বঙ্গোপসাগরে
মাছ ধরার সময় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দুটি ট্রলারসহ আরও ১৩ জেলেকে ধরে
নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা।
বুধবার
বিকালে উপজেলার সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণে সাগর থেকে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া
হয় বলে জানান টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী বোট মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ
আহমেদ।
এদিকে ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ছবি প্রকাশ করেছে মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল আরাকান নেটওয়ার্ক’।
সাজেদ
আহমেদ বলেন, দুই দিন আগে দুটি ট্রলার সাগরে মাছ শিকারে যায়। এ সময় সেন্ট
মার্টিনের দক্ষিণে ধাওয়া দিয়ে ট্রলারসহ ১৩ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান
আর্মি। এ ঘটনার পর ট্রলার মালিক ও জেলেরা আতঙ্কে রয়েছেন।
মিয়ানমারভিত্তিক
সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল আরাকান নেটওয়ার্ক’ জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর থেকে আরাকান
আর্মির উপকূলীয় নিরাপত্তা শাখার সদস্যরা সমুদ্রপথে টহল জোরদার করেছেন।
টহলের সময় আরাকান রাজ্যের জলসীমা অতিক্রম করে মাছ ধরতে আসা কয়েকটি
বাংলাদেশি ট্রলার শনাক্ত করা হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৮ জুলাই
পর্যন্ত অন্তত ১৮৮ বাংলাদেশি জেলে ও ৩০টি নৌকা আটক করা হয়; পরবর্তীতে তাদের
মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু এখন আইন অমান্য করার কারণে আবার এসব ট্রলার ধরা
হচ্ছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল আরাকান নেটওয়ার্ক।
ট্রলার মালিক মো. সৈয়দ
আলম বলেন, “আরাকান আর্মির কারণে নাফ নদী ও সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া অসম্ভব
হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ট্রলারসহ জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে তারা। আজকে সাগরে
মাছ শিকারে সময় একটি ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।
“এরপর আরাকান আর্মি
বিকলটিসহ দুটি ট্রলারে থাকা ১৩ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে জেলে
ও ট্রলার মালিকদের মাঝে দুর্দিন নেমে আসবে। এসব ঘটনা বন্ধে সরকারে সহায়তা
কামনা করছি।”
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান
উদ্দিন বলেন, “ট্রলারসহ কিছু জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ট্রলার
মালিকদের কাছ থেকে শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের
বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে।”
নাফ নদী থেকে জেলেদের ধরে
নিয়ে যাওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ৬ নভেম্বর নাফ নদীর বদরমোকাম
এলাকা থেকে বাংলাদেশি ছয় জেলেসহ একটি ট্রলার অপহরণ করে নিয়ে যায় আরাকান
আর্মি।
ট্রলার মালিক ও বিজিবির দেওয়া তথ্য মতে, গত ১১ মাসে (গত বছর
ডিসেম্বর থেকে) আরাকান আর্মি নাফ নদী ও সাগর থেকে ৩২৮ জেলেকে অপহরণ করেছে।
এর মধ্যে বিজিবির চেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জেলেসহ ২৭টি ট্রলার ফেরত আনা সম্ভব
হলেও এখনো ২০টি ট্রলার ও ১৫২ জেলে রাখাইন রাজ্যের কারাগারে বন্দি আছেন।
