টাইফুন
কালমেগির আঘাত ও প্রবল বৃষ্টিপাত-বন্যায় ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে অন্তত ৪০ জন
নিহত হয়েছেন। এই টাইফুনের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে কয়েক লাখ মানুষকে সরিয়ে
নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরের দিকে দেশটির মধ্যাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায়
টাইফুন কালমেগি আঘাত হানতে শুরু করে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ফরাসি
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কালমেগির প্রভাবে দেশটির
মধ্যাঞ্চলীয় সেবু দ্বীপের সব শহর প্লাবিত হয়েছে। কর্দমাক্ত বন্যার পানির
তোড়ে ভেসে যাচ্ছে গাড়ি, ট্রাক এমনকি বিশাল আকারের কনটেইনারও।
সেবুর
বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপ-প্রশাসক রাফায়েলিতো আলেজান্দ্রো টেলিফোনে
দেওয়া সাক্ষাৎকারে এএফপিকে বলেছেন, কেবল সেবুতেই এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের
প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, টাইফুনের প্রভাবে
প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ জনে।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে আসা
তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ মানুষই পানিতে ডুবে মারা গেছেন। কালমেগির আঘাত
হানার আগের ২৪ ঘণ্টায় প্রাদেশিক রাজধানী সেবু সিটির আশপাশের এলাকায় ১৮৩
মিলিমিটার (সাত ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা মাসিক গড় ১৩১
মিলিমিটারের চেয়েও অনেক বেশি বলে দেশটির সরকারি আবহাওয়া অফিসের বিশেষজ্ঞ
চারম্যান ভারিলা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে
দেওয়া এক পোস্টে প্রাদেশিক গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো বলেছেন, সেবুর
পরিস্থিতি সত্যিই নজিরবিহীন। আমরা ভেবেছিলাম প্রবল বাতাসই বিপদ ডেকে আনবে।
কিন্তু... প্রকৃত ঝুঁকির কারণ হচ্ছে পানি। বন্যার পানিতে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি
হয়েছে।
স্থানীয় দুর্যোগ কর্মকর্তা এথেল মিনোজা বলেছেন, সেবু সিটিতে দুই
শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং উদ্ধারকর্মীরা এখনও পানিবন্দি মানুষদের
কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
এছাড়া লেইতে প্রদেশে নিজ বাড়িতে পানিতে
ডুবে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। আর বোহলে এলাকায় গাছচাপা পড়ে এক ব্যক্তি নিহত
হয়েছেন। সেবু সিটির ২৮ বছর বয়সী বাসিন্দা ডন ডেল রোসারিও বলেন, ঝড়ের সময়
তিনি অন্যদের সঙ্গে একটি ভবনের ওপরের তলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।
‘‘পানি খুব
দ্রুত উঠছিল। ভোর ৪টার মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়; মানুষ
ঘর থেকে বের হতে পারছিল না। আমি এখানে ২৮ বছর ধরে আছি। এর চেয়ে ভয়াবহ কিছু
কখনও দেখিনি।’’
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, মানব সৃষ্ট জলবায়ু
পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়েই ঘূর্ণিঝড় ও টাইফুন ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে
উঠছে। উষ্ণ মহাসাগর টাইফুনকে দ্রুত তীব্র করে তুলছে। আর উষ্ণ বায়ুমণ্ডলের
কারণে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারী বৃষ্টিপাতও ঘনঘন দেখা দিচ্ছে।
সেবুর
তথ্য কর্মকর্তা রন রামোস বলেন, গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার
শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যারা তাঁবুতে বাস করছিলেন, তাদের
নিরাপত্তার স্বার্থে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা আলেজান্দ্রো বলেন, ঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ থেকে প্রায় ৪ লাখ মানুষকে আগাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার
বিকেলের দিকে ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তা করার সময় একটি উড়োজাহাজ উত্তর
মিন্দানাও দ্বীপে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ফিলিপাইনের সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে।
দেশটির
সামরিক বাহিনীর পূর্ব মিন্দানাও কমান্ড এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রবল ঝড়ের
মাঝে ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করতে গিয়ে উপকূলীয় শহর বুতুয়ানের পথে থাকা
সুপার হিউই উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান
চলছে।
সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের কেউ জীবিত আছেন কি না, তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
টাইফুন
কালমেগি বর্তমানে ফিলিপাইনের পশ্চিমাঞ্চলের ভিসায়ান দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম
করছে। ওই এলাকায় ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস বইছে এবং দমকা হাওয়ার
গতি ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে বলে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
এতে অনেক এলাকায় গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ছে।
ফিলিপাইনে
প্রতিবছর গড়ে অন্তত ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে; যা প্রায়ই এমন অঞ্চলে
তাণ্ডব চালায় যেখানে লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মাঝে বসবাস করে।
দেশটির
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ভারিলা বলেন, টাইফুন কালমেগির মধ্য দিয়ে দেশটি ইতোমধ্যে
সেই বার্ষিক গড় সংখ্যায় পৌঁছে গেছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে আরও তিন থেকে
পাঁচটি ঝড় আসার আশঙ্কা রয়েছে।
ফিলিপাইন গত সেপ্টেম্বরে দুটি শক্তিশালী
ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছিল, যার একটি ছিল সুপার টাইফুন রাগাসা। ওই সময় ফিলিপাইনে
তাণ্ডব চালিয়ে প্রতিবেশী তাইওয়ানেও আঘাতে রাগাসা। এতে তাইওয়ানে অন্তত ১৪ জন
নিহত হন। সূত্র: এএফপি।
