
২০২০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মুখের অধিকারী ইসরায়েলের মডেল ইয়েল শেলবিয়া
প্রথমে
নিজেই নিজের কিছু ছবি তুলে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করতেন। স্কুল পড়ুয়া কিশোরীর
সেই ছবিই নজরে পড়ে এক পেশাদার চিত্রগ্রাহকের। চিত্রগ্রাহক মারিনার পক্ষ
থেকে প্রথম ফটোশ্যুটের প্রস্তাব পান ১৬ বছরের কিশোরী ইয়েল শেলবিয়া।
তার
কেরিয়ার যে এই ভাবে ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং তিনি বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মুখের
অধিকারী হয়ে উঠবেন তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। তবে ১৯ বছরের কিশোরী ইয়েলকে
মাত্র তিন বছরের কেরিয়ারেই সম্মুখীন হতে হয়েছে অসংখ্য বিরোধিতা, হুমকি এবং
কু-মন্তব্যের।
সব বাধা অতিক্রম করে তিনি আজ প্রতিষ্ঠিত মডেল ও
সবচেয়ে সুন্দর মুখের অধিকারী। লিওনেল মেসি থেকে শুরু করে জনপ্রিয়
অভিনেত্রী-মডেল কিম কার্দাশিয়ানের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি।
ইয়েলের
জন্ম ইসরায়েলের নাহারিয়ার এক গোঁড়া খ্রিস্টান পরিবারে। বাবা একটি কারখানার
সুপারভাইজার আর মা লাইব্রেরিয়ান। গোঁড়া খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম হওয়ায় ছোট
থেকেই ধর্মীয় নানা বেড়াজালের মধ্যেই বড় হয়েছেন তিনি।
তাকে প্রথমে
একটি ধর্মীয় স্কুলে ভর্তি করা হয়। সেখানে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ধর্ম
নিয়ে নানা পাঠ শিখেছেন তিনি। চলাফেরা, ওঠাবসা, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ
সব কিছুতেই ধর্মীয় রীতি মাথায় রাখতে হতো তার। যেমন- যখন তখন যেকোনো খাবার
খেতে পারতেন না তিনি। শুধু ধর্মীয় রীতি মেনে তৈরি খাবারগুলো খেতে পারতেন
তিনি। একইভাবে পোশাকের ক্ষেত্রেও এমন অনেক বিধিনিষেধ ছিল। সপ্তাহে
নির্দিষ্ট দিন বাড়িতে থেকে বিশেষ ধর্মীয় রীতি পালনও করতে হতো তাকে।
ইয়েল
যখন মডেলিং শুরু করেন তখন প্রচুর বিরোধিতা আসে চারিদিক থেকে। ইয়েলকে ওই
ধর্মীয় স্কুল থেকে বহিষ্কার করার জন্য ইসরায়েলের খ্রিস্টান সমাজ থেকে সে
দেশের শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়। ইয়েল ও তার পরিবারের সঙ্গে
আলোচনার পর তাকে পড়াশোনা করতে দিতে রাজি হন শিক্ষামন্ত্রী। ইয়েলের কেরিয়ার
কোনোভাবেই তার ধর্মীয় রীতি পালনের বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, এই শর্তে রাজি হন
শিক্ষামন্ত্রী।
কিন্তু মডেলিং এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি সমান্তরালভাবে
চালানো অসম্ভব হয়ে ওঠে ইয়েলের কাছে। শ্যুট করতে তাকে দেশ-বিদেশের নানা
প্রান্তে ছুটতে হয়। সেখানে ধর্মীয় রীতি মেনে ঠিকমতো খাবার পান না। আবার
পোশাক বাছাইয়ের কারণে অনেক ভাল সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যায় তার।
কিন্তু
তার আশপাশে মানুষের এই ধর্মীয় গোঁড়ামির জন্যই আবার তার কেরিয়ারের পালে
হাওয়া লাগে। সারাবিশ্বে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
২০১৭ সাল থেকে সামনের সারির মডেল হয়ে ওঠেন তিনি। তার কেরিয়ারের ঊর্ধ্বমুখী গতি প্রথম সারির অনেক জনপ্রিয় মডেলকেও হার মানাবে।
২০১৮
সালে তিনি টিসি ক্যান্ডলার নামক সংস্থার বিচারে বিশ্বের তৃতীয় সুন্দর
মুখের অধিকারী নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে এই তালিকায় তার স্থান ছিল দ্বিতীয়
এবং ২০২০ সালে তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মুখের শিরোপা পেয়েছেন। তিনি গত
বছর ইসরায়েলের বিমানবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন।