
‘তোর
সনে মোর আছে কি সমন্ধ (সম্বন্ধ)’-দয়ালের প্রতি সাধক মনমোহন দত্তের এই আকুল
নিবেদন ভক্তের মন আর্দ্র করে। অথচ সেই একই জমিনে, যেখানে এমন মহান সাধকরা
জন্ম নিয়েছেন ও উত্থিত হয়েছেন, আজ তাদের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যেন মিলিয়ে
গেছে দূর অতীতে। সাধক মনমোহন দত্ত, সাধক আফতাব উদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ
আলাউদ্দিন খাঁ-এই কিংবদন্তী শিল্পী ও সাধকদের জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আজ
সংবাদ শিরোনামে স্থান পাচ্ছে এক লজ্জাজনক ঘটনায়, ‘জমির বিরোধে সংকটে
আলাউদ্দিন খাঁর সংগীতাঙ্গন’। পরমের সন্ধান নয়, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়
আজ সেই মলয়া গানের অর্থ যেন বদলে গেছে-মনে হয় সাধক নিজেও প্রশ্ন করছেন, আদৌ
কোনো সম্বন্ধ টিকে আছে কিনা এই জনপদ ও মানুষের সঙ্গে।
তিতাসের তীরে যে
অসামান্য স্ফূর্তি নিয়ে শিল্প, সাহিত্য ও সংগীতের বিকাশ ঘটেছিল
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিগত শতকে, চলতি শতকে এসে সেই ঐতিহ্য প্রায় বিলীন;
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাম ঘিরে নেটিজেনরা আজ টেঁটাযুদ্ধের মতো বিবিধ তামাশার
গল্পই ফেরি করেন। একজন গোলাম আযম হয়ে যান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিচয়, অথচ এই
মাটিতে জন্মেছিলেন ব্যারিস্টার এ রসুলের মতো ভারতবর্ষের মুসলিমদের মধ্যে
প্রথম উচ্চশিক্ষিত আইনজ্ঞ। তিতাসপাড়ের এই জনপদের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশের
দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে খাঁ পরিবারের, যেখানে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ছিলেন সেই
ভাবান্দোলনের কেন্দ্রীয় পুরুষ।
মলয়া সংগীতের যে বাণীকে আশ্রয় করে আলাপ
শুরু করেছি—সেখানেও খাঁ পরিবারের সংযুক্তি ষোল আনা। লোকায়ত সংগীতে এমন
নিখাদ ধ্রুপদী উদ্ভাস বড় সহজ ঘটনা নয়। আলাউদ্দিন খাঁর বড় ভাই সাধক আফতাব
উদ্দিন খাঁ সুরারোপ করেছেন মলয়া গানে, আর সেই কারণেই এইসব গান ধ্রুপদী
সংগীতের ওজস্বীতা ও লোকায়ত সংগীতের অনিন্দ্য মাধুর্য ভক্তদের যেমন আপ্লুক
করে, তেমনি সমঝদার শ্রোতার কাছে সমান গুরুত্ব পায়।
খাঁ পরিবারের
সাংগীতিক সাম্রাজ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভূগোল পেরিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, এবং
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিস্তৃত। বাংলাদেশ, ভারত তথা পাশ্চাত্যের নানান দেশে
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সাংগীতিক উত্তরাধিকার বহন করছেন অনেক গুণী শিল্পী।
সম্প্রতি লালবাগ কেল্লায় মহা সমারোহে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্মবার্ষিকী
উদযাপনের ঘটনা জাতিকে উদ্বেলিত করলেও, এরপরপরই সংবাদ শিরোনাম প্রকাশ করে
দেয় যে, ওই ঐতিহ্যও আজ ঝুঁকির মুখে-এক ভীষণ দুর্গতি সমাগত।
খবরে প্রকাশ
‘পঞ্চাশের দশকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পুরাতন জেলরোডে একটি বাড়ি কিনেছিলেন
সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ; তার ইচ্ছা ছিল এই বাড়িতে একটি সংগীত কলেজ
প্রতিষ্ঠা করবেন। ১৯৫৬ সালে সেখানে প্রতিষ্ঠা পায় ‘দি আলাউদ্দিন
সংগীতাঙ্গন’। প্রসঙ্গত একই বছরে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ওস্তাদ আলাউদ্দিন
খাঁর পুত্র ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর নামাঙ্কিত সংগীত বিদ্যায়তন ‘আলী আকবর কলেজ
অব মিউজিক’, পরবর্তীকালে ক্যালিফোর্নিয়া ও সুইজারল্যান্ডে এই কলেজের দুটি
শাখা সম্প্রসারিত হয়। বিশ্বজুড়ে যখন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সাংগীতিক ঐতিহ্য
রক্ষায় এমনই আন্তরিক আয়োজন তখন বাংলাদেশে এক করুণ বাস্তবতা দৃশ্যমান।
সরকারি সংগীত কলেজ বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় অবস্থিত
একমাত্র বিশেষায়িত সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত
বিভাগ ব্যতীত প্রাতিষ্ঠানিক সংগীত চর্চার উপযুক্ত পরিসর তৈরি হয়নি
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও। এ এক আশ্চর্য ঐক্য বিগত সকল সরকারের।
রাষ্ট্র চুড়ান্ত রকমের উদাসীন সংগীতের বিকাশে। এমনকি চব্বিশের
গণ-অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে নতুন বন্দোবস্তের বাংলাদেশ বিনির্মাণের
আকাক্সক্ষার বিপরীতে সামান্যতম দুরদর্শী উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি
শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে। উপরন্তু উগ্রবাদী নানা শক্তির উত্থান আর
বিবিধ আস্ফালনে নতুন করে শঙ্কার কালো মেঘ ধেয়ে আসছে সর্বত্র। সেই শঙ্কাকে
বাস্তব করে তুলতেই যেন বিশেষ গোষ্ঠী নতুন করে ‘দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন’-এর
জমি দখলে নতুনভাবে তৎপর।
ফলে প্রতিষ্ঠার ৬৯ বছর পেরিয়ে অস্তিত্ব সংকটে
আজ এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। ইতিপূর্বে ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি আলাউদ্দিন
সংগীতাঙ্গনে অতর্কিত হামলা করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে ২০২১ সালের মার্চেও
দ্বিতীয় দফায় অগ্নিসংযোগ করা হয় সেখানে। কিন্তু এরপরেও সরকারের বিশেষ কোন
কার্যকরী উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। সংগীত গুরুমুখী বিদ্যা। উপযুক্ত বিদ্যায়তনিক
পরিবেশ ব্যতিরেকে এর পরম্পরা রক্ষা করা কঠিন। আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন নিভু
নিভু অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে সেই পরম্পরা রক্ষার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে
মাত্র। সুরসাধকের স্মৃতিধন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার
দাবিও দীর্ঘদিনের। দুই দফা হামলায় বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র, বইপত্র
ইত্যাদির অপরিমেয় ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে ক্রমশ
বিস্মৃতির অতলে নিমজ্জিত হবে খাঁ পরিবারের স্মৃতি।
দেশভাগ এবং
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই জনপদের সংগীত মনীষা, শিল্পীদের অনেকেই ছড়িয়ে
ছিটিয়ে পড়েছেন নানা প্রান্তে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এইসব মহান
মনীষাদের চিন্তা ও কর্ম সংরক্ষণ, চর্চা ও প্রসারে দীর্ঘমেয়াদী কোন উদ্যোগ
গৃহীত হয়নি। প্রায়শই সংবাদ আসে কিংবদন্তী, খ্যাতিমান শিল্পীদের স্মৃতিচিহ্ন
নিঃশেষ করে দেওয়ার, যেন এটাই নিয়তি। ক্ষেত্রবিশেষে সংশ্লিষ্ট পরিবারের
সদস্যদের উদ্যোগে সংরক্ষণমূলক বিভিন্ন উদ্যোগের খবর আসে কিন্তু সেখানে
রাষ্ট্র কোথায়? জুলাই অভ্যুত্থানোত্তর সময়ে বিপুল বেদনা ও শঙ্কার সঙ্গে
আমরা লক্ষ্য করেছি ঐতিহ্যবাহী, সাংস্কৃতিক স্থাপনা, আয়োজনের ওপর উপুর্যপরি
নির্মম আঘাত এসেছে। এদিকে রাষ্ট্র নির্বিকার, নানান সময় উপলক্ষের খেয়ায়
হঠাৎ হঠাৎ দৃশ্যমান হয় বিবিধ আলোকোৎসব নিয়ে। জনপদের মানুষের সঙ্গে সংযোগ
নেই অথচ আশ্চর্য ড্রোন উড়ে বেড়ায় শহরের আকাশ জুড়ে নিত্য! যাপিত জীবনের
উত্তাপ ও সংযোগবিহীন এই আলোকোৎসব এই জনপদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও
ঐতিহ্যের সংরক্ষণে কী ভূমিকা রাখছে তা বুঝতে অক্ষম আমি।
শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি
চর্চার বিকাশবিরোধী আরও একটি রাষ্ট্রীয় নীতির প্রতি গণমানুষের প্রতিবাদ
জারি রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষকের পদ
সৃজন করেও কতিপয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর চাপে বাতিল করে সরকার তার নতজানু,
অদূরদর্শী অবস্থান জানান দিয়েছে। অথচ বাস্তব পরিস্থিতি হল সংগীত শিক্ষক
হিসেবে পর্যাপ্ত সংখ্যক আবেদনকারীই পাওয়া যাবে না যেহেতু মাত্র কয়েকটি
বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভের সুযোগ রয়েছে। অদূর
ভবিষ্যতেও সংগীত বিষয়ে শিক্ষাদানে উপযোগী জনবল তৈরির বাস্তবতা নেই অথচ
সরকার নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নির্বিকারভাবে বাতিল করে বসে আছে। একটি জাতির
মেধা ও মনন বিকাশে সংগীত তথা সুকুমারবৃত্তি চর্চার প্রয়োজন নত্নু করে বলবার
নেই। উন্নত বিশ্বে এমনকি মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রগুলোতেও সংগীত ও সুকুমার
বৃত্তি চর্চায় সরকার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় আসীন। রাষ্ট্র এ ব্যাপারে
যত্নশীল হলে সামাজিক সামর্থ্যটুকুও বিকশিত হয় স্বতস্ফূর্তভাবেই অথচ আমরা
ক্রমশ দুয়ার বন্ধ করে কোন অন্ধকারে পৌঁছানোর বাসনায় নিমজ্জিত তা আঁচ করা
দুরূহ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে জল হাওয়ায় সাধক আফতাব উদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ
আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, সাধক মনমোহন দত্ত, গিরীণ চক্রবর্তী,
কবি আল মাহমুদ এমনই কত মণীষা বেড়ে উঠেছেন, জগৎ আলো করেছেন অথচ তাঁদের
কীর্তি, স্মৃতি সংরক্ষণে, চর্চা ও প্রসারে কোন রাষ্ট্রীয় বা সামজিক উদ্যোগ
নেই এ বড় বেদনার ও হতাশার। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আজ
মারামারি আর বিবিধ তামাশার রূপক করে তোলার আত্মবিধংসী চর্চাও এক অশনিসংকেত।
ওস্তাদ
আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিধন্য এই সংগীতাঙ্গন কে যথাবিহিত সুরক্ষা দেওয়া
রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাজধানীতে ঝলমলে আসর সাজিয়ে জন্মদিন উদযাপন আর তার
সমান্তরালে অদূরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনকে অরক্ষিত,
অকার্যকর করে রাখার এই দ্বিচারিতার অবসান জরুরি। শুধুমাত্র আলাউদ্দিন
সংগীতাঙ্গন নয়, সাধক আনন্দস্বামীর স্মৃতিচিহ্নেও স্বার্থান্বেষী মহলের
বিবিধ তৎপরতা আজ আমাদের উদ্বেগের কারণ। সংগীতাঙ্গনের জমি দখলের প্রয়াসের
খবর জেনেও স্থানীয় কিছু সংগঠনের প্রতিবাদ ব্যতিরেকে জাতীয় পর্যায়ে তথাকথিত
সুশীল মহলের বিশেষ কোন প্রতিক্রিয়াও দৃশ্যমান নয়। রাজনৈতিক দুর্ব্ত্তৃায়ন,
স্বার্থান্বেষী মহলের আগ্রাসন আর ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের হাত দেশের শিল্প
সাহিত্য সংস্কৃতির সুরক্ষা এবং যথাযথ বিকাশের পরিসর রচনায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন
জরুরি।
শুধুমাত্র কমপ্লেক্স গঠন করে গতানুগতিক পন্থায় এটি পরিচালনা করে
আদতে কার্যকরী কোন প্রভাব তৈরি করবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। বরং
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নামে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে তাঁর
প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হবে বলে মনে করি। দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা
বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সংগীত পারফর্মিং আর্টস বিষয়ে স্বকীয় কোন পরিচয় নির্মাণ
বা প্রভাব তৈরি করতে পারেনি যা লজ্জার। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় এ ভয়াবহ
শূন্যতা রোধে জরুরি ভূমিকা রাখতে পারে। খাঁ পরিবারের সুযোগ্য
উত্তরাধিকারীরা ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষা কার্যক্রমের সুবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার
তথা খাঁ পরিবারের হাত ধরে ধ্রুপদী সংগীত চর্চার যে অনন্য বিকাশ সাধিত হয়েছে
তাঁর টেকসই পরম্পরা নিশ্চিত করা সম্ভবপর হবে বলে প্রতীয়মান হয়। রাজধানী
ঢাকাকে বিবিধ আয়োজনে জনাকীর্ণ না করে স্থানিক ঐতিহ্য ও জ্ঞান চর্চার
পরম্পরাকে মুখ্য করে তোলাটাও জরুরি এখন।
আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনের জমি
নিয়ে মামলায় তাঁর মেয়ে সরোজা বেগমের নাতি হাবিব খাঁ বাদী হয়েছেন বলে
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবরে জানা যায়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের
সঙ্গে আলাউদ্দিন খাঁর ভাতিজা সুরকার ও সংগীতজ্ঞ শেখ সাদী খানও বলছেন,
আলাউদ্দিন খাঁ কোনো জমি ‘দান করেননি’। আলাউদ্দিন খাঁর মেয়ের নাতি আর ভাতিজা
কেন হঠাৎ করে সংগীতাঙ্গনের জায়গার মালিকানা পাওয়ার জন্য তৎপর হয়ে পড়েছেন,
এটা ভেবে দেখা দরকার। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত অন্য এক প্রতিবেদনে
জানতে পাই, তাদের প্রকাশিত খবরটি পড়ার পর যোগাযোগ করেছেন আলাউদ্দিন খাঁর
প্রপৌত্র সিরাজ আলী খান। তিনি বলেছেন, যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলাউদ্দিন
সংগীতাঙ্গনের জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করেছেন, তাদের সঙ্গে ওস্তাদ
আলাউদ্দিন খাঁর ভারতে বসবাস করা বংশধরদের কোনো আলোচনা বা যোগাযোগ হয়নি।
আলাউদ্দিন খাঁর পুত্র বিশ্বখ্যাত সংগীতজ্ঞ আলী আকবর খান; তাঁর সন্তান
ধ্যানেশ খানের ছেলে সিরাজ আলী খান। তিনি মাইহার ঘরানার সংগীতের একজন
খ্যাতিমান শিল্পী। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সরোজা
বেগমই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাকতেন। অন্য দুই মেয়ে এবং ছেলের বংশধররা ভারতের
মাইহার, কলকাতা ও যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তিন প্রজন্মে অন্তত
৮০ জনের মত বংশধর দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছেন।
খাঁ পরিবারের এই সংগীতজ্ঞরা
একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বড় অবদান রাখতে পারেন নিশ্চয়ই।
আলাউদ্দিন খাঁ আজ আর খাঁ পরিবারের পারিবারিক কর্তৃত্বের বা মালিকানার বিষয়
নয় বরং রাষ্ট্রের। উপলক্ষের উদযাপনের পাশাপাশি কিংবদন্তী শিল্পীদের স্মৃতি
সংরক্ষণে মিউজিয়াম স্থাপন এবং সাংগীতিক পরম্পরা রক্ষায় বিশেষায়িত
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি এখনই বাস্তবায়ন করা উচিত। দেশের শিল্প
সংস্কৃতি অঙ্গনে যে আশঙ্কার কালো মেঘ ঘনিয়ে আসছে তাঁর বিরুদ্ধ অবস্থানে
সংবেদনশীল, মুক্তিকামী , বিবেচক নাগরিকের যুথবদ্ধ অবস্থানই কাম্য এখন।
শুরুটা হোক ব্রাহ্মণবারিয়া থেকেই। ধানের দেশ গানের দেশ, বাউলের দেশ প্রকৃতই
তাঁর নামের রূপক হয়ে উঠুক।
লেখক: সংগীত শিল্পী ও থিয়েটারকর্মী।
