
বাংলাদেশের
জনগণ দেশের স্বাধীনতার চুয়ান্ন বছরের এপর্যন্ত সরকার ও রাষ্ট্র
ব্যবস্থার কোনো একটি স্তরেও সুশাসন বা তার নিয়মিত চর্চার ধারাবাহিকতা দেখতে
পায়নি। আবার বিচার ব্যবস্থাতেও আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও আইনের আশ্রয়
লাভের স্বাভাবিক সুযোগ সবার জন্য সমান ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি আজ পর্যন্ত। যে
কোনো বিচারের দীর্ঘ প্রক্রিয়া, বিচার প্রার্থীর হয়রানি ও স্বনির্ধারিত,
অতিরিক্ত ব্যয় নির্ভর একটি ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়ায় আইনী কার্যক্রমের ভেতরে
বাইরে অনেকের এ নিয়ে অনিহা, অবিশ^াস-এমন কি নেতিবাচক ধারণাও রয়েছে।
তারসঙ্গে বলতেই হচ্ছে, বিগত সরকারের দিক থেকে গুম, খুন, দমন, পীড়নসহ
রাষ্ট্র ক্ষমতার শক্তি কিভাবে জনমত ও জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে, তার
প্রমাণ ইতিহাসে এক নিন্দনীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে। এভাবে এক এক করে বললে দেশ ও
রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক শর্তগুলোর মধ্যে কোনো একটিও সঠিক উপায় ও সম্পূর্ণতার
সঙ্গে দেশের সুগঠন এবং জগণের কল্যাণে নিশ্চিত হয়েছে, এমনটি বলার মতো
পরিস্থিতি আজও হয়নি। হ্যাঁ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি
ভুখন্ড, একটি স্বাধীন দেশ ও ব্যক্তি এবং জাতি হিসেবে স্বাধীনতা ও মর্যাদা
লাভের দাবিদার হতে পেরেছি আমরা প্রত্যেকে। কিন্তু তার পরের ধারাবাহিকতায়
দেশের সমাজ, রাজনীতি এবং দেশ ও রাষ্ট্র পরিচালনার গতি- প্রকৃতির মাঝে
গোষ্ঠি স্বার্থপরতা আর ক্ষমতার শাসনে সবকিছু কেন্দ্রীভূত হওয়ায় বলা
যায়-কেবল দেশটাই হয়েছে আমাদের, আমরা হয়ে উঠতে পারিনি দেশের। এক্ষেত্রে ২০২৪
এর গণ অভ্যূত্থানের কারণ ও তার পূর্ববর্তী শাসনামলে গণতন্ত্র ও
মানবাধিকার পরিপন্থী পরিস্থিতি ও পরিণতির সকল কিছুকে ভাবনার উত্তরণে সবার
মনে রাখা উচিত। কেননা যদি এবার নতুন করে শুরু করতেই হয়, তাহলে প্রতিটি
সমস্যার মূলে গিয়ে যেমন শুরু করতে হবে, তেমনি মৌলিক স্তম্ভের প্রত্যকটি
বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিয়ে মূল দায়িত্ব নিতে হবে সরকার ও রাষ্ট্রকে।
অর্থ্যাৎ প্রথম থেকে চূড়ান্ত ধাপ পর্যন্ত সময় যাই লাগুক ঢেলে সাঁজাতে হবে
মৌলিক প্রয়োজনের প্রত্যেকটি বিষয়কে। আর ক্ষতির যা হয়েছে তাতে বলতেই হয়,
স্বাধীনতার পরের প্রতিটি সরকার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার দায়িত্ব থাকা
কর্তাব্যক্তি ও আমলাদেরও দায়-দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও দায়ভার কম বেশি
ছিল। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক ধারা ও সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায়
উত্তীর্ণ হওয়ার পরও দেশে ন্যায় বিচার, সুশাসন, গণতন্ত্রণ ও মানবাধিকার
প্রতিষ্ঠার দাবি এতটা উপেক্ষিত হতে পারে- তা গভীর ভাবে ভাবলে যেকোনো
দেশপ্রেমিক মানুষেরই কষ্ট অনুভব করার কথা। জনগণের অর্থ, সম্পদ লুণ্ঠন,
দুর্নীতি ও দীর্ঘ অপশাসনের ফলে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে
প্রাতিষ্ঠানিক এবং পদ্ধতিগত ভাবে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ও
মানবাধিকার লঙ্ঘন বেড়েছে সর্বত্র। আইনের কঠোর প্রয়োগের অভাব ও দুর্বলতার
সুযোগে বেড়েছে দেশ ব্যাপী ভিন্ন ভিন্ন কায়দায় অপরাধীদের দৌরাত্ন ও অপরাধের
ব্যাপকতাও। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নাগরিক দায়িত্বের মূল্য মযার্দা রক্ষার
পরিবর্তে ব্যক্তি ও সংগবদ্ধভাবে তার অপব্যবহার বেড়েছে অনেক বেশি। আরো বড়
সমস্যা হিসেবে দেখলে, বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানেও এবছরের সবশেষ তথ্য মতে
আরো অবনতি হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প, কারখানা মালিকদের উন্নতি
ও সরকারি ঋণ সহায়তার পরও রয়েগেছে শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন- ভাতার সমস্যা ও
জীবনের কষ্ট। বর্তমান অন্তর্বতী সরকারের সময়কালকে আলাদা করে দেখলে মনে হয়
দীর্ঘদিনের অপশাসনের কেন্দ্রীয় চরিত্র থেকে বের হয়ে আসার বাইরে সার্বিক
পরিস্থিতির উত্তরণের ক্ষেত্রে কেবল একটি নতুন যাত্রা পথের সূচনা হয়েছে
মাত্র। যদিও জুলাই জাতীয় সনদ, সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনীতিক অনৈক্যে
এখনই তৈরি হয়েছে সন্দেহ, সংশয়। মানবাধিকারের ঘোষণা ও ধারণার উন্নয়নেও
আইনের পরিধি বৃদ্ধি, সমস্যা ও সমাধানের উপায় চিহ্নিত করাসহ পরিকল্পনা নিয়ে
নেই কোনো অগ্রগতি।
আমাদের দেশ মূলত মানবাধিকারের ধারণা ও সর্বক্ষেত্রে
তার গুরুত্বের অস্পষ্টতার কারণে শুরু থেকে এপর্যন্ত সরকার ও রাষ্ট্র
ব্যবস্থার দিক থেকে নাগরিক অধিকার যথাযথ ভাবে পূরণ ও দেশের সুগঠনে
পরিকল্পিত এবং নিয়মতান্ত্রিক ভাবে এগোতে পারেনি খুব বেশি। ফলে স্বাধীনতার
এতো বছর পরও সুশাসন ও ন্যায় বিচারের ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের
মানুষ। কোনো ভাবেই ভুলার সুযোগ নেই যে, গণতান্ত্রিক দেশ, প্রাতিষ্ঠানিক
ব্যবস্থার সুগঠন ও মানুষের মনের ভেতর থেকে গণতান্ত্রিক উপলদ্ধি জাগানোর
প্রথম কথাই হচ্ছে- মানবাধিকার। যা মানুষের মর্যাদার জীবনের দাবি পূরনের
নিশ্চিয়তা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশীল করতে সবচে বেশি সাহায্য
করে। কোনো পক্ষ হয়তো মনে করতে পারেন, গণতন্ত্র, সুশসানের উন্নতির
ক্ষেত্রে মানবাধিকারের ঘোষণা, ধারণাকে এক করে বিবেচনা করা সঠিক নয়। কিন্তু
না, এপর্যন্ত সময়ে প্রমাণিত হয়েছে গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার ও সুশাসনের
মতো প্রধানতম বিষয়ে উন্নতির সঠিক পথ-পন্থা নির্ধারণ ও ভিত্তি তৈরির শক্তিও
হচ্ছে, মানবাধিকার। কেননা মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার গুলোকে অবহেলিত ও
গুরুত্বহীন রেখে গণতন্ত্রসহ প্রশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিকতার সত্যিকার সুগঠন ও
কার্যকারিতায় সম্পূর্ণ সক্ষম করে তোলা সম্ভব নয়। বরং মানবাধিকারকে
অগ্রগণ্য করে গণতন্ত্র ও সুশাসনের চর্চা সর্বত্র বজায় থাকলেতার ভিত্তি ও
সুগঠনের প্রক্রিয়াকে সঠিক ভাবে এগিয়ে নেয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে নূন্যতম
ভাবে মৌলিক অধিকার ও চাহিদার দাবি গুলোর অগ্রাধিকার ও অগ্রসরমান উন্নতির
সঙ্গে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কাজে একাত্ম হতে হবে দেশের রাষ্ট্র কাঠামো ও
অন্যান্য সব পক্ষকে। কোনো ভাবেই ঘাটতি রাখার সুযোগ নেই- এমন প্রতিটি মৌলিক
অধিকার অর্জন ও পূরণের ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনা যে নিয়মে বা যে
গতিতে এপর্যন্ত এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে প্রতিটি পর্যায়ে উন্নতির কিছু দৃশ্য ও
বর্ণনা একভাবে দেখা যায়। কিন্তু তার এক একটি প্রতিষ্ঠান ও
প্রাতিষ্ঠানিকতার মধ্যে যে পরিমান অনিয়ম, অপচয়, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা ভর
করে আছে তাতে বিদ্যমান সুবিধাদির অনুপাতেও দেশের নাগরিকদের কল্যাণে
প্রতিষ্ঠান গুলো প্রাপ্য সেবা, সহায়তা দিতে পারছে না। সাধারণ ভাবে আমাদের
জানা মতে খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের মতো বিষয়ের বাইরে
মৌলিক অধিকারের পরিধি এপর্যন্ত সরকারি বা নীতিগত ভাবে সম্প্রসারিত না
হলেও এমন অধিকার গুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্কিত ও অতি প্রাসঙ্গিক এমন
বিষয় গুলোও মৌলিক অধিকারেরই অংশ। তারই অংশ হিসেবে পরিবেশের সুরক্ষা ও
বিশুদ্ধতা যেমন সুস্থ দেহ- মনের জন্য জরুরি, তেমনি নিরাপদে পথ চলার
ব্যবস্থা ও বসবাসেরজন্য নিরাপত্তার বিষয়টিও কম জরুরি নয়। আবার নিরাপদ
পানি, বিদ্যুৎ, জ¦ালানির বিষয় গুলি মানবিক জীবনের অন্যতম উপাদান হাওয়া
স্বত্ত্বেও সরকারি সেবা খাত গুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও চাহিদা মতো সেবা
কার্যক্রম সম্প্রাসারিত হচ্ছে না। বরং প্রায় প্রতিটি খাতে নাগরিকদের
জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে পরিশোধেয় ভ্যাট, টেক্স, বিলের পরিমাণ বেড়েই চলেছে
বার বার। সাধারণ উদাহরণ হিসেবে শুধু বিদ্যুতের বিল নিয়ে বলা যায়, এমন
রাষ্ট্রীয় একটি সেবা খাতের চুরি, অপচয়, দুর্নীতির কারণে পদ্ধতিগত এবং
আর্থিক যে ক্ষতি হয়, তার সব বোঝা যেন গ্রাহকের কাঁধে বাড়তি বিল চাপানোর
মধ্যেই কেবল কর্তৃপক্ষ সমাধান খুঁজে পান। বিগত সরকারের আমদানি করা নতুন
ফাঁদের প্রি-পেইড বিদ্যুতের মিটার ব্যবহারে বাধ্য করার পর থেকে গ্রাহকদের
বিদ্যুতের বিল টাকার অঙ্কে গত দুই তিন বছরে দ্বিগুণের কাছাকাছি বেড়ে
গেছে। এনিয়ে ভোক্তাদের হয়ে বলতে পারি, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার
প্রেক্ষাপটে সরকারের দিক থেকে সরকারি সেবা খাত গুলোকে দুর্নীতি ও
বাণিজ্যিক স্বার্থের উর্ধ্বে শুধু মাত্র সেবা খাত হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখা
উচিত। আর তা না করে নানা রকম খাতে বেশি বেশি ভ্যাট, টেক্স সহ অর্থ আয়ের
মাধ্যমে সরকারও যদি ব্যবসায়ী ধারণায় “শীর্ষ ধনী” হতে চায়, তবে তার আগে
দেশের মানুষের মাঝে আয় ও শ্রেণি বৈষম্যের বিদ্যমান অতি ব্যবধান কমিয়ে
আনা সবচেয়ে বেশি দরকার। আর তা না হলে এক সময় দেখা যাবে- সরকার হয়েছে ধনী ও
লাভালাভের হিসেবে ধণীক শ্রেণির মতোই কেবল এরকম “ব্যবসায়ী”। যদিও জুলুম,
শোষণ বা অন্যায় কিছু জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া গণতান্ত্রিক ও কল্যাণ
রাষ্ট্রের ধারণায় মোটেও কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
স্বাধীনতার পর
থেকে গত চুয়ান্ন বছরে দেশের মানুষ ও মানবাধিকারকে সমাজ, রাজনীতি ও সরকার
ব্যবস্থার কেন্দ্র বিন্দুতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব না দেওয়ার ব্যর্থতায়
সর্বক্ষেত্রে নৈতিক ও মানবিক অধঃপতন ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। ফলে দৃশ্যত সেসব
উন্নয়ন কর্মকান্ড ও প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে যেরকম উন্নতির
দাবি করা হয় তার সবকিছুর ভেতরই ব্যক্তি, গোষ্ঠি ও শ্রেণি স্বার্থের অবৈধ
ও অন্যায্য স্বার্থপরতার প্রতিযোগিতা তৈরি করেছে। যে কারণে মানুষের
সত্যিকার কল্যাণ ও দেশের সার্বিক সুগঠন কোনো একটি পর্যায়েও মূখ্য বিষয় হয়ে
উঠতে পারেনি। তার সুযোগে সমাজে অন্যায়, অবৈধ ও দুর্নীতির পথ-পন্থার সুযোগ
যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি দেশে নিম্ন থেকে উচ্চবিত্তের অনেক ব্যক্তি পর্যন্ত
সমাজ, দেশ বিরোধী অপরাধে জড়িত ও নানা রকম ঠকবাজী এবং অপরাধ কর্মের বিপদ ও
বিস্তৃতি বাড়িয়েছে। অন্যদিক থেকে দেখলে, শিশুকাল থেকে প্রতিটি মানুষকে
শিক্ষা, সভ্যতা, সুচিন্তার সুগঠনে গড়ে তোলার পরিবর্তে চারদিক থেকে একটি
বিপরীত ও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়ে এক একটি জীবন গড়ে উঠেছে।
মানবাধিকার প্রশ্নে দেশের একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে “জাতীয়
মানবাধিকার কমিশন” ও তার বিগত দিনের কার্যক্রম নিয়ে সাফল্যের পরিমাপে কোনো
উল্লেখযোগ্য কথা বলতে না পারা সকলের জন্য রড়ই দুঃখজনক। সংবিধানের
স্বীকৃিত ও মানবাধিকার ধারণার আলোকে পরিস্থিতির উন্নয়নে দায়িত্ব পালন,
লঙ্ঘন রোধ, সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আইন ও নীতির পরিবর্তনে
প্রস্তাব রাখা ও গুরুতপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সমূহে মানবাধিকার এর বাধ্যবাধকতা
নিশ্চিতে বলা যায় এই কমিশন অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। তবে কমিশনের আইনী ক্ষমতা
ও সক্ষমতা বৃদ্ধি সহ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানোর যে উদ্দ্যোগ বর্তমান
অন্তর্বতী সরকার গ্রহণ করেছে তাতে হয়ত কাজের গতি ও সক্ষমতা বাড়তেও পারে।
এসঙ্গে দেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশনের দপ্তর স্থাপন ও কার্যক্রম
পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি দেশের জন্য ভালো এবং কোনো সহায়তা নেওয়ায় সুযোগ
থাকলে তা নিয়ে ক্ষতির কিছু নেই বলেই অভিজ্ঞমহল মনে করছেন। সবচে বড় কথা
হচ্ছে, যেসব কারণে একটি দেশ ও আমরা স্বাধীনতা চেয়েছি, তার প্রকৃত অর্থ ও
অর্জনের ফলাফল নির্ণয়ের প্রচেষ্ঠায় এপর্যন্ত যেটুকু পিছিয়ে আছি তার দিক
থেকে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। কেবল একটি ভূখন্ড নয়, যে মানুষ ও মানুষের
উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞা নিয়ে এদেশের সৃষ্টি- তার পরিপূর্ণ
রূপায়নের পথে দেশ ও নাগরিক জীবনের সমস্যা গুলোর সমাধানে মানবাধিকারের
দৃষ্টিতে সকলকে একসঙ্গে এগোতেই হবে। মানবাধিকার কাজে তিন দশকের বেশি
সম্পৃক্ততার দিক থেকে আমিও বিশ^াস করি, মানুষ হিসেবে মানবিক বোধ-বিবেচনা
সম্পন্ন উন্নত জীবনের একটি সামগ্রিক ধারণার নামই হচ্ছে- মানবাধিকার। আবার
যা ব্যক্তি থেকে যেকোনো পর্যায় পর্যন্ত কাউকে দেশের নীতি ও আইন শৃঙ্খলা
বিরোধী কোনোরকম অন্যায় কর্মকান্ডের প্রতি ন্যূনতম ভাবে সমর্থন করে না।
এরকম স্পষ্ট ঘোষণা ও ধারণার প্রেক্ষিতে সবারজন্য সবখানে সামর্থ্য ও
সক্ষমতার সবটুকু কাজে লাগিয়ে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের
সুরক্ষা ছাড়া দেশের ভবিষ্যত গন্তব্যের সঠিক গতিপথ নির্ণয় সম্ভব বলে মনে
হয় না। এদিক থেকে সত্যিকার অর্থে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা
করতে হলে মানুষের অধিকার ও মযার্দার দাবিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জনমতের
ভিত্তিতে নির্বাচিত সরকার ও জনমুখি প্রশাসনিক ব্যবস্থা সবার আগে গড়ে তোলা
দরকার। প্রাসঙ্গিক ভাবে এভাবেও বলা যায়, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিতে
যেমন জনগণের ভোটে নির্বাচিত ও জবাবদিহি মূলক সরকার দরকার, তেমনি সরকারের
সক্ষম ও জনমুখি প্রশাসন ছাড়াও সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার আশা করা যায়
না। অর্থ্যাৎ সবদিক মিলে বিশ^াসের সঙ্গেই বলা যায়, জনগণের সরাসরি ভোটে
নির্বাচিত সরকার, জনসমর্থিত সাংসদ ও অন্যান্য পর্যায়ের নির্বাচিত
জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে দেশের সুগঠন এবং
মানুষের অধিকার ও মযার্দা প্রতিষ্ঠা খুব কঠিন কিছু নয়। তারপরও বিগত বছর
গুলোতে এরকম জনআকাঙ্খা বার বার বৃথা প্রমাণিত হয়েছে। তাই সামনের ত্রয়োদশ
জাতীয় নির্বাচন সুসম্পন্নের মধ্য দিয়ে এদেশ ও জাতীয় জীবনে উত্তরণ ও উন্নতির
নতুন যাত্রায় দেশের সুগঠনে ঐক্য এবং মানুষ ও মানবিক জীবনের সম্মিলন ঘটবে,
তার বাইরে অন্য কিছু ভাবার সময় এবং সুযোগ আর নেই।
লেখক: মানবাধিকার বিষয়ক পরামর্শক, কুমিল্লা।
