন্তকে বরণ করে নেওয়া হবে নানা
আয়োজনে। বাসন্তী রঙের পোশাক পরে তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠবে বসন্ত উৎসবে।
ভারতের শান্তিনিকেতনে উদ্যাপিত হয় বসন্ত। সেখানে হবে দোল উৎসব। শুধু
বাংলাদেশ কিংবা ভারত নয়, বিশ্বের আরো অনেক দেশে বসন্ত উদ্যাপিত হয়। ইরানে
প্রায় তিন হাজার বছর ধরে বসন্ত উৎসব উদ্যাপিত হয়ে আসছে। জাপানে বসন্ত
উৎসবকে বলা হয় হানামি। আয়ারল্যান্ড, রোমানিয়া, ইতালি, স্পেন ও ক্রোয়েশিয়ায়
উদ্যাপন করা হয় এই উৎসব। মেক্সিকোর বসন্তকে বলা হয় সান মার্কোস। এটি তাদের
সবচেয়ে বড় উৎসব। বাংলাদেশে বসন্তে অশোক, আকড়কাঁটা, হিমঝুরি, ইউক্যালিপটাস,
রক্তকাঞ্চন, কুরচি, কুসুম, গাব, গামারি, গ্লিরিসিডিয়া, ঘোড়ানিম,
জংলিবাদাম, জ্যাকারান্ডা, দেবদারু, নাগেশ্বর, পলকজুঁই, পলাশ, পাখিফুল ,
পালাম, বুদ্ধনারিকেল, মনিমালা, হুয়া, মাদার, মুচকুন্দ, রুদ্রপলাশ, শাল,
শিমুল, স্বর্ণশিমুল, ক্যামেলিয়া ইত্যাদি নানা ফুল ফোটে। প্রকৃতিতে রঙে রঙে
রঙিন করে দেয় বসন্ত।
আমাদের সাহিত্যিকদের লেখায় বসন্ত বিশেষ স্থান দখল
করে আছে। বিশেষ করে কবিদের কবিতা ও গানে বসন্ত নানাভাবে স্থান পেয়েছে।
বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য গভীরভাবে পর্যবেণ করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর। তিনি লিখছেন, ‘তোমার অশোকে কিংশুকে/ অল্য রঙ লাগল আমার অকারণের
সুখে,/ তোমার ঝাউয়ের দোলে/ মর্মরিয়া ওঠে আমার দুঃখরাতের গান।’ তাঁর লেখায়
আমরা পাই, ‘দীর্ঘ শীতের পর আজ মধ্যাহ্নে প্রান্তরের মধ্যে নববসন্ত নিশ্বসিত
হইয়া উঠিতেই নিজের মধ্য মনুষ্যজীবনের ভারি একটা অসামঞ্জস্য অনুভব করিতেছি।
বিপুলের সহিত, সমগ্রের সহিত তাহার সুর মিলিতেছে না। শীতকালে আমার উপরে
পৃথিবীর যে-সমস্ত তাগিদ ছিল আজও ঠিক সেই-সব তাগিদই চলিতেছে। ...আমি তো আজ
গাছপালার সঙ্গ বহু প্রাচীন কালের আত্মীয়তা স্বীকার করিব। ...মাটিকে আজ দুই
হাত ছড়াইয়া আঁকড়াইয়া ধরিতে হইবে।... চৈত্রের শেষ পর্যন্ত মাটি, বাতাস ও
আকাশের মধ্যে জীবনটাকে কাঁচা করিয়া, সবুজ করিয়া, ছড়াইয়া দিব আলোতে ছায়াতে
চুপ করিয়া পড়িয়া থাকিব।’
আজ আমরা প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি।
পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছি। মাটিকে দুই হাতে আঁকড়ে ধরে জীবনকে সবুজ
করতে হলে ফিরতে হবে প্রকৃতির কাছে। গাছপালার সঙ্গ বহু প্রাচীন কালের
আত্মীয়তা স্বীকার করে পরিবেশ রায় আমাদের মনোযোগী হতে হবে।