কুমিল্লা
জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নের দুতিয়া দিঘির পাড় গাউছিয়া
সুন্নিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় পড়ুয়া ১০ বছর বয়সী ছাত্র সামিউলের
(নাজের আনা বিভাগের ছাত্র) রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের
ছায়া ও ক্ষোভের ঝড়। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৯ অক্টোবর (বুধবার) দুপুরে।
পরিবার
ও এলাকাবাসীর অভিযোগ-এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, বরং হত্যা হতে পারে।
প্রশাসন জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত ও সিআইডির ফরেনসিক রিপোর্ট আসলে মৃত্যুর
প্রকৃত কারণ জানা যাবে, মৃত সামিউলের বাবা আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমার ছেলে
তিন বছর ধরে এই মাদ্রাসায় আবাসিক অবস্থায় পড়াশোনা করছিল। আমি প্রবাসে থাকি,
মাঝে মাঝে ওর দাদি ও আমি খোঁজ নিতে যেতাম। ২৫ অক্টোবর মাদ্রাসায় মাহফিল
ছিল, আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম- ওটাই ছিল আমার ছেলের সঙ্গে শেষ দেখা।”
তিনি
আরও বলেন ২৯ অক্টোবর মাদ্রাসায় ছেলেকে নিতে গেলে শিক্ষক ফয়সাল হুজুর বলেন,
সামিউল গতকাল বাড়িতে গেছে। আমি অবাক হয়ে বলি-ও তো আসেনি! পরে সিসি
ক্যামেরা দেখাতে বললে ২৭ তারিখ বিকেলের ভিডিও দেখায়, কিন্তু রাতের বা ২৮-২৯
তারিখের কোনো ভিডিও দেখাতে পারেনি।
তার দাবি, “আমার ছেলেকে মেরে ফেলা
হয়েছে। ওর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লালচে দাগ, দুই হাতের চামড়া উঠানো, মুখ
থেকে জিভ বের হয়ে আছে-এটা কীভাবে স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে?
ঘটনার পর
স্থানীয়রা মাদ্রাসার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাদ্রাসায় কাউকে প্রবেশ
করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরে পুলিশ সামিউলের মরদেহ উদ্ধার করে কুমিল্লা কুচাইতলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় ময়নাতদন্তের জন্য।
কোতোয়ালি
মডেল থানার ইনচার্জ মাহিনুল ইসলাম জানান, “ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক
ব্যবস্থা নিয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং ঘটনাস্থল থেকে
প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ
জানা যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “ঘটনার সঙ্গে কারও সম্পৃক্ততা থাকলে আইনগত
ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ পার পাবে না, ১০ বছরের শিশুর এমন মৃত্যুতে শোকাহত
পুরো আমড়াতলী ইউনিয়ন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “এভাবে একটি নিরীহ শিশুর
মৃত্যু মানা যায় না। প্রশাসন যেন সঠিক তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেয়।”
এছাড়া মানবাধিকার কর্মী ও সচেতন মহলও ঘটনাটির স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছেন, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো শিশু এমন পরিণতি না হয়।
