রোববার ১৬ নভেম্বর ২০২৫
২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
কুমিল্লার তানহার আত্মহত্যা প্রেমিক সায়মনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিবার ও বন্ধুদের
প্রকাশ: বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:২৪ এএম |


‘বাবা, আমার মন ভালো নেই; তুমি ঢাকায় আসো।’ মৃত্যুর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানহা বিনতে বাশারের সঙ্গে শেষ কথা হয় তার বাবা ব্যবসায়ী আবুল বাশারের। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) এই কথা বলার পর আবুল বাশার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘উচ্চ শিক্ষার জন্য মেয়েকে ঢাকায় পাঠিয়েছি।
কিন্তু এখন বাবার কাঁধে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বোঝা, মেয়ের লাশ বহন করতে হচ্ছে।’ তার অভিযোগ, ‘সায়মন নামে এক ছেলে মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী।’
পুলিশ বলছে, গতকাল সোমবার বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বাসা থেকে তানহা বিনতে বাশার (২০) নামে ওই শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচংয়ের কুসুমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় সেখানে তার দাফন হয়।
জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক বলেন, বাবা আবুল বাশার প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। মৃতদেহটি ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
প্রতিবেদন পাওয়ার পর বাকি আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। কেন তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তা তদন্ত করা হচ্ছে। 
তানহা বিনতে বাশার রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর বিবিএ চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী তাসমিম আলম নাগর বলেন, ‘ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ে তানহার সহপাঠী সায়মন নামের ছেলের সঙ্গে দীর্ঘ ছয় বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তানহা যখন কুমিল্লায় কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ছিল, তখন তাদের সম্পর্ক শুরু হয়।
পরে ওই ছেলে ঢাকায় ইউল্যাবে ভর্তি হয় এবং তানহাকে ঢাকায় আসার জন্য চাপ দিতে থাকে। তানহার বাবা প্রথমে তাকে কুমিল্লার কলেজে ভর্তি করাতে চাইলেও তানহা ঢাকায় ভর্তি হওয়ার জন্য জোর দেন। পরে তার বাবা তাকে এআইইউবিতে ভর্তি করান, কিন্তু তানহা পরে ইউল্যাবে স্থানান্তরিত হয়।
তাসমিম আলম নাগর আরো জানান, সায়মন প্রায়ই তানহার সঙ্গে সময় কাটাত এবং নিয়মিত তার কাছ থেকে টাকা নিত। এরই মধ্যে সায়মন অন্য মেয়ের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি চলছিল। দুই মাস আগে সায়মনের বাবা মারা যান এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে সায়মনের জন্য বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে তানহা সায়মনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় কিন্তু সায়মন তা অস্বীকার করলে তাদের সম্পর্ক আরো খারাপ হয়ে ওঠে। সম্পর্কের এই টানাপড়েনে তানহা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা করেন।
এর আগে নিজ ফেসবুক লাইভে এসে তাসমিম আলম জানিয়েছেন, তানহার মৃত্যুর দায় সায়মন এড়াতে পারবে না। তিনি তাদের সম্পর্কের নানা টানাপড়েন, ঘনিষ্ঠতা এবং তানহাকে অবহেলার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তানহার মৃত্যুর খবর সায়মনকে জানানো হলে সে তাচ্ছিল্য দেখায় এবং এরপর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাসমিম দাবি করেন, সায়মনকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
মোহাম্মদপুর থানার এসআই মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সায়মনকে খুঁজছে পুলিশ এবং ঘটনার তদন্ত চলছে। তানহার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ফরেনসিক রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর বিস্তারিত জানা যাবে।
তানহার বাবা আবুল বাশার বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে সায়মন নামের যুবক তানহাকে মানসিকভাবে কষ্ট দিচ্ছিল। সম্ভবত তার জন্যই তানহা আত্মহত্যা করেছে। মেয়ের পড়াশোনার সুবাদে সে ঢাকার একটি মেসে অন্য বান্ধবীদের সঙ্গে থাকত। আমরা কুমিল্লায় থাকি। সোমবার দুপুর ১২টায় মেয়ের ফোনে জানা যায়, সে শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং মন ভালো নেই। সে আমাকে ঢাকায় আসতে বলে। আমি দুপুরে বাসে চড়ে ঢাকায় যাই। বিকেল ৩টার দিকে মেয়ের ফোন আসে, সে জানিয়েছে বাইরে দুপুরের খাবার খেতে যাবে। সাড়ে ৩টায় ফোনে সে কান্নাকাটি করছিল এবং বলছিল, ‘বাবা, আমার ভুল হলে ক্ষমা করে দিও।’ এরপর থেকে আর তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বিকেলে মেয়ের বাসায় পৌঁছে দেখি মেয়ের গলায় ফাঁস।’
পারিবারিক সূত্র জানায়, বিকেল ৫টার দিকে তানহার বাবা এসে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সায়মনের বন্ধু জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, ‘আমরা একই রুমে থাকতাম। তানহার মৃত্যুর খবর তাকে দেওয়ার পর সে তাচ্ছিল্য দেখিয়েছে। এরপর বহুবার ফোন করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।’
তানহার অন্য সহপাঠীরা জানিয়েছেন, সায়মনই তানহার আত্মহত্যার মূল কারণ। তানহা শেষবার বলেছিল, সে মারা গেলে যেন সায়মনকে ছেড়ে দেওয়া না হয় এবং তার অবশ্যই কঠোর বিচার হবে। তারা জানান, ‘এই মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া যাচ্ছে না, আমরা সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’













http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
জনগণের প্রতিটি ভোটের আমানত রক্ষা করব : আবুল কালাম
ড. মোশাররফের নেতৃত্বে ধানের শীষের গণমিছিল আজ
বিরোধ মিটিয়ে ঐক্য গড়তে জেলা বিএনপির বৈঠক
তারেক রহমানের ৩১ দফাই রাষ্ট্র গঠনে সার্বজনিন দিক নির্দেশনা
আগামী নির্বাচন হবে চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদেরবিরুদ্ধে
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
দুই প্রার্থীকে তারেক রহমানের ফোন
বিরোধ মিটিয়ে ঐক্য গড়তে জেলা বিএনপির বৈঠক
কুমিল্লা সীমান্তে বাড়ছে অস্ত্রের চোরাচালান
আগামী নির্বাচন ও বাংলাদেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে
জনগণের প্রতিটি ভোটের আমানত রক্ষা করব : আবুল কালাম
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২