নতুন বলে এসব সবজির দাম
বাড়তি বলছে বিক্রেতারা। তবে দুই মাসের বেশি সময় ধরেই উচ্চ মূল্যে বিক্রি
সব ধরনের সবজি। ছবি: আসাদ আবেদীন জয়নতুন বলে এসব সবজির দাম বাড়তি বলছে
বিক্রেতারা। তবে দুই মাসের বেশি সময় ধরেই উচ্চ মূল্যে বিক্রি সব ধরনের
সবজি। ছবি: আসাদ আবেদীন জয়
বেশ কিছু দিন আগে থেকেই বাজারে সীমিতভাবে
আসতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। তবে বাজারে
শীতকালীন সবজির আমদানি বাড়তে থাকলেও দাম এখনও কমেনি; উচ্চমূল্যেই বিক্রি
হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, শীতকালীন সবজি বাজারে নতুন হওয়ায় দাম বাড়তি। আর
যেসব সবজি শীতের না সেগুলোর সিজন শেষ, তাই সেগুলোরও দাম বেশি।
তবে দুই
মাস ধরেই বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। ফলে স্বস্তি মিলছে
না সাধারণ মানুষের। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর
কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।
শীতকালীন সবজি নতুন এসেছে
বলে এসবের দাম বেশি, আবার যেসব সবজি শীতের না সেগুলোর সিজন শেষ বলে দাম
বেশি। এমনই এক পরিস্থিতি চলছে বাজারে। যেখানে সাধারণ মানুষের স্বস্তির
জায়গাটা দিন দিন সীমিত হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা উচ্চমূল্যের বাজারে
হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। তবে যেন এদিকে নজর নেই সরকার বা সংশ্লিষ্ট
কারোরই।
আজ বাজারে প্রতিকেজি ভারতীয় টমেটো ১৪০ টাকা, দেশি টমেটো ১৪০-১৬০
টাকা, কাঁচা টমেটো ৮০ টাকা, দেশি গাজর ১০০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০ টাকা,
লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১২০ টাকা,
শিম ১২০-১৪০ টাকা, শালগম ১০০ টাকা, নতুন আলু ১৬০ টাকা, পেঁয়াজ পাতা ১২০
টাকা, দেশি শসা ১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১৬০
টাকা, ঢ্যাঁড়স ১২০ টাকা, পটোল (হাইব্রিড) ৬০ টাকা, দেশি পটোল ১২০ টাকা,
চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০-১২০ টাকা,
কচুর লতি ৮০ টাকা, মুলা ৫০-৬০ টাকা, কচুরমুখী ৭০-৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ
১০০-১২০ টাকা, ধনেপাতা (মানভেদে) ২০০-৩৬০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) ৬০-৮০ টাকা,
পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
আর মানভেদে
প্রতিটি লাউ ৮০-১২০ টাকা, চাল কুমড়া ৭০-৮০ টাকা, ফুলকপি ৫০-৬০ টাকা,
বাঁধাকপি ৫০-৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা।
এছাড়া, প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা করে।
আজ বাজারে
কাঁচামরিচ, ধনেপাতা ও লেবু বাদ দিলে মূল সবজির মধ্যে ২০টির দাম ১০০ টাকা বা
তারও ওপরে। ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে রয়েছে ১১ ধরনের সবজির দাম। আর ৫০
টাকা বা তার নিচে রয়েছে ৩টি সবজির দাম।
সবজির এই বেশি দাম থাকা নিয়ে
বিক্রেতা মো. শাহ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শীতের সবজি নতুন আসছে বলে
এগুলোর দাম এখন বেশি। যখন আরও বেশি বেশি আসা শুরু করবে তখন আবার দাম কমে
যাবে। আর যেগুলোর সিজন শেষ সেই সবজিগুলোর দাম এখন বাড়তি থাকাই স্বাভাবিক।
পুরা শীত এলে সবজির দাম অনেক কমে যাবে আশা করি।’
এদিকে বাজার করতে আসা
ক্রেতা আফজাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সবজির দাম তো কমছেই না। এভাবে
হলে কীভাবে চলবে? আমার একটা ছাত্র হোস্টেল আছে, সেখানে খাবারের ব্যবস্থা
আছে। আমি তো এই বাড়তি খরচ পোষাতে পারছি না। এমন না যে আমি মাসে মাসে ভাড়া
বাড়াচ্ছি। আমার তো মাস শেষে একই টাকা আসে, কিন্তু আমার খরচ বেড়ে গিয়েছে।
তার মানে আমার প্রতি মাসেই অনেক টাকা করে লস হচ্ছে।’
আরেক ক্রেতা বলেন,
‘নতুন সবজি পুরান সবজি এসব বলেই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব। আমাদের আসলে
এখানে করণীয় কী। আমাদের চাপ দিন দিন বেড়েই চলছে।’
পেঁয়াজের বাজারেও স্বস্তি ফেরেনি। ছবি: আসাদ আবেদীন জয়পেঁয়াজের বাজারেও স্বস্তি ফেরেনি। ছবি: আসাদ আবেদীন জয়
হুট
করেই বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের বাজারেও স্বস্তি ফেরেনি। আজকেও সব ধরনের
পেঁয়াজের দাম রয়েছে ১০০ টাকার ওপরে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে
অপরিবর্তিত।
আজ আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০
টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ১১০ টাকা ও বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০
টাকা করে। দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, লাল আলু ২৫ টাকা, সাদা আলু ২৫ টাকা,
বগুড়ার আলু ৩০-৩৫ টাকা, দেশি রসুন ৮০-১১০ টাকা, চায়না রসুন ১৬০-১৮০ টাকা,
চায়না আদা ১৮০-২০০ টাকা, ভারতীয় আদা মান ভেদে ১৬০-১৮০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক
পেঁয়াজের বিক্রেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেশি দামের আশায় অনেকে পেঁয়াজ
মজুত করে রেখেছে। তাই বাজারে ঘাটতি আছে। আর এই ঘাটতি থাকার কারণেই দাম হুট
করে বেড়ে গিয়েছে। না হলে এভাবে হুট করে বেড়ে যেতো না। সিজন শেষের দিকে একটু
দাম বাড়ে তা ঠিক আছে। কিন্তু এভাবে বাড়ে না।’
কিছুটা নমনীয় মুরগির মাংসের বাজার
সবজি
বা পেঁয়াজের বাজার চড়া থাকলেও কিছুটা সহনীয় হয়েছে মুরগির মাংসের বাজার।
তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম বরাবরের মতোই চড়া অবস্থানে রয়েছে। আজ বাজারে
গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০
টাকা কেজি দরে। ব্রয়লার মুরগি ১৬২-১৮০ টাকা, কক মুরগি ২৫০-২৮০ টাকা, লেয়ার
মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি
ডজন মুরগির লাল ডিম ১১৫-১২০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১০-১১৫ টাকা, হাঁসের ডিম
২০০-২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আজ প্রতিকেজিতে
ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ৮ টাকা, কক মুরগির দাম কমেছে ১০-১৩ টাকা, লেয়ার
মুরগির দাম কমেছে ৩ টাকা। এছাড়া সব ধরনের মুরগির ডিমের দাম রয়েছে
অপরিবর্তিত। তবে হাঁসের ডিমের দাম বেড়েছে ডজনপ্রতি ২০ টাকা করে।
এছাড়া
আজকের বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ ৯০০-২৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০-৬০০
টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১৪০০
টাকা, কাচকি মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০-১০০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০-৬০০
টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৯০০-১২০০
টাকা, মেনি মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ
১১০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্য সময়ের মতো আজও কোনও
পরিবর্তন আসেনি মুদি দোকানের পণ্যের দামে। সব পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
আজ প্রতিকেজি প্যাকেট পোলাও চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ৯০-১৩০
টাকা, ছোট মসুর ডাল ১৫৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ৯০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা,
ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০
টাকা, মাষকলাই ডাল ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত
সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৭২ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৪৫০-১৫৫০
টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১১০ টাকা, খোলা চিনি ৯৫ টাকা,
দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৩০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা
সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এলাচ ৪৭৫০ টাকা,
দারুচিনি ৫০০ টাকা, লবঙ্গ ১২৮০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১৩৫০ টাকা ও কালো গোল
মরিচ ১১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
