নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ইতিহাস,
ঐতিহ্য, স্থাপত্য, অপূর্ব শিল্পনিদর্শন, শিক্ষা–সংস্কৃতি আর প্রকৃতির
অনিন্দ্য সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুমিল্লা। এ কুমিল্লার লালমাই পাহাড়,ময়নামতি ও
শালবন বিহার অঞ্চলকে আরও মোহময় করে তুলেছে আধুনিক শিল্পকলার ছোঁয়ায়
নির্মিত নব শালবন বৌদ্ধ মূর্তিটি। যাকে ঘিরে প্রতিদিনই জমে ওঠে দর্শনার্থীর
উপচে পড়া ভিড়। সবসময় মুখরিত থাকে কুমিল্লার দর্শনীয় স্থানগুলো। বিশেষ করে
কুমিল্লার প্রাচীন শালবন বৌদ্ধ বিহার, ময়নামতি জাদুঘর এবং নতুন সংযোজন নব
শালবন বৌদ্ধ বিহার। আধুনিকতার স্পর্শে নির্মিত এই বৌদ্ধ মন্দিরটি যে
মানুষের কাছে কতটা আকর্ষণীয়, তার প্রমাণ মেলে প্রতিনিয়ত টিকিট কেটে প্রবেশ
করা দর্শনার্থীদের ভিড় দেখলেই। কুমিল্লার শালবন বিহার দেখতে এসে এই নব
শালবনের মহামহিম বৌদ্ধ স্থাপনা না দেখলে কারও ভ্রমণই যেন পূর্ণতা পায় না।
শালবন বিহার, ময়নামতি জাদুঘর, ইটাখোলা মুড়া, রূপবান মুড়া, দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের সমাধিস্থল–ওয়ার সিমেট্রি সবই ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ
করে। তবুও নব শালবনের সোনালি বুদ্ধমূর্তিটি না দেখলে যেন ভ্রমণ তৃষ্ণা
অপূর্ণ থাকে।
২০১৪ সালে ২.৫ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত এই বৌদ্ধ উপাসনালয়
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শান্তি প্যাগোডা হিসেবে পরিচিত। মন্দিরে প্রবেশ করলেই
চোখে পড়ে সোনালি রঙের ৬ টন ওজনের ৩০ ফুট উচ্চতার বুদ্ধমূর্তি, যা
প্রার্থনার ভঙ্গিতে স্থির দাঁড়িয়ে আছে এবং দূর থেকেই যার মহিমা দেখা যায়।
মূর্তিটির দুই পাশে রয়েছে একই রঙের দু’টি সিংহ, পাশাপাশি রয়েছে ড্রাগন
মূর্তি, ইতিমখানা, জাদুঘর, সেমিনার হল, লাইব্রেরি, প্রার্থনা হল, আবাসিক
হোস্টেল ও গেস্ট হাউজসহ আরও নানা স্থাপনা। পাহাড়বেষ্টিত পরিবেশে এই বিহারের
সৌন্দর্য মনে দাগ কাটে প্রথম দেখাতেই।
থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ ফাউন্ডেশন
উপহার হিসেবে এই বিশাল মূর্তিটি নির্মাণে সহায়তা করে। বিহারের দায়িত্বশীলরা
জানান, শীল ভদ্র মহাথের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ বিশাল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়,
এখানকার শিশুরা সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। পর্যটকদের
জন্য ২০ টাকার প্রবেশ টিকিটের আয় ব্যবহার করা হয় অনাথ শিক্ষার্থীদের খাদ্য ও
আশ্রমের রক্ষণাবেক্ষণে। নব শালবনের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য ও প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করতেই বাধ্য।
ঢাকা থেকে আগত বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাত জামান বাঁধন বলেন, কুমিল্লার দর্শনীয়
স্থানগুলো ঘুরতে এসে নব শালবনের এ বিশাল উচ্চতার সোনালি বুদ্ধমূর্তিটি না
দেখলে আমার ভ্রমণ সম্পূর্ণ হতো না। শুধু তাই নয় পাশের শালবন বিহার,
পুরাকীর্তি সংরক্ষণাগার জাদুঘর এবং লালমাই পাহাড় গেছে গড়ে ওঠা বেসরকারি
বিনোদনগুলো বেশ চমৎকার।
চট্টগ্রাম থেকে কোটবাড়িতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা
আবুল হোসেন জানান, অনেক দিন ধরেই এই মূর্তির গল্প শুনেছি, আজ দেখে বুঝলাম
সত্যিই ভ্রমণটা সার্থক। তার স্থাপত্য শৈলী আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে।
নড়াইল
থেকে নবশালবনে মীর হোসেন সুমন বলেন, কোর্টবাড়ি এলাকায় ঢুকেই সোনালি
মূর্তিটিকে সূর্যের আলোয় ঝলমল করতে দেখেছি, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে যেন
নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। তবে কোটবাড়ি এলাকাতে রাত্রিযাপনের জন্য আবাসিক
হোটেলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
নব শালবন বিহারের সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা
প্রকৌশলী স্বপন চন্দ্র শিং বলেন, বাংলাদেশের বৌদ্ধদের অন্যতম
ধর্মীয়–সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে ‘বুদ্ধিস্ট কালচার একাডেমি’ দীর্ঘদিন ধরে
কাজ করছে। ঐতিহাসিক শালবন বিহারের প্রেক্ষাপটে নতুন প্রজন্মের কাছে
বৌদ্ধদের গৌরবময় ঐতিহ্য তুলে ধরতেই নব শালবন বিহারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
সংগঠনের পানপুরুষ প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক কর্মবীর শীল ভদ্র মহাথের একাগ্র শ্রম
ও প্রজ্ঞার ফসল এই বিহার। প্যাগোডার সামনের ৬ টন ওজনের ৩০ ফুট উচ্চতার
প্রভু বুদ্ধমূর্তিটি থাইল্যান্ড থেকে আগত ৭৫ জন অতিথি ও হাজারো বৌদ্ধ
নারী-পুরুষের মন্ত্রোচ্চারণে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপিত হয়।যা বিহারটির
ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায়।
